সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নাগরিক ভাবনা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নাগরিক ভাবনা


ড. বদিউল আলম মজুমদার
আগামী ২৯ মার্চ থেকে গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন স্তর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম পর্বে দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার মোট ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে সম্ভবত মে মাসের পরে, দেশের অন্যান্য এলাকায় নির্বাচন হবে। দেশের মোট আট কোটি ৫৭ লাখ ভোটারের মধ্যে অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। তাই ইউনিয়ন পরিষদ জনগণের দোরগোড়ার ‘সরকার’ এবং এর প্রভাব প্রতিনিয়ত তাদের জীবন-জীবিকার ওপর পড়ে। অতএব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ ও উপকূলীয় এলাকার নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে আমরা তিনটি নাগরিক সংলাপের আয়োজন করেছি। এগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে কক্সবাজার, বরিশাল ও খুলনা এলাকায়। এ সকল অনুষ্ঠানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এমন অনেক প্রার্থী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ‘সোশ্যাল একটিভিস্ট’ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে তাদের আশা-নিরাশার কথা খোলামেলাভাবে আলাপ-আলোচনা করেন।
অংশগ্রহণকারীদের আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা বার বার বলা হলেও, দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও নির্দলীয় নির্বাচনের আশ্বাস প্রদান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গত ১৩ মার্চ তারিখে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বক্তব্য দেন যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সর্বদাই নির্দলীয় এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলভিত্তিক হওয়ার আমরা বিপক্ষে (দি ডেইলী স্টার, ১৪ মার্চ, ২০১১)। কিন্তু নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ উল্টো।
দক্ষিণ ও উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সব ইউনিয়নেই দলভিত্তিক মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও নাগরিক সংলাপে অনেক অংশগ্রহণকারী অভিযোগ করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দল একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, কিন্তু প্রভাবশালী নেতার আশির্বাদ বর্ষিত হয়েছে অন্য আরেকজনের ওপর। ফলে অনেক ইউনিয়নেই ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিছু এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা হলো যে, এর ফলে অনেক দল নিরপেক্ষ ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, ফলে নির্বাচনে গড় প্রার্থীর সংখ্যা হ্রাস পায় এবং ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিধি কমে যায়। এছাড়াও সামপ্রতিক পৌরসভা নির্বাচন থেকে লক্ষ্য করা যায় যে, দলভিত্তিক মনোনয়নের কারণে ক্ষমতাধরদের আনুকূল্যে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি অনেক হত্যা মামলার আসামীও পৌর মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। বস্তুত পৌর নির্বাচনে ‘খারাপ’ প্রার্থীরা ‘ভাল’ প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী ময়দান থেকে বিতাড়িত করেছে।
নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের মতে, অতীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতো ব্যক্তি ইমেজ তথা তাদের সততা ও যোগ্যতা, আঞ্চলিকতা, প্রার্থীর বংশ পরিচিতি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে দলই গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচন হবে মূলত বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার সৈনিকদের মধ্যে লড়াই। এক্ষেত্রে দলীয় ক্যাডারদের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বক্ষেত্রে দলবাজি ও দলভিত্তিক নির্বাচনের পরিণতি সম্পর্কে খুলনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারী এডভোকেট ফিরোজ আহমেদের বক্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত এডভোকেট ফিরোজ আহমেদ শুধু খুলনায়ই নয়, সজ্জন হিসাবে তিনি জাতীয়ভাবেও সুপরিচিত। নাগরিক সংলাপে তিনি আফসোস করে বলেন, অতীতে চার-চারবার যোগ্যতার বলে খুলনা বারের সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু এখন নির্বাচনে প্রার্থী হলে দলবাজির কারণে দশ ভোটও তিনি পাবেন না। বস্তুতই লাগামহীন ফায়দাতন্ত্র চর্চার কারণে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সারাদেশে অনেক ‘দলদাস’ সৃষ্টি করে ফেলেছে, যা আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ ধরনের প্রভাব আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

খুলনায় অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারী আরেকজন তরুণ শিক্ষিত, নীতিবান ও জনকল্যাণে নিবেদিত সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বলেন, প্রধান দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রার্থী না হওয়ার জন্য তার ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তার মুরব্বীরাও এতে জড়িত। এছাড়া অনেক ভোটারও তাকে নিরুৎসাহিত করছেন। তাদের কেউ কেউ তাকে বলছেন, তুমি কোনো দলের নও, তাই নির্বাচিত হলেও কাজ পাবে না। তাই তোমাকে ভোট দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হবে না।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে দলীয়, বিশেষত ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে হুমকিও অনেক প্রার্থীকে নিরুৎসাহিত করছে। আমাদের দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক তার এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না হতে হুমকির কথা আমাকে জানান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে নীরবে এমনও বলা হচ্ছে যে, আমাদের প্রার্থী কোনো ভোট না পেলেও জয়ী হবেন, তাই প্রার্থী হয়ে লাভ কী!
সংলাপগুলো থেকে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইউনিয়ন পরিষদের কাজ বলতে সাধারণত মানুষ গম, চাল ও বিভিন্ন কার্ড বিতরণ এবং অবকাঠামো সৃষ্টিকেই বুঝায়। এমনকি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিকাংশেরও উন্নয়ন সম্পর্কে একই ধারণা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিবেশ, নারী উন্নয়ন, সুশাসন তথা মানুষের অবস্থার পরিবর্তন তাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনেককে প্রায়শই আফসোস করতে শোনা যায় যে, তারা তাদের ভোটারদের কিছুই দিতে পারছেন না।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক টাকার খেলা চলছে বলেও নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা আমাদেরকে জানান। টাকা দিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়া হচ্ছে, মাস্তান ভাড়া করা হচ্ছে এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটও কেনা হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। বস্তুত পেশিশক্তি ও টাকার প্রভাব আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আজ বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরেকটি বিষয়ও নাগরিক সংলাপে গুরুত্ব পেয়েছে। বিষয়টি হল সংরক্ষিত মহিলা আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের হতাশা। নারী প্রার্থীদের অনেকেরই, বিশেষত অতীতে যারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন, বর্তমান সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের ধারণা অত্যন্ত নেতিবাচক। তাদের মতে, বর্তমান পদ্ধতি সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত নারীদেরকে ক্ষমতা কাঠামোর বাইরেই রাখে। পরিষদে তাদের প্রতিনিধিত্ব অনেকটা প্রতীকী। তাই হতাশাগ্রস্ত বর্তমান মহিলা সদস্যদের অনেকেই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই আরেকটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেই প্রশ্ন তোলেন। তারা আসন্ন নির্বাচন কোনো সুফল বয়ে আনবে কি-না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
তাদের আশঙ্কার পেছনের তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচন হলেও সরকার যদি ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার বিপক্ষে অবস্থান নেয়_যেমনটি তারা করেছে উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে, তাহলে সবই হবে গুড়েবালি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ তথা পুরো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। বিশেষত প্রয়োজন একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে ক্ষমতা, দায়-দায়িত্ব ও সম্পদ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তা না হলে নির্বাচন থেকে কোনো ইতিবাচক ফলাফলের সৃষ্টি হবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান নয়।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন পরবর্তীকালে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বর্তমানের ভঙ্গুর ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করেন। সামপ্রতিক বছরগুলোর লাগামহীন দলবাজির কারণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় সকল নিয়ম-নীতি ভেঙ্গে পড়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনেক কাজ এখন দলীয় নেতা-কর্মীরাই সম্পাদন করে, ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিরাজমান বেসামাল অবস্থাকে নবনির্বাচিতদের পক্ষে সামলে আনা সহজ হবে না। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের ভবিষ্যৎ নিয়েই অনেকে চিন্তিত।

তৃতীয়ত, ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর করতে হলে জরুরিভিত্তিতে নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যদি তাদের দক্ষতা ও সমর্থ বৃদ্ধি না করা হয়, তাহলে তারা সফল হতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ আয়োজনের ক্ষেত্রে গড়িমসি অনেকের মনেই আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর করতে হলে এর জনবল বৃদ্ধি করতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি বিষয়ে আমাদের মনেও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদেরকে একটি হলফনামার মাধ্যমে তাদের আয়ের উৎস, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিবরণ, তাদের ও তাদের পরিবারের সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব, আয়কর বিবরণী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়েছে। একই ধরনের বাধ্যবাধকতা কাজ করেছে উপজেলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে; যদিও নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাশ করা উপজেলা আইন থেকে এ বিধান রহিত করা হয়েছে। তথ্য প্রদানের এমন বিধান সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে সম্মত করাতে পারিনি। আমাদের বোধগম্য নয়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তরে সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের জন্য যদি প্রার্থীদের তথ্য প্রদান অপরিহার্য হয়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন! এছাড়াও আদালত এ ধরনের তথ্যপ্রাপ্তিকে ভোটারদের বাক্স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, কারণ ভোটাররা তাদের বাক্স্বাধীনতা প্রয়োগ করে ভোটের মাধ্যমে। আর নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণের এখতিয়ার কারোরই নেই।
প্রসঙ্গত, আমরা সুজনের উদ্যোগে এ ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলাম, কিন্তু মামলার রায় দেয়ার জন্য নির্ধারিত দিনে হাইকোর্ট বেঞ্চের মাননীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, ফলে আমরা আদালতের নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের জেনে-শুনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং সজ্জনদেরকে নির্বাচিত করার পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

পরিশেষে এটি সুস্পষ্ট যে, আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন ও জনগণের সবচেয়ে কাছের স্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য এ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। আসন্ন নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসলেই জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে তৃণমূলের জনগণের সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষত আমাদের বিরাজমান অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বিরাট বাধা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে হুমকি প্রদান, বিদ্যমান বিধিবিধান উপেক্ষা করে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান, পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব ইত্যাদি এ সকল বাধা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কারণে নির্বাচন কমিশন এসকল বাধা দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচন কমিশন খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবুও আমরা আশা করি যে, নির্বাচনের দিনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে কমিশন সফল হবে। আরও আশা করি যে, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থিগণ ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করবে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা অতি জরুরি।
[লেখক: সম্পাদক, সুজন_সুশাসনের জন্য নাগরিক ]

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ মার্চ ২০১১

Related Post

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তার তাৎপর্য-১সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তার তাৎপর্য-১

ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল ২৯১-১ ভোটে পাস হয়েছে। একমাত্র বিরোধিতাকারী ছিলেন স্বতন্ত্র

সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন দেশবাসীসংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন দেশবাসী

ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল ও বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠছে। বহুদিন থেকেই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাত