বদিউল আলম মজুমদার
আসন্ন চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে গত দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকটি এলাকায় ‘নাগরিক সংলাপে’ অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় আমার। এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে এই নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে তাঁদের চরম হতাশার কথাও তাঁরা উল্লেখ করেন। অনেকের মতে, সিটি করপোরেশনগুলোর অধিকাংশ আসনে রয়েছে দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। কোনো কোনো এলাকায় এসব অভিযুক্ত প্রার্থী নিজেদের মনোনয়নপত্র বাতিলের আশঙ্কায় তাঁদের স্ত্রীদের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর ‘খারাপ’ মুদ্রা যেমন ‘ভালো’ মুদ্রাকে বাজার থেকে বিতাড়িত করে, তেমনিভাবে কুজনদের ভয়ে সজ্জনেরা নির্বাচনী অঙ্গন পরিত্যাগ করেছেন। ফলে আসন্ন নির্বাচনে ‘ভালো’ প্রার্থীর সংখ্যা খুবই সীমিত।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত জেলে থাকা এবং পলাতক প্রার্থীদের সহযোগীরা এখন স্লোগান ধরছেন−‘এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে’। তাই এটি প্রায় নিশ্চিত যে, নির্বাচনে তাঁদের অনেকেই জয়ী হবেন এবং বীরদর্পে ক্ষমতার আসনে বসবেন। তাঁদের এ জয় অবশ্য পুরো জাতির জন্য হবে একটি বড় পরাজয়। বস্তুত ১১ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন, বিশেষত গত দেড় বছরের রাজনৈতিক সংস্কারের ব্যাপক প্রচেষ্টার পর আসন্ন নির্বাচনে দুর্বৃত্ত প্রার্থীদের ছড়াছড়ি জাতির জন্য নিঃসন্দেহে একটি চরম লজ্জাকর ঘটনা। আর এ লজ্জার ভাগীদার সবাই−সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও নাগরিক সমাজ। অনেকের সামনে আজ প্রশ্ন: পরাজয়ের এত গ্লানি আমরা রাখব কোথায়? এত লজ্জা আমরা ঢাকব কোথায়?
আমাদের রাজনীতি থেকে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলকরণ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যেই বর্তমান সরকারের আগমন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নকল্পে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তিকে অন্তরিন এবং তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা করলেও মামলাগুলো দ্রুততার সঙ্গে সরকার নিষ্পত্তি করতে পারেনি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অবশ্য সংগত কারণেই দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টির সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, অনেক সময় বিচারিক প্রক্রিয়াকে অপব্যবহার করেই। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রায় সব অভিযুক্তই এখন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া প্রবল চাপের মুখে সাম্প্রতিককালে সরকার যেন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করে ফেলেছে। আর এ আত্মসমর্পণের ভবিষ্যৎ পরিণতি যে অমঙ্গলকর, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বর্তমান নির্বাচন থেকেই অনেকটা দৃশ্যমান।
সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং বর্তমান দুর্বল অবস্থার জন্য অবশ্য দায়ী নিজেদের কিছু অনৈতিক ও ভুল সিদ্ধান্ত, উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল বিশ্ববাজার পরিস্থিতি ইত্যাদি। আরও দায়ী ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা ও তাঁদের অনেকের সিন্ডিকেটসুলভ আচরণ। বর্তমান অবস্থার জন্য সর্বাধিক দায়ী সরকারের ভালো-মন্দ সব কাজে রাজনৈতিক দলের প্রবল বাধা এবং তথাকথিত নাগরিক সমাজের কিছু সদস্যের দলবাজি এবং প্রজাতন্ত্রের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দলীয় আনুগত্য।
অনেকের মতে, বর্তমান লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য সর্বাধিক দায়দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং অতীতে তাঁরা অনেক ভালো কাজ করেছেন। তবে সেসব ভালো কাজের নেতৃত্বে ছিলেন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিরা। কিন্তু গত দেড় দশকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণগত মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে−রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের একটি বিরাট অংশ এখন সর্বপ্রকার অপকর্মের হোতায় পরিণত হয়েছেন। বস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমানে হয়ে পড়েছে দুর্নীতিবাজ ও দুর্বৃত্তদের আখড়া এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়ই সাম্প্রতিককালের সব গর্হিত কাজ পরিচালিত হয়ে আসছে। আসন্ন নির্বাচনে যেসব দুর্বৃত্ত প্রার্থী হয়েছে, তাদের সবাই কোনো না কোনো দলের সঙ্গে জড়িত বা দলের আশীর্বাদপুষ্ট।
আশা করা হয়েছিল, ১১ জানুয়ারির ধাক্কার পর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা দলের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান চালাবে এবং দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে দুর্বৃত্তায়ন রোধে দলের মধ্যে সংস্কার আনবে এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার-প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কতগুলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাবে। এ ছাড়া রাজনীতিবিদেরা কথাবার্তা ও আচরণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।
কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা তো কোনো পরিবর্তন করেইনি, বরং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব সংস্কার ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোগকে তারা ছলে-বলে-কলে-কৌশলে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে। অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তার, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ, খসড়া গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও তাদের অনুগত কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীর ক্রমাগত অপপ্রচার ও অযৌক্তিক বিরোধিতা এ বাধা প্রদানের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। উপর্যুপরি অপপ্রচার দুর্ভাগ্যবশত এখন অনেকের কাছে ‘সত্যে’ পরিণত হয়েছে।
আসন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণ অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। যদিও সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণবিধির ৩ ধারা অনুযায়ী এসব ‘নির্বাচন দলভিত্তিক হবে না’, তবুও ১৪ দলের পক্ষ থেকে এসব নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলো আবারও তাদের ‘ক্ষমতা’ প্রদর্শন করল নির্বাচনী বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে! এমন আচরণ কোনোভাবেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়। এ ছাড়া নীতি ও নৈতিকতাবোধের সামান্যতমও তোয়াক্কা না করে দলগুলো মনোনয়ন দিল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কোনো কোনো ব্যক্তিকে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের পায়ে কুঠারাঘাত করল কি না, তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে! এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চারদলীয় জোটও নির্দলীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী বিধিবিধানের প্রতি একই মনোভাব প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা দাবি করে যে, কোনো নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাঁরা সব পদ ও দায়দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। আস্কালনের পরিবর্তে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচার দাবি করবেন। আদালতের রায়ে নির্দোষ সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকবেন। আর দণ্ডিত হলে তা মেনে নিয়ে পরিণতি ভোগ করবেন। কিন্তু আমাদের দেশে হয় তার উল্টো, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বর্তমান লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনও তাদের দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োগের অভাবই জনগণকে আইন অমান্য ও উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করে। অতীতে এ সমস্যা অতি প্রকট ছিল, দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানেও এর পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না।
নির্বাচন কমিশনের আরেকটি দুঃখজনক কার্যক্রম বর্তমান লজ্জাকর পরিস্থিতির উদ্ভবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীদের দাখিলকৃত হলফনামা ও সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় এবং উৎসের বিবরণী, আয়কর রিটার্নসহ জনগণের অবগতির জন্য কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়ার বিধান থাকলেও নির্বাচন কমিশন ১৩ দিন সময় নেয় একমাত্র হলফনামাগুলো প্রকাশের জন্য। তাও প্রকাশ করা হয় শুধু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর অবশিষ্ট ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী’দের হলফনামা। অর্থাৎ গত ৩ জুলাই যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবার দেওয়া হলফনামা প্রকাশ করা হয়নি। যদি তা করা হতো, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে অনেক প্রার্থীর অতীত অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে হেডলাইন হতো, তাঁদের আমলনামা ভোটারদের সামনে উন্নোচিত হতো এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে একটি জনমত গড়ে উঠত। যাঁরা এখনো আছেন, তাঁদের কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতেন। দীর্ঘ বিলম্বের পর ২১ জুলাই প্রার্থীদের দাখিল করা আয়কর রিটার্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কাজটি আরও আগেই করা উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশনের এসব দুর্বলতার কারণে দুর্বৃত্তরা সুযোগ পেয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২২ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যসমূহ আমরা বিধিসম্মতভাবে যথাসময়ে আবেদন করেও পাইনি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আমাদের কোনোরূপ সহায়তা করেনি।
উল্লেখ্য যে, ভারতীয় নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের দাখিলকৃত তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার বিধান করে। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রথম রায় দেওয়ার পর ২৮ জুন, ২০০২ তারিখে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ জারি করে: ‘উল্লিখিত হলফনামায় প্রত্যেক প্রার্থীর দেওয়া তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার তাঁর অফিসের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে প্রকাশ করবেন এবং এর কপি বিনামূল্যে ও সহজপ্রাপ্য করে সব প্রার্থী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে বিতরণ করবেন।’ The information…furnished by each candidate in the aforesaid affidavit shall be disseminated by the respective returning officers by displaying a copy of the affidavit on the notice board of his office and also by making the copies thereof available freely and liberally to all other candidates and the representatives of the print and electronic media.? এ ছাড়া কমিশন প্রার্থীদের পক্ষে ‘বিরুদ্ধ হলফনামা’ (counter affidavit) দায়ের বিধান করে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যগুলো গণমাধ্যমকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি। আমরা ‘সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিকের’ পক্ষ থেকে বহু কাঠখড় পুড়িয়েও এবং অনেক প্রতিশ্রুতির পরও যথাসময়ে তথ্যগুলো পাইনি। ভাবতে কষ্ট হয়, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বহু লড়াইয়ের পর আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত নির্বাচনী বিধিমালায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতরণের কোনো বিধানও নেই। বিধিমালায় তথ্য শুধু কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের কথা বলা রয়েছে। আমাদের দেশে খুব কম ব্যক্তিরই ওয়েবসাইটে প্রবেশের সুযোগ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। গ্রাম কিংবা মফস্বল শহরে বসবাসকারী স্বল্প শিক্ষিত নাগরিকদের, এমনকি মহানগরের বাইরে অবস্থিত গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এ ছাড়া গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক প্রার্থীই তাঁদের হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন কিংবা অসত্য তথ্য দিয়েছেন। যে অপরাধের শাস্তি প্রার্থিতা বাতিল। উপরন্তু অনেক হলফনামা সম্পূূর্ণভাবে পূরণ করা হয়নি, যা প্রচলিত আইনে অসম্পূর্ণ। ফলে তা অগ্রহণযোগ্য। এসব অসংগতি ও অসম্পূর্ণতার জন্য কমিশন এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। আশা করি, কমিশন এ ব্যাপারে দূরদর্শিতা, সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দেবে।
আমাদের সচেতন নাগরিকেরাও নির্বাচনে দুর্বৃত্ত প্রার্থীদের ছড়াছড়ির লজ্জা থেকে রেহাই পেতে পারেন না। কারণ তাঁদের অনেকেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমনকি সাফাইও গেয়েছেন। এ ব্যর্থতা অবশ্য আমাদের নষ্ট রাজনীতির দুষ্টু ছোবলের ফলে সৃষ্ট দলবাজি ও ফায়দাবাজির নগ্ন প্রতিফলন। বিজ্ঞজনদের নীরবতা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ অশনিসংকেত।
এটি সুস্পষ্ট যে, চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভার নির্বাচনী অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত মানে পরিবর্তনের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া দুষ্কর। এ ছাড়া আমরা পেতে পারি সে সরকার যে সরকার আমাদের প্রাপ্য। আর এ লজ্জা ঢাকার জায়গা আমাদের থাকবে না! এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি অবশ্য ভয়াবহ হতে বাধ্য। আমরা আবারও আরেকটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারি।
ড. বদিউল আলম মজুমদা: সম্পাদক, সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২২ জুলাই ২০০৮
এত লজ্জা আমরা ঢাকব কোথায়?
Categories: