সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক এক নজরে সুজনের অর্জনসমূহ

এক নজরে সুজনের অর্জনসমূহ

দেশে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিগত ২১ বছরে সুজন বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফলতা অর্জিত হয়েছে। তবে অনেক অর্জনের ক্ষেত্রে সুজন-এর পাশাপাশি সমমনা সংগঠন এমনকি রাজনৈতিক শক্তিরও প্রচেষ্টা ছিল। এই ধরনের অর্জনগুলোকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলাফল বলা যেতে পারে। সুজন-এর একক অর্জনও আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

নিম্নে সুজন-এর বছরভিত্তিক অর্জনগুলো (মাইলস্টোন) তুলে ধরা হলো:

২০০২ সাল: প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদকে আহ্বায়ক ও ড. বদিউল আলম মজুমদারকে সদস্য সচিব করে ১২ নভেম্বর ‘সিটিজেন্স ফর ফেয়ার ইলেকশন্স’ নামে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ।

২০০৩ সাল: ১. ২০০৫ সালে আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক হওয়ার আগে, ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি ছক ব্যবহার করে ৫৫টি ইউনিয়নে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, ভোটারদের মধ্যে তথ্যচিত্র বিতরণ এবং জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথমবার ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন কার্যক্রম শুরু; ২. নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ নাম ধারণ।

২০০৪ সাল: ১. পৌরসভা নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা (তখনও আইন হয়নি); ২.  দি ডেইলি স্টার মিলনায়তনে সুজন, প্রথম আলো ও দি ডেইলি স্টার-এর যৌথ উদ্যোগে রাজনৈতিক সংস্কার বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত; ৩.  রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়সমূহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গোলটেবিল আয়োজন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা আজও চলমান।

২০০৫ সাল: ১. ১০ এপ্রিল সুজন, প্রথম আলো ও দি ডেইলি স্টার-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাতির সামনে রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ। এই প্রস্তাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী রাজনৈতিক দলসমূহের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন; ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন; রাজনৈতিক দলের তহবিল নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণ এবং আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রতি বছর নির্বাচন কমিশনে দাখিল; তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রার্থী মনোনয়ন; ‘না ভোট’-এর বিধান প্রবর্তন; নির্বাচনী ব্যয় হ্রাসের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব ইত্যাদি সন্নিবেশিত ছিল; ২. আইনে ও বিধিতে হলফনামার মাধ্যমে তথ্য প্রদানের জন্য সুজন-এর অ্যাডভোকেসির সূচনা; ৩. জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপনির্বাচনে সর্বপ্রথম হাইকোর্টের রায়ে নির্দেশিত প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে প্রদত্ত আট-তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি তূলনামূলক তথ্যচিত্র ভোটারদের মধ্যে বিতরণ।

২০০৬ সাল: ১. ১৬ সেপ্টেম্বর সুজন-এর প্রথম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন; ২. নির্বাচনী অলিম্পিয়াড ও নির্বাচনি সংস্কার বিতর্ক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তরুণদের সচেতন ও সংগঠিত করার কাজ শুরু। নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে মিডিয়া পার্টনার ছিল চ্যানেল আই, প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার।

২০০৭ সাল: ১. মূল নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর সংশোধনকল্পে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব সম্বলিত একটি খসড়া নির্বাচন    কমিশনের কাছে হস্তান্তর। কমিশনের এর অধিকাংশ প্রস্তাব গ্রহণের ফলে এগুলো সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়; ২. সুজন (www.shujan.org) ও ভোটবিডি (www.votebd.org) ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু। www.votebd.org নির্বাচন বিষয়ক তথ্যসমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট; ৩. ভোটার তালিকায় এক কোটিরও বেশি ভূয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির অভিযোগের সূরাহাকল্পে ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করে, যা  নির্বাচন কমিশন সুজনকে প্রদান করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তা থেকে ডাটাবেজ তৈরি এবং তা সুজনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ। কয়েক কোটি ভোটারের নাম সম্বলিত এই ডাটাবেজ তৈরি ছিল একটি দুঃসাধ্য অর্জন, যার ফলে থেকে প্রত্যেক ভোটারের পক্ষে তালিকায় নিজ নাম খুঁজে বের করা এবং একইব্যক্তি একাধিক স্থানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত কিনা তা নিরূপণ করা সম্ভব ছিল। উচ্চ আদালতে ভোটার তালিকা নিয়ে মামলায় সুজনের ওয়েবসাইটের তথ্য উস্থাপন করা হয় এবং আদালত নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন; ৪. কয়েক কোটি ভোটারের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ তৈরি এবং তা প্রকাশের জন্য বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ‘টাইম’ আমাদেরকে ‘ডেমোক্রেসি অ্যাক্টিভিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এই ডাটাবেজের কপি পেতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে সুজন সম্মত হয়নি; ৫. বিতর্কিত ভোটার তালিকার সঠিকতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ব্রতী, উন্নয়ন সমন্বয়, পিপিআরসি এবং সুজন সারাদেশে বেশ কয়েকটি উপজেলায় সমীক্ষা পরিচালনা করে এবং ভোটার তালিকায় ত্রুটি তুলে ধরে; ৬. ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির সম্ভাব্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এর একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করে সুজনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায়, ছবিযুক্ত একটি নির্ভরযোগ্য ভোটার তালিকা প্রণয়ণের অনন্য কাজটি সম্পন্ন করে; ৭. সুজন-এর অ্যাডভোকেসির ফলে ‘স্থানীয় সরকার শক্তিশালী ও গতিশীলকরণ কমিটি’ গঠিত এবং সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সুজন সম্পাদককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ। কমিটি স্থানীয় সরকারের জন্য সমন্বিত আইন ও সংরক্ষিত আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি  প্রচলনের সুপারিশের ভিত্তিতে সবগুলো স্থানীয় সরকার আইনের পুনর্বিন্যাস করে, যা পরিপূর্ণভাবে পরবর্তী সরকার গ্রহণ করেনি; ৮. হাইকোর্ট কর্তৃক ২০০৫ সালে ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে হলফনামার মাধ্যমে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিলের রায় প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক এই রায়কে ভণ্ডুল করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে আবু সাফা নামক জনৈক ব্যক্তিকে (যাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি) দিয়ে আপিল করানো এবং তা হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ কর্তৃক গৃহীত হলেও সুজন-এর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও আইনি পদক্ষেপে তা প্রতিহত করা সম্ভব হয়। আবু সাফা যে একজন দুর্বৃত্ত সুজন সে তথ্য সংগ্রহ  করে  আদালতে উত্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বরং আদালত আপিলটি গ্রহণ করে, যার ফলে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টিকারী হাইকোর্টের রায় বতিল হয়ে যায়। সুজনের আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের আপিল বিভাগের রায়ের প্রবল প্রতিবাদের মুখে একই দিনে রায়টি প্রত্যাহার করা হয়। সুজনের হাজার হাজার স্বেচ্ছাব্রতীর প্রচেষ্টায় প্রার্থীদের তথ্য প্রদান ও তা প্রচারের বিষয়টি এখন প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে; ৯. সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক টকশো ‘জনতার কথা’ (২০টি) এবং নাগরিকদের মতামতভিত্তিক টকশো ‘ভাববার বিষয়’ (৩০টি) বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার। এগুলোর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ও সুশাসনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি; ১০. গণসাক্ষরতা অভিযানের সহায়তায় এবং সুজন-এর উদ্যোগে সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের সঞ্চালনায় শিক্ষা বিষয়ক টক শো ‘শিক্ষার চালচিত্র’ (৩৭টি পর্ব) চ্যানেল আই-এ সম্প্রচার।

২০০৮ সাল: ১. সুজনের অব্যাহত অ্যাডভোকেসির ফলে প্রার্থীদের হলফনামার ভিত্তিতে তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া অন্য সব স্থানীয় সরকার আইন ও বিধিতে অন্তর্ভুক্ত হয়; ২. সর্বপ্রথম ৪টি সিটি কর্পোরেশন ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনে আইনি বাধবাধকতার প্রদত্ত হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা। এই কার্যক্রমে মিডিয়া পার্টনার ছিল প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও চ্যানেল আই; ৩. বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্যসহ ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুজন-এর ওয়েবসাইটে সন্নিবেশিত করা হয়। তথ্যবহুল এই ওয়েবসাইটটির জন্য সুজন ‘মন্থন অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে; ৪. নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল আসনে (২৯৯টি) প্রার্থীদের তথ্য চিত্র বিতরণ এবং ৮৭টি নির্বাচনী এলাকায় জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন; ৫. সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বাংলা অনুবাদ করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সম্পাদনায় অন্যান্য নির্বাচনী আইনসহ একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।

২০০৯ সাল: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বপ্রথম ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা।

২০১০ সাল: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা আকারে তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির আবেদন জানিয়ে সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন-এর নির্বাহী সদস্য এ এস এম শাহজাহান (প্রয়াত) ও বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সুজন-এর নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ ও ম শফিক উল্লাহ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার, স্বশাসিত ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাডভোকেসি গ্রুপ-বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন মন্ডল এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য সুরাইয়া বেগম জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির রায় হওয়ার দিনে জেষ্ঠ বিচারপতি ইমান আলী আপিল বিভাগে যোগদান করলে বেঞ্চটি ভেঙ্গে যায়। মামলাটি নতুন বেঞ্চে শুনানির প্রচেষ্টা চলছে।

২০১১ সাল: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২৩৫টি ইউনিয়নে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

২০১২ সাল: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।

২০১৩ সাল: ১. তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়; ২. দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, দুই নির্বাচনকালে তাঁদের আয় ও সম্পদের পার্থক্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়; ৩. সুজন-এর ফেসবুক পেজের (www.facebook.com/shujan.bd) যাত্রা শুরু হয়; ৪. সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে জাতীয় সনদের রূপরেখা প্রকাশ। এ রূপরেখায় রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়; ৫. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিষয়ে বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও নেত্রকোণা জেলায় নাগরিক সংলাপ ও নাগরিক সমাবেশের আয়োজন।

২০১৪ সাল: ১. উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২৩টি উপজেলায় প্রার্থীদের তথ্যচিত্র বিতরণ ও জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন; ২. একতরফা হওয়ার কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতের ন্যায় সুজন নির্বাচনসংক্রান্ত অনেকগুলো কাজ না করলেও, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিল করা হলফনামা ও আয়কর রিটার্নের ভিত্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী আসনগুলোর জন্য তথ্যচিত্র তৈরি করে তা ভোটবিডি ওয়েবসাইটে প্রকাশ; ৩. দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে সুজনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ।

২০১৫ সাল: ১. প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধ অলিম্পিয়াড আয়োজন; ২. সুজনের সহায়তায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্মেন্টের পাবলিক পলিসির  Professor Rohini Pande এবং উইলিয়ামস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের  Professor Jessica Leight-এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা’ প্রতিষ্ঠান (ইওউঝ) এর সহায়তায় ‘Innovations for Poverty Action (IPA)’ এর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে ভোট কেনা-বেচার বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা; ৩. দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ‘না’-ভোটের বিধান বাতিলের বিরুদ্ধে একটি মামলায় বাংলাদেশ হাইকের্টের একটি বেঞ্চ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে ‘অ্যামিকাস কিউরি’ হিসেবে নিয়োগ দেন। আদালত ড. মজুমদারের বক্তব্য ও উপস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করে।

২০১৬ সাল: ১. প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন ও আপিল দায়ের, পরে তথ্য কমিশনের দ্বারস্থ হওয়া এবং সব শেষে হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করা হলে ২০১৬ সালে ঘোষিত একটি যুগান্তকারী রায়ে রাজনৈতিক দলসমূহের তথ্য প্রদানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্দেশনা জারি। মামলার বাদী ছিলেন: ড. বদিউল আলম মজুমদার, এম হাফিজউদ্দিন খান, এ এস এম শাহজাহান (প্রয়াত), সৈয়দ আবুল মকসুদ (প্রয়াত), অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং আলী ইমাম মজুমদার; ২. জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

২০১৭ সাল: একযোগে সারাদেশে সুজন-এর পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন।

২০১৮ সাল: ১. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০টি নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নির্বাচনি অলিম্পিয়াড’ এবং একটি জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন ভোটারদের মাঝে প্রচারাভিযান পরিচালনা ;২. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৭টি জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান, ২৯টি নির্বাচনী এলাকা ও ঢাকায় মোট ৩১টি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন, ৭৩টি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের তথ্যসম্বলিত তথ্যচিত্র বিতরণ, ৫২টি নির্বাচনী এলাকায় সাংস্কৃতিক প্রচারাভিযান, ৪২টি নির্বাচনী এলাকায় মানববন্ধন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন (৩৫ লক্ষাধিক মানুষ যুক্ত হয়) ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা; ৩. সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বাংলা অনুবাদ এবং অন্যান্য নির্বাচনী আইন সম্বলিত একটি গ্রন্থ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।; ৪. তথ্য অধিকার আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার অ্যাকটিভিস্ট সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা ও ময়মনসিংহে তথ্য অধিকার বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন শুরু করা হয়, যার ব্যাপ্তি পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চলমান রয়েছে।

২০১৯ সাল: তিন তিনবার লিখিতভাবে আবেদন ও তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আবেদন এবং নানামুখী চাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করতে বাধ্য করা। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের বিশ্লেষণ ও উক্ত নির্বাচনের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরা হয়, যার ভিত্তিতে প্রথম আলোতে ধারাবাহিকভাবে ৫টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের তথ্য থেকে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফলের তথ্য ছিল বহুলাংশে বানোয়াট। 

২০২০ সাল: ১. করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। অনলাইনে গোলটেবিল বৈঠক, মতবিনিময় সভা, সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদির মাধ্যমে সাংগঠনিক ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা। ই-নিউজ লেটার প্রকাশের মাধ্যমে সব কার্যক্রমের তথ্যায়নের সূচনা; ২. করোনাভাইরাস সহনশীল গ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকার জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা।

২০২১ সাল: ১. নির্বাচন কমিশনে সৎ, সাহসী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সুজন দেশের চিন্তাশীল ও বিশেষজ্ঞ নাগরিকদের মতামতের প্রেক্ষিতে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ শিরোনামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে ৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে। এরপর আইনের খসড়াটি নিয়ে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক আলোচনার পর সুজন-এর একটি প্রতিনিধি দল আইনের একটি খসড়া কপি মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হকের কাছে হস্তান্তর করে; ২. দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি নিয়ে আগামী প্রকাশনী থেকে দুটি বই প্রকাশ। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি নিয়ে প্রথমা প্রকাশন থেকে একটি বই প্রকাশ করা হয়।

২০২১-২০২২ সাল: এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় একদল সাংবাদিককে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যাতে ৬০ জেলার ৬০ জন সুজন সদস্য অংশ নেন এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা তৈরির সুযোগ পান।২০২২ সাল: ১. নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত ‘অনুসন্ধান কমিটি’র কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তথ্য অধিকার আইনের অধীনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তথ্য চেয়ে একটি দরখাস্ত করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিকার না পেয়ে তিনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। তথ্য কমিশন কর্তৃক অভিযোগটি খারিজ করা হলে, পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে; ২. সিপিডির সঙ্গে যৌথভাবে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল মহানগরে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যাতে বাণিজ্য মন্ত্রী ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অংশ নেন।