উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ রোধে করণীয়

বদিউল আলম মজুমদার

এটি সুস্পষ্ট যে স্বাধীনতার সুফল আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠীর ঘরে ওঠেনি, যা উগ্রবাদের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। আর উগ্রবাদী শক্তি সাধারণ মানুষের দরিদ্রতা ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের পথে ধাবিত করছে।

বর্তমান সরকার উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তা সত্ত্বেও অনেকের ধারণা যে, আমাদের দেশ থেকে উগ্রবাদের_ যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি জঙ্গিবাদ_ মূল উৎপাটন আজও সম্ভব হয়নি। বস্তুত উগ্রবাদের জাল বাংলাদেশের অনেক স্থানে এখনও বিস্তৃত রয়েছে। এমনকি অনেকে বিশ্বাস করেন যে, পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদী চক্রের পরবর্তী টার্গেট। তাই সত্যিকারার্থেই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে হলে আজ আমাদের পুরো জাতিকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে এবং আমাদের প্রত্যেককে নিজ করণীয় করতে হবে। বিশেষত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ একটি উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে এটাই প্রায় সব নাগরিকের কামনা। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধেরও অন্যতম লক্ষ্য, যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতি হিসেবে আমাদের বহু রক্ত দিতে এবং অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মে পরিণত করা হয়েছে। এসব সংশোধনী ছিল আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনার প্রতি চরম আঘাত এবং এগুলো বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে ও উগ্রবাদের বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ ঠেকানোর জন্য আমাদের মোটা দাগে তিনটি বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে বলে আমরা মনে করি। প্রথমটি হলো, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি যথার্থ আইনি কাঠামো তৈরি করা। দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের সবার বিশেষত রাজনীতিবিদদের আচরণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা। তৃতীয়টি হলো, কতগুলো কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া। এসব পদক্ষেপের কিছু দ্রুত এবং কিছু স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে নিতে হবে। আরও কিছু পদক্ষেপের জন্য সময়ের প্রয়োজন হবে।

পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মামলার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং উগ্রবাদের বিপক্ষে একটি যথার্থ আইনি কাঠামো তৈরির একটি অপূর্ব সুযোগ আমাদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। এ লক্ষ্যে অবশ্যই মামলার রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত করতে হবে। সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। একইসঙ্গে অষ্টম সংশোধনী বাতিল করতে হবে_ মহাজোট সরকার তার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে সংবিধানে একটি সংশোধনী এনেই তা করতে পারে। এর জন্য আদালতে যেতে হবে না। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার বিধানগুলো শুধু সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত এবং অষ্টম সংশোধনী বাতিল করলেই হবে না, এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে একটি আইন প্রণয়ন করা।

সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ নিষিদ্ধ হবে। কিন্তু সাংবিধানিক বিধানকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকারিতা প্রদানের জন্য একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে এসব গর্হিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের জন্য শাস্তির বিধান থাকে। একইসঙ্গে বিধান থাকতে হবে ধর্মের অপপ্রয়োগ রোধের। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ ধর্ম চর্চার অধিকার থাকে। কিন্তু কারোরই ধর্মের অপব্যবহারের_ ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কিংবা মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করার অধিকার থাকতে পারে না। আইনের মাধ্যমেই এসব অপব্যবহার রোধ করতে হবে। যদিও বর্তমানে ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎং অপঃ, ১৯৭৪-এর অধীনে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকে যারা অপব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব, তবুও এ বিষয়ে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করাই যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমরা মনে করি।

সংবিধান সংশোধন ও আইন প্রণয়ন সরকারের জন্য আশু করণীয়। কিন্তু আশু থেকে মধ্যমেয়াদিভাব করণীয় হবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সবার আচার-আচরণে প্রতিষ্ঠিত এবং মূল্যবোধে পরিণত করা। বিশেষত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর তা চর্চায় আনা। তাদের মধ্যে আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আর রাজনীতিবিদদের আচরণ পরিবর্তন ও দায়িত্বশীলতার ওপরই বহুলাংশে নাগরিকের আচরণ নির্ভর করে।

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে অনেক কিছুই কেতাবে আছে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আমাদের দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু সেগুলোর কোনো প্রয়োগ নেই। এমনকি সাংবিধানিক বিধানও আছে যেগুলো বাস্তবায়নে সরকার অনাগ্রহী। পছন্দ না হলে আমাদের সরকারগুলো অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশও অমান্য করে। উদাহরণ হিসেবে সংবিধানের স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত ৫৯ অনুচ্ছেদের এবং ১৯৯২ সালের কুদরত-ই-ইলাহী পনির বনাম বাংলাদেশ মামলার [৪৪ডিএলআর (এসি)(১৯৯২)] রায় একের পর এক সরকারের উপেক্ষা করার কথা উলেল্গখ করা যেতে পারে।

আরেকটি আচরণগত পরিবর্তন হতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতা সত্যিকারার্থেই বিশ্বাসে আনা। ধর্ননিরপেক্ষতার স্লোগান মুখে মুখে উচ্চারণ করলেও আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ পেলেই ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। কেউ কেউ তাদের প্রতি সমর্থন জোগায়। এমনকি নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী তিন জোটের আন্দোলনের সঙ্গে না নিলেও পরবর্তীকালে জামায়াতসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে তারা হাত মেলায় ও আঁতাত করে। নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে উগ্রবাদী শক্তিকে রাজনৈতিক স্বার্থে পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নারী নীতি সংশোধনের উদ্যোগ নিলে উগ্রবাদী শক্তি যখন এর বিরোধিতা করে এবং হুমকি দেয়, তখন আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

উগ্রবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যে দ্বিধা করে না তার একটি বড় উদাহরণ হলো ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-জামায়াতে ইসলামীর অশুভ মৈত্রী। তেমনিভাবে ২২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ খেলাফত মজলিশের সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, যা ব্যাপক জনসমালোচনার মুখে পরবর্তীকালে বাতিল করতে হয়েছে।

মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানে বিএনপি আরও অনেক বেশি এগিয়ে। একথা কারোরই অজানা নয় যে, জেনারেল জিয়া পঞ্চম সংশোধনীর জনক। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত আনুষ্ঠানিক আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এছাড়া জোট সরকারের মদদেই বাংলাভাইদের উত্থান ঘটেছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। বর্তমানেও জামায়াত বিএনপির প্রধান সহযোগী।

দ্বন্দ্ব ও হানাহানির রাজনীতি অবসানের লক্ষ্যেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদেরকে সত্যিকারের গণতন্ত্রমনা এবং বিরুদ্ধ মতের প্রতি সহিষ্ণু হতে হবে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুঃসহ অভিজ্ঞতার আলোকে জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যদি সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীলতার সম্পর্ক গড়ে উঠত, তাহলেও হয়তো জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এখনকার আঁতাতের প্রয়োজন পড়ত না। আওয়ামী লীগের বর্তমান দমননীতি বিএনপিকে বস্তুত জামায়াতের কোলে ঠেলে দিয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক আচরণ ও রীতিনীতির চর্চা ছাড়া আমাদের দেশ থেকে উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের অবসানের আশা করা দুরাশা বৈ কিছুই নয়!

উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আমাদের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কারেরও উদ্যোগ নিতে হবে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একটি কাঠামোগত সংস্কার হতে হবে দারিদ্র্য-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে। সমাজতন্ত্র তথা সামাজিক ন্যায়বিচার আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অংশ হলেও স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও বাংলাদেশের সমাজ ব্যাপক দারিদ্র্যপীড়িত ও চরম বৈষম্যমূলক। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি হিসাব মতেই, আমাদের অন্তত ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, যদিও দারিদ্র্য সীমারেখা নিয়ে অনেক গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়াও সমাজে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এদের অনেকেই চরম দরিদ্র বলে চিহ্নিত। অর্থাৎ দারিদ্র্য আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশের নিত্যদিনের সঙ্গী।

শুধু দারিদ্র্যই নয়, মুষ্টিমেয় ব্যতীত আমাদের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী চরম বৈষম্যের শিকার এবং দিন দিন এ বৈষম্য প্রকটতর হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ সরকারি তথ্যমতে, আমাদের দেশে ৫ শতাংশ ধনী পরিবারের জাতীয় আয়ের শেয়ার ১৯৯১-৯২ সালের ১৮.৮৫ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ২৬.৯৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে দেশের ৫ শতাংশ সর্বাধিক দরিদ্র পরিবারের শেয়ার ১.০৩ শতাংশ থেকে ০.৭৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১৯৯১-৯২ সালে ধনী-দরিদ্রের আয়ের বৈষম্য যেখানে ছিল ১৮ গুণ, ২০০৫ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ গুণে।

এছাড়াও তৃণমূলের অধিকাংশ মানুষ এখন মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। গ্রামীণ শিক্ষার মানে চরম ধস নামার ফলে এখন অধিকাংশ গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার পথ প্রায় রুদ্ধ। তাদের অনেকের জন্য এখন পিয়ন-চাপরাশি ছাড়া কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বললেই চলে এবং তাও আবার ঘুষ ও তদবিরের দৌরাত্ম্যের কারণে এখন সোনার হরিণে পরিণত হচ্ছে। বস্তুত একই ভূখণ্ডে এবং একই পতাকাতলে আমরা আজ একটি চরম অসম ও বিভক্ত জাতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছি।

এটি সুস্পষ্ট যে, স্বাধীনতার সুফল আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠীর ঘরে ওঠেনি, যা উগ্রবাদের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। আর উগ্রবাদী শক্তি সাধারণ মানুষের দরিদ্রতা ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের পথে ধাবিত করছে। তাই উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে হলে আমাদের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর বৈষম্য দূর হলেই দারিদ্র্য দূর হবে, কেননা বৈষম্যই হলো অসম সমাজ সৃষ্টির মূল কারণ, দারিদ্র্য হলো রোগের উপসর্গমাত্র।

আরেকটি কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন শিক্ষাক্ষেত্রে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে সবার জন্য একই পদ্ধতির শিক্ষার কথা বলা থাকলেও আমাদের দেশে বহু ধরনের ও মানের শিক্ষা বিরাজমান। এমনি এক ধরনের শিক্ষা হলো মাদ্রাসা শিক্ষা, যেখানে লাখ লাখ ছাত্র এবং কিছু ছাত্রী লেখাপড়া করে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্রদের সন্তান এবং এ শিক্ষাব্যবস্থায়, বিশেষত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা ছেলেমেয়েদের জন্য মসজিদে ইমামতি এবং মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা ছাড়া জীবন-জীবিকা অর্জনের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। তাই তাদের পক্ষে বিপথগামী হয়ে উগ্রবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত আধুনিকতাবিবর্জিত শিক্ষা তাদের বিভ্রান্ত হওয়ার পথকে সুগম করে। তাই একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ব্যতীত জঙ্গিবাদী সমস্যা দূর করা প্রায় অসম্ভব। আনন্দের কথা যে, বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত শিক্ষানীতির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

পরিশেষে এটি সুস্পষ্ট যে, জাতি হিসেবে আমরা আজ উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের আগ্রাসনের মুখোমুখি অবস্থানে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে কতগুলো কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার ক্রমাগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে এবং একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। সর্বোপরি জাতি হিসেবে আমাদের সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে এ আগ্রাসনের মোকাবেলা করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
২৫ আগস্ট, ২০১০

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক'

সূত্র: সমকাল, ২৯ আগষ্ট ২০১০

Related Post

রাজনীতির গুণগত মান উত্তরণ কোন পথে?রাজনীতির গুণগত মান উত্তরণ কোন পথে?

বদিউল আলম মজুমদার গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা উপজেলা ও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। দেশের আপামর জনসাধারণেরও কামনা, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ গ্রহণেই ১৮ ডিসেম্বর

জনগণেরই পায়ের তলায় মাটি নেই!জনগণেরই পায়ের তলায় মাটি নেই!

বদিউল আলম মজুমদার | আপডেট: ০০:০৭, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪ সাম্প্রতিক কালে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।

Civil society role in building citizen awarenessCivil society role in building citizen awareness

st1:*{behavior:url(#ieooui) } /* Style Definitions */ table.MsoNormalTable {mso-style-name:”Table Normal”; mso-tstyle-rowband-size:0; mso-tstyle-colband-size:0; mso-style-noshow:yes; mso-style-parent:””; mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt; mso-para-margin:0in; mso-para-margin-bottom:.0001pt; mso-pagination:widow-orphan; font-size:10.0pt; font-family:”Times New Roman”; mso-ansi-language:#0400; mso-fareast-language:#0400; mso-bidi-language:#0400;} table.MsoTableGrid {mso-style-name:”Table Grid”;