ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের অংশগ্রহণ নিয়ে বর্তমানে অনেক আলাপ-আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের আপিলসাপেক্ষে, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি উঠেছে। এ দাবির পেছনে যুক্তি হল, যে কোন এমনকি নিকৃষ্টতম অপরাধীরও দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার থাকে; তাই আপিলে দণ্ড অনুমোদিত হওয়ার পরই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। অনেকে এ দাবির বিরোধিতা করছেন এবং অনেক যুক্তিও তুলে ধরছেন।
সংসদ নির্বাচনে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জাতির জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে আমরা মনে করি। কারণ এর মাধ্যমে বহুলাংশে নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতে কারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন এবং আমাদের রাজনীতি সত্যিকারার্থে কলুষমুক্ত হবে কিনা। লুটপাটতন্ত্রের অবসান ঘটবে কিনা। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেবে কিনা। দেশে সুশাসন কায়েম হবে কিনা। সর্বোপরি, রাষ্ট্র একটি উগ্রবাদী, অকার্যকর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হবে কিনা।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারিত করা আছে। এই অনুচ্ছেদের (২)(ঘ)-এর বিধান অনুযায়ী, ‘কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’ এ বিধানটি সুস্পষ্টভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দণ্ডভোগের পর পাঁচ বছর পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কখন থেকে অযোগ্য হবেন- আদালত কর্তৃক প্রথম দণ্ড প্রদানের দিন থেকে, না আপিল নিষপত্তির পর থেকে?
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং এর পরবর্তী সংশোধনগুলোতেও এ ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। উল্লেখ্য, ভারতীয় গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-এর বিধান অনুযায়ী, শুধু সিটিং বা কর্মরত সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেই কেবল আপিল নিষপত্তির পর অযোগ্যতার বিধানটি প্রযোজ্য। অর্থাৎ প্রতিবেশী ভারতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আদালত কর্তৃক প্রথম দণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য। ভারতীয় আদালতও অনেকগুলো রায়ে আইনের এই বিধানের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধিত) আদেশ, ১৯৭২ দণ্ডপ্রাপ্তদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে অস্পষ্টতা থাকলেও, জরুরি ক্ষমতা বিধিমালা, ২০০৭-এর অধীনে দণ্ডপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। বিধিমালার ১১(৫) ধারা অনুযায়ী, ‘এই বিধিমালার অধীন দায়েরকৃত কোন মামলায় কোন ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হইলে এবং উক্ত দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হইলে, উক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদসহ যে কোন স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হইবেন।’ লক্ষণীয়, উপরিউক্ত বিধানে ভাষাগত একটি ত্রুটি রয়েছে। বিধানটি পড়ে মনে হয়, দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা আপিল দায়ের করবেন, তারাই শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন। এটি সম্ভবত মুদ্রণ বিভ্রাটের কারণে ঘটেছে। তবে আইনের মূল স্পিরিট বা চেতনা সুস্পষ্ট- জরুরি বিধিমালার অধীনে দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিল করা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন থেকে যায়- জরুরি বিধিমালা প্রত্যাহার করা হলে এর অধীনে দণ্ডিতরা কি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন? স্মরণ করা প্রয়োজন, জরুরি বিধিমালার আওতায় দণ্ডিতরা বিদ্যমান কোন না কোন আইনের বিধানের আলোকে দণ্ডিত হয়েছেন। ফলে জরুরি বিধিমালা প্রত্যাহার হলেও দণ্ড বহাল থেকে যাবে। তবে যেহেতু সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অস্পষ্ট, তাই কখন থেকে দণ্ডপ্রাপ্তরা সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ)-এর বিধানানুযায়ী সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন তা আদালতকেই নির্ধারণ করতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আদালতের রায়ও এ ব্যাপারে অস্পষ্ট এবং অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ। আমাদের জানা মতে, এ বিষয়টি সম্পর্কে আদালতের প্রথম রায় ঘোষিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আমলে সিরাজুল হক চৌধুরী বনাম নূর আহমেদ কোম্পানি ও ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী [১৮ ডিএলআর (১৯৬৭)] মামলায়। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জনাব নূর আহমেদ কোম্পানি ১৮ নভেম্বর, ১৯৬৪ ইলেক্টোরাল কলেজ আইন, ১৯৬৪-এর অধীনে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানার গোপাল ইউনিয়ন কাউন্সিলের দৌলতপুর পূর্ব এলাকা থেকে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ৩০ জুন ১৯৬৪ সালের পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা পার্ট ওও-এর অধীনে, তিনি নোয়াখালীর সহকারী সেশন জজ কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হন, যার বিরুদ্ধে তিনি জুলাই মাসে সেশন জজ আদালতে আপিল দায়ের করেন এবং আদালত তাকে জামিন প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্তির কারণে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করে বাদী জনাব সিরাজুল হক চৌধুরী আদালতের শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ বিচারপতি এসডি আহমেদ ও বিচারপতি আবদুল হাকিম তাদের রায়ে বলেন, আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্তরা আপিলে দণ্ড অনুমোদিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতার বিষয়টি সর্বশেষ আদালতের সামনে উত্থাপিত হয় ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বনাম একেএম মাঈদুল ইসলাম [১৯৯৬ সালের রিট পিটিশন নং ১৭৩২] মামলার মাধ্যমে। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জনাব এরশাদ জনতা টাওয়ার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। জনাব মাঈদুল ইসলাম তা চ্যালেঞ্জ করেন। রিটার্নিং অফিসার জনাব এরশাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন, যার বিরুদ্ধে জনাব ইসলাম আদালতের আশ্রয় নেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তার রায়ে [একেএম মাঈদুল ইসলাম বনাম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, ৪৮ ডিএলআর(এডি)১৯৯৬] জনাব এরশাদের অযোগ্যতার প্রশ্নটির সুরাহা না করে বিষয়টিকে রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনী বিরোধ’ হিসেবে দেখা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন, একই সঙ্গে ‘পড়ৎধস হড়হ লঁফরপব’ বা বিচারালয়ের এখতিয়ারহীনতা কিংবা আইনগত বিদ্বেষের (সধষরপব রহ ষধ)ি অভিযোগ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্বাচনী বিরোধের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলে পর্যবেক্ষণ দেন। উল্লেখ্য, নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের, আদালতের নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ দণ্ডপ্রাপ্তদের, আপিলসাপেক্ষে, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি সুরাহা করেননি।
পরে ২৪ আগস্ট, ২০০০ তারিখে হাইকোর্ট জনাব এরশাদের দণ্ড বহাল রাখেন এবং ৩০ আগস্ট সংসদ সচিবালয় তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। জনাব এরশাদ দণ্ড সম্পর্কিত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন এবং প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে একটি রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে দাবি করা হয়, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর আপিল চূড়ান্তভাবে নিষপত্তি হওয়ার আগে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য নন। মামলার রায়ে [হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বনাম আবদুল মুক্তাদির চৌধুরী, ৫৩ ডিএলআর (২০০১)] বিচারপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন ও বিচারপতি জনাব এবিএম খায়রুল হক সংসদ সচিবালয়ের প্রজ্ঞাপনটি অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বিচারপতিদ্বয় আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হিসেবে জনাব এরশাদের কখন থেকে অযোগ্যতা শুরু হবে সে ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন।
বিচারপতি খায়রুল হকের মতে, জনাব এরশাদ বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রথম দণ্ডিত হওয়ার দিন থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অযোগ্য হয়েছেন। তার মতে, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ‘উদ্দেশ্য হল, যারা জনপ্রতিনিধি, তাদের কেবল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হলেই হবে না, তাদের সুনাম অবশ্যই প্রশ্নাতীত হতে হবে।’ তার মতে, একজন সাধারণ দণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী দণ্ডিত ব্যক্তির তফাৎ রয়েছে- শেষোক্ত ব্যক্তির জন্য উচ্চ মানদণ্ড ব্যবহূত হওয়া আবশ্যক।
অন্যদিকে বিচারপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন সিরাজুল হক চৌধুরী বনাম নূর আহমেদ কোম্পানি ও ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী মামলার রায় এবং কিছু ভারতীয় আদালতের সিদ্ধান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে রায় দেন, কেবল আপিল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরই দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভারতীয় আদালতের রায় বিচারপতি মোঃ জয়নাল আবেদীনের মতামতকে সমর্থন করে না। (মাহমুদুল ইসলাম, কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ৩৪২) বস্তুত ভারতীয় আদালতের মতে, কোন ব্যক্তি আদালত কর্তৃক প্রথম দণ্ডপ্রাপ্তির দিন থেকেই অপরাধী বলে গণ্য হবেন এবং আপিল করা সত্ত্বেও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, যদিও সিটিং বা কর্মরত সংসদ সদস্যদের বেলায় আপিল চূড়ান্তভাবে নিষপত্তি হওয়ার পরই তা কার্যকর হবে। [বাবুলাল বনাম কানকার, এআইআর, ১৯৮৮ এমপি ১৫] ভারতীয় আদালতের আরেকটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিতদের উচ্চ আদালত কর্তৃক আপিল গৃহীত হলেও এবং অপরাধীকে জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অযোগ্য হবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে তার দণ্ড (ংবহঃবহপব) এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়া (পড়হারপঃরড়হ) আদালত কর্তৃক ‘সেট এসাইড’ বা বাতিল করতে হবে। [সুবরাও পাতিল বনাম নারসিংরাও গুরুনাথ পাতিল, এআইআর ২০০১ বম, ১০৪]
সাবেক এটর্নি জেনারেল জনাব মাহমুদুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশেও একই শর্ত প্রযোজ্য। তার মতে, যদি কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাকে সে লক্ষ্যে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে এবং তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ও ৪২৬ ধারার আওতায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও দণ্ডের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেতে হবে। কারণ আপিল করা হলেও দণ্ড বহাল থেকে যায় এবং আপিলকারী দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হিসেবে গণ্য হন। তিনি আরও মনে করেন, উপরিউক্ত বিষয়টি সিরাজুল হক চৌধুরী বনাম নূর আহম্মেদ চৌধুরী মামলার বিচারকের নজরে আসেনি, তাই রায়টি ‘পার ইনক্যুরিয়াম’ (ঢ়বৎ রহপঁৎরধস) বা অনবধানতাবশত- অর্থাৎ আদালতের এ সিদ্ধান্ত অন্য আদালতের ওপর বাধ্যকর নয়। অনেক আইনজ্ঞের মতেও, আমাদের সাংবিধানিক আকাঙক্ষা হল, বিচারিক আদালতের দোষী সাব্যস্তদের দণ্ডপ্রাপ্তির সূচনা থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য করা।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্ট, জরুরি বিধিমালার অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কোন অবস্থায়ই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জরুরি বিধিমালা প্রত্যাহার হলেও তাদের দণ্ড বহাল থাকবে। যদি তারা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন, তাহলে তাদের দণ্ড ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া আপিল আদালত কর্তৃক বাতিল করা না হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। প্রচলিত আইনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিতদের ব্যাপারে একই শর্ত প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নীরবতা এবং আদালতের রায়ের অস্পষ্টতা সত্ত্বেও দুই বছরের অধিক মেয়াদকালের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীরা উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এজন্য আদালত কর্তৃক তাদের দণ্ডাদেশ ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া স্থগিত হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে নৈতিকতার বিষয়টিও জড়িত। আমরা মনে করি, নৈতিকতার বিবেচনায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এমনকি দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের দুর্নাম রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখার আজ সময় এসেছে। আর আদালত কর্তৃক চার্জশিট গঠন করা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের কোনভাবেই মনোনয়নের জন্য বিবেচনায় আনা ঠিক হবে না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আইন ভঙ্গকারীরা যেন আইনপ্রণেতা হতে না পারেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২২ নভেম্বর ২০০৮
আইন ভঙ্গকারীরা আইনপ্রণেতা হতে পারেন না
Categories: