সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক আইনি লড়াই পরিচালনা

আইনি লড়াই পরিচালনা

বিভিন্নমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি সুজন-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে আইনি লড়াইও পরিচালনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, জনস্বার্থে একটি মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট কর্তৃক ২০০৫ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে মনোনয়নের সঙ্গে দাখিলের রায় প্রদান করা হলে বিভিন্ন নির্বাচনে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। পরবর্তীতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক এই রায়কে ভণ্ডুল করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে আবু সাফা নামক জনৈক ব্যক্তিকে (যাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি) দিয়ে আপিল করানো হলেও ‘সুজন’-এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও আইনি পদক্ষেপে সুপ্রিম কোর্টে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮-এর ধারা ৯ (খ)-এ বলা হয়েছে, প্রতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অব্যবহিত আগের বছরের সংশ্লিষ্ট দলের আর্থিক লেনদেন একটি রেজিস্টার্ড অ্যাকাউটান্সি ফার্ম দিয়ে অডিট করিয়ে সে রিপোর্টের কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নিবন্ধিত কোনো দল পর পর তিন বছর কমিশনে তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হলে তবে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করারও বিধান রয়েছে। উক্ত বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচন কমিশনে অডিটকৃত আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করা হলেও নির্বাচন কমিশন তা প্রকাশ করে না বা কোনো নাগরিককে দেখার সুযোগ দেয় না।

২০১৩ সালের জুন মাসে সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তথ্য অধিকার আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসেবের তথ্য জানতে চান। নির্বাচন কমিশন জানায়, নির্বাচন কমিশন প্রথমে এ তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। আপিল করলেও একই ফলাফল আসে। তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের অনুমতি ছাড়া এ হিসাব দেয়া যাবে না। এরপর তথ্য কমিশনে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা শুনানি হলেও ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, রাজনৈতিক দলের বিষয়ে তথ্য চাইলে নাগরিকদের তথ্য দিতে নির্বাচন কমিশন বাধ্য থাকবেন। মাননীয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও মাননীয় বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দ-এর একটি দ্বৈত বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুগান্তকারী এই রায় প্রদান করেন। এই আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারদের নাম কারা সুপারিশ করেছে তাদের নামের তালিকা চেয়ে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় একটি আবেদন করা হয়েছে।