সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা তথা বিশ্বমানবতার শান্তির সপক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ ও ‘নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক (PAVE)’-এর উদ্যোগে আজ এক মানববন্ধন ও শান্তি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস-২০১৬ পালন উপলক্ষে আজ সকাল ১০.৩০টা থেকে ১১.৩০টা পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধন এবং মানবন্ধন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত শান্তি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবাইয়াত ফেরদৌস, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুভাষ সিংহ রায়, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক আবুল হাসানাত, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের প্রতিনিধি মিহির বিশ্বাস, সুজন ধানমন্ডি থানার সভাপতি জুবায়ের নাহিদ, সুজন লালবাগ থানার সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, নাগরিক উদ্যোগ-এর প্রতিনিধি মাহবুব আক্তার জুয়েল, জনাব শাহজাহান মন্টু, এসো মিলি করি’র প্রতিনিধি মিলি জাকারিয়া এবং জনাব আনিসুল হক প্রমুখ।
সংহতি জানিয়ে উক্ত কর্মসূচিতে যোগদান করে নাগরিক উদ্যোগ, এসো মিলে করি, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, আদি ঢাকাবাসী ফোরাম, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন।
মানববন্ধনে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শান্তির পথ হলো মুক্তির পথ। অশান্তি আমাদেরকে সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়। আমরা যদি শান্তিতে থাকতে চাই তাহলে সহিংসতা ও প্রতিহিংসার পথ ছেড়ে আমাদেরকে অহিংসার পথ অবলম্বন করতে হবে। মহাত্মা গান্ধী বলে গিয়েছেন, চোখের বদলে চোখ তুলে নিলে আমরা এক অন্ধকার পৃথিবী পাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিংঘের অধিবেশনে জঙ্গিবাদমুক্ত সম্প্রীতির এক বিশ্ব গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তাঁর সাথে একমত পোষণ করে আমরাও বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তি-সম্প্রীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
জনাব রোবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী আজীবন অহিংসার বাণী প্রচার করে গিয়েছেন। আজ ভারত-পাকিস্তান দুটো রাষ্ট্রই যুদ্ধের মুখোমুখি। কিন্তু যুদ্ধ শান্তি আনতে পারে না। শান্তির আনয়নের জন্য প্রয়োজন অহিংসার নীতি ধারণ করা।’
জনাব দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ উদ্যাপনকে গভীর তাৎপর্যবহ একটি কর্মসূচি হিসেবে আমরা মনে করি। নিকট অতীতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কল্পনা করলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিত্র। এ অবস্থায় দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে জেগে না উঠে, তবে এক অন্ধকারময় ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই আমরা অহিংসার বাণী এবং শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান নিয়ে এবং পরস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’
মানববন্ধনে সুজন-এর পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত আহ্বান রাখা হয়- * সংঘাত নয় – ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি; *সহিংসতা বন্ধ করি – সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি; *অহিংস নীতি গ্রহণ করি – শান্তির দেশ গড়ে তুলি; *অহিংস নীতি গ্রহণ করি – শান্তি-সম্প্রীতির বিশ্ব গড়ি; *মানবতার প্রতি বিশ্বাস রাখি – সহিংসতা বন্ধ করি; *অহিংস নীতির শক্তি – বিধ্বংসী অস্ত্রের চেয়েও কার্যকরী; * হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করি – সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলি; *সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধ করি – শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি; *ভোগের সংস্কৃতি বর্জন করি – ত্যাগের সংস্কৃতি গড়ে তুলি; * ভোগবাদিতা নয় – রাজনীতিতে চাই ত্যাগের সংস্কৃতি; *গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করি – শান্তিময় দেশ গড়ি; এবং *দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি নয় – শান্তি প্রতিষ্ঠায় চাই আদর্শবাদী রাজনীতি।
প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস-২০১৬ পালন উপলক্ষে সুজন-এর উদ্যোগে সারাদেশের ৫৫টি জেলায় মানববন্ধন ও শান্তি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হয়।