সমাজ

গত মে মাসে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের উদ্যোগে এবং জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল ‘জাতীয় বাজেট ও তরুণদের ভাবনা’। এতে সারাদেশ থেকে শ’খানেক বলিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে। ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের সদস্যের বাইরেও জাগোরি, ডবিল্গউবিবি ট্রাস্ট, দলিত যুব ফোরাম, স্বজন সমাবেশ, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াস কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথমপরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান। দু’জন সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, যিনি বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু এতে অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় বাজেট সম্পর্কে যুবদের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করাই ছিল কর্মশালার উদ্দেশ্য। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন অধ্যাপক মুনীর হাসান এবং আলোচনায় অংশ নেন কেএএম মোর্শেদ, আনির চৌধুরী, শওকত হোসেন মাসুম, মনীষা বিশ্বাসসহ আরও অনেকে। কর্মশালার আলোচনাটি ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত, শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, ১৫ বছর বয়সেই যুবত্বের সূচনা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫-২৪ বছর বয়সের জনগোষ্ঠী যুব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের জাতীয় যুব নীতি ২০০৩ অনুসারে, ১৫-৩৫ বছর বয়স্করা যুব সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের আদমশুমারির তথ্য থেকে ১৫-৩৫ বছর বয়স্কদের সংখ্যা পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী এ বয়সসীমার মধ্যে পড়ে। আরও ধারণা করা হয়, আমাদের শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশই যুব সম্প্রদায়।
জনসংখ্যা এবং শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশ যুব সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও এ বিরাট জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের ধারণা অত্যন্ত সীমিত। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-ভাবনা ও অনুপ্রেরণার উৎসের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। পরিচিত নই তাদের বিশেষ সমস্যার সঙ্গে। আমরা জানি না তারা কী ভাবছে নিজেদের নিয়ে, সমাজকে নিয়ে এবং জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আমাদের নীতিনির্ধারকরাও তরুণদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন বলে মনে হয় না। ফলে রাষ্ট্রীয় নীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হয় না। তারা যে একটি বিরাট সম্পদ এবং জাতিকে সামনে নিয়ে যেতে বিরাট অবদান রাখতে পারে, তার স্বীকৃতি মেলে না। এ অনুভূতি থেকেই কর্মশালাটির আয়োজন।
বাজেট সামনে রেখে অনেক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোতে অনেক দাবি-দাওয়া উত্থাপিত হয়। বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য অনেক জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এ কর্মশালা থেকে তরুণদের জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো দাবি ওঠেনি। দাবি ওঠেনি কোনো বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের; বরং এতে যুবরা কী করতে পারে এবং কী করবে তা নিয়েই মূলত মতবিনিময় করা হয়।
কর্মশালার আলোচনায় আমার মধ্যে যে উপলব্ধি জেগেছে তা হলো, মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ যুব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে একদিকে যেমন বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, আরেকদিকে ঝুঁকিরও উদ্রেক করেছে। এ বিরাট জনগোষ্ঠীর মেধা ও সৃজনশীলতার যদি পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, তারা যদি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়, তাদের মধ্যে যদি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে তাদের সম্ভাব্য অবদান বাংলাদেশের জন্য একটি অভূতপূর্ব ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করতে পারে। একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ। এ জনগণকে, বিশেষত তরুণদের যদি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, তাহলে অভাবনীয় সফলতা নিয়ে বিশ্বের দরবারে আমরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। এটি সম্ভাবনার দিক।
ঝুঁকির দিক হলো, এ বিরাট জনগোষ্ঠী জনসম্পদে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে যদি তারা বিপথগামী হয়, তারা যদি অর্থবহ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত না হয়, তাহলে সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। সর্বোপরি, জাতি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভয়াবহ আশঙ্কা। তাই যুবদের দিকে আমাদের নীতিনির্ধারকদের গভীর মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
কর্মশালায় আলাপ-আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে, বাজেট একদিক থেকে দেখতে গেলে নিতান্তই একটি করণিকের কাজ; কারণ এটি আগত অর্থবছরের সরকারি খাতে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের ফিরিস্তি। অন্যদিকে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল_ এর মাধ্যমে সরকারের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ঘটে। সরকার কী ধরনের অগ্রাধিকার নির্ণয় করে, তার ওপরই মূলত জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নির্ভর করে। বাজেটের মাধ্যমে সরকার যদি এমনসব কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় করে যা জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, জনউদ্যোগকে উৎসাহিত করবে এবং সেগুলোকে ফলপ্রসূ করার ব্যাপারে সহায়তা করবে, তাহলেই বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেমন, বার্ষিকভাবে সরকার স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু যা ব্যয় করে, সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া পরিবারটিও তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে। তাই সরকারের এমন খাতে ব্যয় করা উচিত, যা জনগণের ব্যয়কে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে, যাতে তারা ‘বিগেস্ট ব্যাঙ্গ ফর দেয়ার বাক’ বা অর্থব্যয়ের সর্বোচ্চ প্রতিদান পায়।
মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যদি তারা বিকাশের সুযোগ পায়। আর কর্মশালায় উপস্থিত যুবরা চায় তাদের বিকাশের সুযোগ। তারা চায় শিক্ষার সুযোগ, উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ_ যে শিক্ষা তাদের একবিংশ শতাব্দীর জন্য প্রস্তুত করবে, যে শিক্ষা তাদের চিন্তাশীল মানুষে পরিণত করবে, যে শিক্ষা তাদের রোবটে পরিণত করবে না, যে শিক্ষা তাদের সমাজসচেতন করে তুলবে, মানুষকে ভালোবাসতে শেখাবে, তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে আগ্রহী করবে।
যুবরা চায় একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা। তারা চায় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তারা এর বাস্তবায়নের অংশ হতে চায়। আরও চায় এ লক্ষ্যে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের সুযোগ।
তারা সমাজকে এগিয়ে নিতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা চায় জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) বাস্তবায়ন। উলেল্গখ্য, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে ৮টি সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং ১৮টি সুনির্দিষ্ট টার্গেট অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০ সালকে ভিত্তি করে এসব টার্গেট, একটি ছাড়া, ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ এমডিজি টার্গেটগুলো হলো, ২০১৫ সালের মধ্যে সমাজে দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা; প্রাথমিক স্কুলের ঝরেপড়ার হার শূন্যে নিয়ে আসা; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার বৈষম্য দূর করা; পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা; মাতৃ মৃত্যুহার তিন-চতুর্থাংশ হ্রাস করা; এইচআইভি/এইডস, মিলেনিয়াম ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ করা; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা; নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সংখ্যা নামিয়ে আনা; বস্তিবাসীর জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন অর্জন করা ইত্যাদি।
এমডিজির এসব টার্গেট তাদের ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাই তারা এগুলোর বাস্তবায়নে সহায়তা করতে বিশেষভাবে আগ্রহী। সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ সর্বাধিক। এ কাজে তারা সহায়তা করতে চায় সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী যুবরা মনে করে, শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার। আর শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকরা রাষ্ট্রের মালিকে পরিণত হতে পারে। তারা মনে করে, আজকের বাংলাদেশের সমস্যা মূলত মালিকানার সমস্যা। স্বাধীনতা অর্জনের বহু বছর পরও প্রজার মানসিকতা অনেকে এখনও পরিত্যাগ করতে পারেনি। অধিকার সচেতনতা অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মালিকের আসন থেকে তাদের অনেকে কার্যক্রম গ্রহণ করছে না। তারা বহুলাংশে এক পেট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সাধারণ জনগণের চোখ-কান খোলা রাখা দরকার। আর এজন্য দরকার শিক্ষার প্রসার ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ। তারা মনে করে, দারিদ্র্য আর নিরক্ষরতা দূর না হলে আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কার্যকারিতা লাভ করবে না।
নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজটি তারা জরুরি বলে মনে করে। তারা মনে করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ শুধু অক্ষর-জ্ঞানদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অন্তত সংবাদপত্র পাঠ করার যোগ্যতা অর্জন। তাহলেই নাগরিকরা জানতে এবং বুঝতে পারবে কী ঘটছে ও কেন ঘটছে এবং নাগরিক হিসেবে তারা জেনে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তারা আরও মনে করে, ‘কম্পিউটার লিটারেসি’ নিরক্ষরতা দূরীকরণের অংশ হতে হবে। তা না হলে উন্নত-অনুন্নত দেশের মধ্যে বর্তমানে বিরাজমান ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ দূর হবে না এবং আমরাও সামনে এগোতে পারব না। আর জনগণ সচেতন না হলে গণতন্ত্রও প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করবে না।
যুবরা মনে করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ একটি বড় কাজ। একটি সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমেই তা করতে হবে। এ কাজে স্বেচ্ছাশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, কারণ স্বেচ্ছাশ্রম ছাড়া বড় কোনো কাজ হয় না। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে নিরক্ষরতা দূর করার মতো একটি বড় কাজ করা গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। অর্থের ছড়াছড়ি না করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ইত্যাদি রোধ করা গেলে জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কাজে তারা রাজনৈতিক দল এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর, বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দেখতে চায়। তারা দেখতে চায় কথার পরিবর্তে কাজের রাজনীতির। তারা নিজেরাও এতে অংশগ্রহণ করতে চায় দেশপ্রেম প্রদর্শন করতে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতার ভিত্তিতে। তারা কমিউনিটি সার্ভিসের সুযোগ চায়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, যুবরা তাদের মতামত ও চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের আনুষ্ঠানিক সুযোগ চায়। তারা কথা বলার মাধ্যম চায়। এ লক্ষ্যে তারা চায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। যুবদের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ‘ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ হতে পারে এমনি একটি কাঠামো, যা তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে তারা সোচ্চার হওয়ার এবং তাদের কণ্ঠ অন্যদের শোনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারা সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। কতগুলো সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশব্যাপী একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইয়ুথ পার্লামেন্টের সদস্যপদ প্রদান করা যেতে পারে।
যুবরা আরও দেখতে চায় কর্মসংস্থানের সুযোগ। আমাদের দেশে বেকার ও ছদ্ম বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। তাদের একটি বড় অংশ এই যুবসমাজ। এই বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী বিস্টেম্ফারণোন্মুখ এক বারুদস্তূপের সমতুল্য। তাই এ যুবরা মনে করে, এ সমস্যা সমাধান অতি জরুরি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সরকার যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রায় এক লাখ যুবকের মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে দুই বছর মেয়াদের কর্মসংস্থান হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে নিশ্চিত করতে হবে, এই কর্মসূচির অধীনে যাদের কর্মসংস্থান হবে তারা যেন অর্থবহ কাজের সঙ্গে জড়িত হয় এবং নিজেদের বিকাশের সুযোগ পায়। এছাড়াও কর্মসূচিটি যেন দুর্নীতি ও দলীয়করণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়।
– ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১২ সেপ্টেম্বর ০৯
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, ১৫ বছর বয়সেই যুবত্বের সূচনা হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫-২৪ বছর বয়সের জনগোষ্ঠী যুব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের জাতীয় যুব নীতি ২০০৩ অনুসারে, ১৫-৩৫ বছর বয়স্করা যুব সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের আদমশুমারির তথ্য থেকে ১৫-৩৫ বছর বয়স্কদের সংখ্যা পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৩৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী এ বয়সসীমার মধ্যে পড়ে। আরও ধারণা করা হয়, আমাদের শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশই যুব সম্প্রদায়।
জনসংখ্যা এবং শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশ যুব সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও এ বিরাট জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমাদের ধারণা অত্যন্ত সীমিত। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-ভাবনা ও অনুপ্রেরণার উৎসের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। পরিচিত নই তাদের বিশেষ সমস্যার সঙ্গে। আমরা জানি না তারা কী ভাবছে নিজেদের নিয়ে, সমাজকে নিয়ে এবং জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আমাদের নীতিনির্ধারকরাও তরুণদের নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন বলে মনে হয় না। ফলে রাষ্ট্রীয় নীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হয় না। তারা যে একটি বিরাট সম্পদ এবং জাতিকে সামনে নিয়ে যেতে বিরাট অবদান রাখতে পারে, তার স্বীকৃতি মেলে না। এ অনুভূতি থেকেই কর্মশালাটির আয়োজন।
বাজেট সামনে রেখে অনেক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোতে অনেক দাবি-দাওয়া উত্থাপিত হয়। বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য অনেক জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এ কর্মশালা থেকে তরুণদের জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনো দাবি ওঠেনি। দাবি ওঠেনি কোনো বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের; বরং এতে যুবরা কী করতে পারে এবং কী করবে তা নিয়েই মূলত মতবিনিময় করা হয়।
কর্মশালার আলোচনায় আমার মধ্যে যে উপলব্ধি জেগেছে তা হলো, মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ যুব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে একদিকে যেমন বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, আরেকদিকে ঝুঁকিরও উদ্রেক করেছে। এ বিরাট জনগোষ্ঠীর মেধা ও সৃজনশীলতার যদি পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে, তারা যদি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হয়, তাদের মধ্যে যদি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে তাদের সম্ভাব্য অবদান বাংলাদেশের জন্য একটি অভূতপূর্ব ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করতে পারে। একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ। এ জনগণকে, বিশেষত তরুণদের যদি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, তাহলে অভাবনীয় সফলতা নিয়ে বিশ্বের দরবারে আমরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। এটি সম্ভাবনার দিক।
ঝুঁকির দিক হলো, এ বিরাট জনগোষ্ঠী জনসম্পদে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে যদি তারা বিপথগামী হয়, তারা যদি অর্থবহ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত না হয়, তাহলে সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। সর্বোপরি, জাতি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভয়াবহ আশঙ্কা। তাই যুবদের দিকে আমাদের নীতিনির্ধারকদের গভীর মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
কর্মশালায় আলাপ-আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে, বাজেট একদিক থেকে দেখতে গেলে নিতান্তই একটি করণিকের কাজ; কারণ এটি আগত অর্থবছরের সরকারি খাতে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের ফিরিস্তি। অন্যদিকে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল_ এর মাধ্যমে সরকারের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ঘটে। সরকার কী ধরনের অগ্রাধিকার নির্ণয় করে, তার ওপরই মূলত জনগণের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নির্ভর করে। বাজেটের মাধ্যমে সরকার যদি এমনসব কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় করে যা জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, জনউদ্যোগকে উৎসাহিত করবে এবং সেগুলোকে ফলপ্রসূ করার ব্যাপারে সহায়তা করবে, তাহলেই বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যেমন, বার্ষিকভাবে সরকার স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু যা ব্যয় করে, সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া পরিবারটিও তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে। তাই সরকারের এমন খাতে ব্যয় করা উচিত, যা জনগণের ব্যয়কে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে, যাতে তারা ‘বিগেস্ট ব্যাঙ্গ ফর দেয়ার বাক’ বা অর্থব্যয়ের সর্বোচ্চ প্রতিদান পায়।
মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যদি তারা বিকাশের সুযোগ পায়। আর কর্মশালায় উপস্থিত যুবরা চায় তাদের বিকাশের সুযোগ। তারা চায় শিক্ষার সুযোগ, উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ_ যে শিক্ষা তাদের একবিংশ শতাব্দীর জন্য প্রস্তুত করবে, যে শিক্ষা তাদের চিন্তাশীল মানুষে পরিণত করবে, যে শিক্ষা তাদের রোবটে পরিণত করবে না, যে শিক্ষা তাদের সমাজসচেতন করে তুলবে, মানুষকে ভালোবাসতে শেখাবে, তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে আগ্রহী করবে।
যুবরা চায় একবিংশ শতাব্দীর দক্ষতা। তারা চায় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তারা এর বাস্তবায়নের অংশ হতে চায়। আরও চায় এ লক্ষ্যে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের সুযোগ।
তারা সমাজকে এগিয়ে নিতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা চায় জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) বাস্তবায়ন। উলেল্গখ্য, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে ৮টি সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং ১৮টি সুনির্দিষ্ট টার্গেট অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০ সালকে ভিত্তি করে এসব টার্গেট, একটি ছাড়া, ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ এমডিজি টার্গেটগুলো হলো, ২০১৫ সালের মধ্যে সমাজে দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা; প্রাথমিক স্কুলের ঝরেপড়ার হার শূন্যে নিয়ে আসা; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার বৈষম্য দূর করা; পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা; মাতৃ মৃত্যুহার তিন-চতুর্থাংশ হ্রাস করা; এইচআইভি/এইডস, মিলেনিয়াম ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ করা; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা; নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের সংখ্যা নামিয়ে আনা; বস্তিবাসীর জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন অর্জন করা ইত্যাদি।
এমডিজির এসব টার্গেট তাদের ভবিষ্যৎ জীবন-জীবিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাই তারা এগুলোর বাস্তবায়নে সহায়তা করতে বিশেষভাবে আগ্রহী। সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ সর্বাধিক। এ কাজে তারা সহায়তা করতে চায় সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী যুবরা মনে করে, শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার। আর শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকরা রাষ্ট্রের মালিকে পরিণত হতে পারে। তারা মনে করে, আজকের বাংলাদেশের সমস্যা মূলত মালিকানার সমস্যা। স্বাধীনতা অর্জনের বহু বছর পরও প্রজার মানসিকতা অনেকে এখনও পরিত্যাগ করতে পারেনি। অধিকার সচেতনতা অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মালিকের আসন থেকে তাদের অনেকে কার্যক্রম গ্রহণ করছে না। তারা বহুলাংশে এক পেট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সাধারণ জনগণের চোখ-কান খোলা রাখা দরকার। আর এজন্য দরকার শিক্ষার প্রসার ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ। তারা মনে করে, দারিদ্র্য আর নিরক্ষরতা দূর না হলে আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কার্যকারিতা লাভ করবে না।
নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজটি তারা জরুরি বলে মনে করে। তারা মনে করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ শুধু অক্ষর-জ্ঞানদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অন্তত সংবাদপত্র পাঠ করার যোগ্যতা অর্জন। তাহলেই নাগরিকরা জানতে এবং বুঝতে পারবে কী ঘটছে ও কেন ঘটছে এবং নাগরিক হিসেবে তারা জেনে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তারা আরও মনে করে, ‘কম্পিউটার লিটারেসি’ নিরক্ষরতা দূরীকরণের অংশ হতে হবে। তা না হলে উন্নত-অনুন্নত দেশের মধ্যে বর্তমানে বিরাজমান ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ দূর হবে না এবং আমরাও সামনে এগোতে পারব না। আর জনগণ সচেতন না হলে গণতন্ত্রও প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করবে না।
যুবরা মনে করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ একটি বড় কাজ। একটি সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমেই তা করতে হবে। এ কাজে স্বেচ্ছাশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, কারণ স্বেচ্ছাশ্রম ছাড়া বড় কোনো কাজ হয় না। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে নিরক্ষরতা দূর করার মতো একটি বড় কাজ করা গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। অর্থের ছড়াছড়ি না করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ইত্যাদি রোধ করা গেলে জন্মনিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কাজে তারা রাজনৈতিক দল এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর, বিশেষত ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দেখতে চায়। তারা দেখতে চায় কথার পরিবর্তে কাজের রাজনীতির। তারা নিজেরাও এতে অংশগ্রহণ করতে চায় দেশপ্রেম প্রদর্শন করতে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার মানসিকতার ভিত্তিতে। তারা কমিউনিটি সার্ভিসের সুযোগ চায়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, যুবরা তাদের মতামত ও চিন্তা-ভাবনা প্রকাশের আনুষ্ঠানিক সুযোগ চায়। তারা কথা বলার মাধ্যম চায়। এ লক্ষ্যে তারা চায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। যুবদের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ‘ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ হতে পারে এমনি একটি কাঠামো, যা তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে তারা সোচ্চার হওয়ার এবং তাদের কণ্ঠ অন্যদের শোনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারা সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। কতগুলো সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশব্যাপী একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইয়ুথ পার্লামেন্টের সদস্যপদ প্রদান করা যেতে পারে।
যুবরা আরও দেখতে চায় কর্মসংস্থানের সুযোগ। আমাদের দেশে বেকার ও ছদ্ম বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। তাদের একটি বড় অংশ এই যুবসমাজ। এই বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী বিস্টেম্ফারণোন্মুখ এক বারুদস্তূপের সমতুল্য। তাই এ যুবরা মনে করে, এ সমস্যা সমাধান অতি জরুরি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সরকার যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রায় এক লাখ যুবকের মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে দুই বছর মেয়াদের কর্মসংস্থান হবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে নিশ্চিত করতে হবে, এই কর্মসূচির অধীনে যাদের কর্মসংস্থান হবে তারা যেন অর্থবহ কাজের সঙ্গে জড়িত হয় এবং নিজেদের বিকাশের সুযোগ পায়। এছাড়াও কর্মসূচিটি যেন দুর্নীতি ও দলীয়করণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়।
– ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
সূত্র: দৈনিক সমকাল, ১২ সেপ্টেম্বর ০৯