সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও নির্বাচিতদের তথ্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও নির্বাচিতদের তথ্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Press conference 29.05.14চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে দক্ষ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। গত ২৯ মে, ২০১৪ সকাল ১১.০০টায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রম্ননি মিলনায়তনে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ও সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘প্রার্থীগণ কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে অধিকাংশই (২৬৫ জন বা ৫৬.৯৮%) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৫০.২১% (২২৮৮ জনের মধ্যে ১১৪৯ জন)। বিশেস্নষণ থেকে দেখা যায় যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় উচ্চ শিক্ষিতদের (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর) নির্বাচিতদের হওয়ার হার যেমন বেশি (৫০.২১% প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ৫৬.৯৮%);  তেমনি  স্বল্প শিক্ষিত অর্থাৎ এসএসসি বা তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় কম (৩১.৩৩% প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নির্বাচিত হয়েছেন ২৫.৫৯%)’।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে অধিকাংশের পেশাই (৬১.৯৩% বা ২৮৮ জন) ব্যবসা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিলো ৫৫.৭২% (২২৮৮ জনের মধ্যে ১২৭৫ জন)। হলফনামায় পেশার বিষয়টি উল্লেখ না করা নির্বাচিত চেয়ারম্যান (১৬ জন) ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের (৮৫ জন)  বাদ দিলে এই হার দাঁড়ায়  যথাক্রমে ৬৪.১৪% এবং ৫৮.৪৩%।  প্রার্থীদের মামলা সংক্রান্ত- বিষয়ে জনাব দিলীপ সরকার বলেন, ৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়াম্যানের মধ্যে ১৩৩ জনের (২৮.৬০%) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ২০৫ জনের (৪৪.০৮%) বিরম্নদ্ধে। বর্তমানে মামলা রয়েছে এবং অতীতেও ছিল (উভয় সময়ে মামলা) এমন চেয়ারম্যান রয়েছেন ৭২ জন (১৫.৪৮%)। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিলো যথাক্রমে ২৭.৬২% (২২৮৮ জনের মধ্যে ৬৩২ জন), ৩৩.৩০% (৭৬২ জন) এবং ১২.৮৯% (২৯৫ জন)’।
সুজন কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, ‘৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে অধিকাংশরই (২৭৬ জন বা ৫৯.৩৫%) আয় বছরে ৫ লক্ষ টাকার কম। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার  ৬৯.৩৬% (২২৮৮ জনের মধে ১৫৮৭জন)। বাৎসরিক ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেন ৯ জন (১.৯৩%) নির্বাচিত চেয়ারম্যান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিলো ১.০৯% (২২৮৮ জনের মধ্যে ২৫ জন)। ৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪০ জনের (৮.৬০%) সম্পদ ৫ লক্ষ টাকার কম। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১৪.৮৬% (২২৮৮ জনের মধ্যে ৩৪০ জন)। ৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ১০৩ জন (২২.১৫%)। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকার বেশি সম্পদের অধিকারী ২১ জন (৪.৫১%) প্রার্থী। ২২৮৮ জন প্রার্থীর মধ্যে এই হার ছিলো যথাক্রমে ১৪.১১% (৩২৩ জন) ও ২.৪৯% (৫৭ জন)’।
প্রার্থীদের দায়-দেনা সংক্রানত্ম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র ৭৯ জন (১৬.৯৮%) ঋণ গ্রহীতা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে এই হার ছিলো ১৪.৮৬% (২২৮৮ জনের মধ্যে ৩৪০ জন)। ৪৬৫ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মধ্যে আয়কর প্রদানকারী মাত্র ২৩১ জন (৪৯.৬৭%)। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে এই হার ৩৫.৪৮% (২২৮৮ জনের মধ্যে ৮১২ জন)’।
এ সময় তিনি আগামী দিনের সকল নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ করা এবং উপজেলা পরিষদসহ সকল স’ানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বশাসিত করার লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। যেমন, ১.স’ানীয় সরকার নির্বাচনসমূহকে দলভিত্তিক না করা। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলভিত্তিক নির্বাচন করতেই চায়, তবে এর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। ২. নির্বাচন কমিশনকে মেরম্নদ- সোজা করে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ করার লক্ষ্যে যথাযথভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। তাই দক্ষ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন পুনর্গঠন করতে হবে। ৩. স্ট্যাগার্ড (একাধিক দিনে) নির্বাচন না করা। ৪. নির্বাচনী ব্যয় হ্রাসসহ সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ ও খরচে প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পোস্টার প্রকাশ, প্রার্থীদের তথ্য প্রচার এবং সকল প্রার্থীকে এক মঞ্চে এনে ‘প্রার্থী পরিচিতি সভা’ করা। ৫. পূর্ণাঙ্গ উপজেলা পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে দ্রম্নত সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের নির্বাচন সম্পন্ন করা। ৬. রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অসততা ও পক্ষপাতিত্বের ক্ষেত্রে কঠোর শাসিত্মর বিধান এবং তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা।৭. বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘জিরো টলারেন্স’-এ রাখা। ৮. উপজেলা পরিষদসহ সকল স’ানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বশাসিত করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন প্রণয়ন বা আইন সংশোধন করা। ৯.স’ানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে আমলাতন্ত্রের খবরদারী মুক্ত করার জন্য স’ানীয় সরকার কমিশন গঠন করা।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন কিছুটা সুষ্ঠু হলেও সহিংসতা, কারচুপি, জালভোট ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ দফা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ষষ্ঠ দফাতে উপজেলার সংখ্যা কম থাকায় আমরা ভেবেছিলাম নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিন’ সে আশায় আমাদের গুড়েবালি। এ পর্যায়েও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এ অনিয়মের দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন নেবে না। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তারা দায়িত্ব না নিলে নাগরিক হিসেবে আমরা অসহায় বোধ করি। নির্বাচনে হেরে গেলে সংড়্গুব্ধ ব্যক্তিকে নির্বাচনী ট্রাইবুনালে যেতে বলেছে ইসি। কিন’ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হলে নির্বাচন বাতিলের ড়্গমতা কমিশনের রয়েছে বলেও তিনি মনত্মব্য করেন’।
ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘প্রার্থীগণ হলফনামায় যেসকল তথ্য প্রদান করেন, তার সবগুলো সঠিক ও সত্য তথ্য নয়। তাই হলফনামায় দাখিলকৃত তথ্যাদি নির্বাচন কমিশনকে যাচাই-বাছাই ও খতিয়ে দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হলফনামায় তথ্য প্রদানের যে বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হয়েছে তা একটি জাতীয় অর্জন। কিন’ এব্যাপারে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন আনত্মরিকতা দেখতে পাই না। তিনি আরো বলেন, আমাদের সমাজে অপরাধী ও দুবৃত্তদের মধ্যে যেমন নেতা হবার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তেমনি নেতাদের মধ্যেও দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের জাতির জন্য সত্যিই একটি অশণিসংকেত। উপজেলা নির্বাচনের বিজয়ী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কে কত ভোট পেয়েছেন এ সংক্রানত্ম তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি। এসকল ঐতিহিাসিক তথ্য সকলের জানার অধিকার রয়েছে বলেও তিনি মনত্মব্য করেন।

Related Post

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর সংবাদ সম্মেলনপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর সংবাদ সম্মেলন

সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স¤পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর পক্ষ থেকে আজ ২৯ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, সকাল ১১:৩০টায়, অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলন

“ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন“ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন

গত ০৭ ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ১১টায় সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি হল রুমে “ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সুজনের সভাপতি

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন রাজনৈতিক দলভিত্তিক হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিরাজমান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবকে গ্রামাঞ্চল তথা ঘরে ঘরে বিস্তৃত করবে’ _ এমনি বক্তব্য তুলে ধরা