বদিউল আলম মজুমদার
গণিতবিদ যাদব বাবুর সৃজনশীল ভাবনার বদৌলতে আমরা তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার সমস্যার সঙ্গে পরিচিত। তৈলাক্ত বাঁশে উঠতে গিয়ে বানর এক হাত ওপরে উঠলে, কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি, আবার কোনো ক্ষেত্রে তার কম পিছলিয়ে নিচে নেমে যায়। এ নিয়ে তিনি পাটিগণিতের সমস্যা বানিয়েছিলেন। বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অভিজ্ঞতার গাণিতিক সমস্যা সম্ভবত কল্পনাপ্রসূত−এটি ভাবা দুরূহ যে কেউ বাঁশে তেল মাখিয়ে বানর নিয়ে এমন ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করেছেন। তবে সাম্প্রতিককালে এ ধরনের সামনে এগোনো ও পিছু হটার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সুবাদে। এটি ঘটেছে দলের সংস্কার-প্রক্রিয়ায়।
একটি রাষ্ট্রে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলের বিকল্প নেই। তবে গণতান্ত্রিক, আর্থিকভাবে স্বচ্ছ ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে দায়বদ্ধ রাজনৈতিক দল ছাড়া রাষ্ট্রে গণতন্ত্র কার্যকারিতা লাভ করে না। কিনতু আমাদের মতো অনেক রাষ্ট্রেই রাজনৈতিক দলের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো নীতি ও আদর্শবিবর্জিত সিন্ডিকেটের মতো আচরণ করে। তাই প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের সংস্কার।
রাজনৈতিক দলের সংস্কার নিয়ে অনেক দিন থেকেই বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের দেশে আলাপ-আলোচনা চলে আসছে। এ ক্ষেত্রে একটি বলিষ্ঠ উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে কমিশনের অধীনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেন। দলকে একটি আইনি কাঠামোর আওতায় এনে সদাচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিনতু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে নির্বাচনের আগেই বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের বিধান রহিত ও নিবন্ধন ঐচ্ছিক করে রাষ্ট্রপতি আরেকটি অধ্যাদেশ জারি করেন। ঐচ্ছিক হওয়ার কারণে জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো প্রধান রাজনৈতিক দলই নিবন্ধন করেনি−শুধু দলে বিভক্তিজনিত কারণে নাম নিয়ে বিরোধের ফলে জাতীয় পার্টি কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত হয়। এভাবে ২০০১ সালে আমাদের রাজনৈতিক দলের সংস্কারের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে প্রায় এক ধাপই পিছিয়ে আসতে হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল থেকে নাগরিক সমাজ, বিশেষত ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের লক্ষ্যে বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহায়তায় ব্যাপক জনমতও সৃষ্টি করা হয়। প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাজনৈতিক দলের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন এবং নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা, দলের সব কমিটিতে নারীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ, দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের বিলুপ্তি এবং দলের তৃণমূলের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ইত্যাদি। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ব্যাপক মতবিনিময়ের মাধ্যমে এসব শর্তের বিষয়ে একটি ঐকমত্যে উপনীত হয় এবং পরবর্তী সময়ে এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ (আরপিও) জারি করেন।
অধ্যাদেশের ৯০বি ধারায় অন্তর্ভুক্ত নিবন্ধনের শর্তগুলো হলো: ‘যদি কোন রাজনৈতিক দল…কমিশনের অধীনে নিবন্ধিত হতে চায়, তাহলে তার গঠনতন্ত্রে নিম্নের সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে,−যেমন…৯০বি(১)(খ)(i) কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের নির্বাচিত হবার; (ii) কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটির শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্যপদ নারীদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য এবং এ লক্ষ্যমাত্রা পর্যায়ক্রমে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ অর্জন করবার; (iii) কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অথবা ছাত্র অথবা আর্থিক, বাণিজ্যিক অথবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তা অথবা শ্রমিকদের অথবা অন্য কোন পেশার সদস্যদের নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রাখবার; তবে শর্ত থাকে যে, কোন কিছুই তাদেরকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হবার অথবা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করবার এবং সকল প্রকার গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করবার, এবং ব্যক্তি হিসেবে, বিদ্যমান আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হবার ক্ষেত্রে বাধা হবে না। (iv) কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড কর্তৃক সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ক্ষেত্রমত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা বা জেলা কমিটির দলীয় সদস্যগণের তৈরি প্যানেলের ভিত্তিতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবার।’
এসব শর্ত অমান্য করলে অধ্যাদেশে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অধ্যাদেশের ৯০(জ) ধারা অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশের ৯০(বি)(১)(খ) ধারা লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদ্ধতির মাধ্যমে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত ১৪ দলের পক্ষে ১৫ জুলাই, ২০০৫ তারিখে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা জাতির সামনে একটি ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের রূপরেখা’ উত্থাপন করেন। রূপরেখায় ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা’ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়: ‘(ক) নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহকে গণতান্ত্রিক বিধি-বিধানের ভিত্তিতে পরিচালনা, দলের কর্মকর্তাদের নিয়মিত নির্বাচন, দলের আর্থিক বিবৃতি নির্বাচন কমিশনকে প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।’
আরও উল্লেখ্য যে পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট তাদের ২০০৫ সালের নভেম্বরে পল্টন ময়দান থেকে ঘোষিত ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি’র মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের সংস্কারে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি আবারও ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘১৫ জুলাই ২০০৫ ঘোষিত অভিন্ন রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারসহ কালো টাকা, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে এবং এর মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সময় আওয়ামী লীগ ৯০বি(১)(খ)-এ অন্তর্ভুক্ত শর্তাবলির কোনোটি সম্পর্কেই দ্বিমত করেননি (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী আইনের সংস্কার: রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন, ২০০৮)। উপরনতু, গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন-পরবর্তীকালে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি গুণগত পরিবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, যার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক দলের পরিচালনা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন। তাই এ কথা বিনা দ্বিধায় বলা যায় যে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট রাজনৈতিক দলের সংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জারি করা প্রায় সোয়া শ অধ্যাদেশের মধ্যে যে সীমিত সংখ্যক নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদন লাভ করে, তার মধ্যে আরপিও অন্যতম। তবে অনুমোদনকালে সংসদ এতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে, বিশেষত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে। যদিও নিবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোতে−৯০বি(১)(খ) ধারায়−কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়নি, শর্ত অমান্যের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা চরমভাবে খর্ব করা হয়েছে।
সংসদ অনুমোদিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধিত) আইন, ২০০৯-এর নিবন্ধন বাতিলসম্পর্কিত বিধান, ৯০এইচ, অনুযায়ী, শুধু ৯০বি(২) এবং ৯০বি(৪) উপধারার বিধান লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। ৯০বি(২) ধারাতে বলা আছে, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সদস্য অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে যোগদান করলে, কেবলমাত্র তাহার যোগদানের ফলে ওই দল কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধনের যোগ্যতা অর্জন করবে না।’ যেহেতু কোনো স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য অনিবন্ধিত দলে যোগদান করলে সংশ্লিষ্ট দল নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্যতাই অর্জন করবে না, তাই কোনো নিবন্ধিত দলের পক্ষে এটি ভঙ্গ করার প্রশ্নই ওঠে না। ফলে এটি নিবন্ধন বাতিলের কোনো শর্তই হতে পারে না। অর্থাৎ নিবন্ধন বাতিলের এ বিধান সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আরও আশ্চর্যের বিষয় যে ৯০বি(৪) বলতে কোনো ধারাই আরপিওতে নেই।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধিত) আইন, ২০০৯-এর নিবন্ধন বাতিলসম্পর্কিত বিধান (৯০এইচ) থেকে এটি সুস্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো অমান্য করলেও নির্বাচন কমিশনের কিছু করার থাকবে না। অন্যভাবে বলতে গেলে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা না করলে, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বিলুপ্ত না করলে এবং তৃণমূলের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না করলেও, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না−আইনের মাধ্যমে কমিশনের সে ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে।
অর্থাৎ দলগুলো নিবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ভঙ্গ করলেও এর কোনো ‘কনসিকুয়েন্স’ বা শাস্তির বিধান আর রইল না। ফলে নিবন্ধনের শর্ত মানা না-মানা রাজনৈতিক দলের জন্য এখন বাধ্যতামূলক (directory) না হয়ে ঐচ্ছিক (mandatory) বিষয়ে পরিণত হলো। তাই আমাদের মহান জাতীয় সংসদে পাস করা আইনের মাধ্যমে কমিশনকে দায়বদ্ধতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। বস্তুত কমিশনের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে নেওয়া হলো। পরিণতিতে কমিশন নিতান্তই কাগুজে বাঘে পরিণত হলো। এভাবে আমরা আবারও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের ব্যাপারে যতটুকু এগিয়ে ছিলাম, তার অনেকটাই পিছিয়ে এলাম। নিট অগ্রগতি শুধু, কতগুলো শর্তসাপেক্ষে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাজনৈতিক দলের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন, যদিও দলগুলো শর্তগুলো না মানলে কমিশনের কিছুই করার থাকবে না।
আইনের বিধানের ক্ষেত্রে যতটুকুই বা অগ্রগতি হয়েছে, বিধানগুলো চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রায় আগের অবস্থাতেই আছি। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব আগে যেভাবে নির্ধারিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক কাউন্সিলেও তা-ই ঘটেছে−গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কোনো স্তরের নেতৃত্বই নির্বাচিত হয়নি। কাউন্সিলে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বিলুপ্তির বিধান সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে, বরং অঙ্গসংগঠনকে সহযোগী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করার একটি অনৈতিক খেলায় আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো লিপ্ত হয়েছে। তৃণমূলের কমিটিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলেও, বিএনপি এর প্রতি ভ্রખক্ষেপও করেনি।
পরিশেষে, এটি সুস্পষ্ট যে প্রায় গত এক দশকের রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রচেষ্টা ছিল যেন একটি তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার অভিজ্ঞতারই সমতুল্য। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এবং ক্ষমতাসীনদের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার সত্ত্বেও, আমাদের একমাত্র অর্জন রাজনৈতিক দলের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন, যদিও নিবন্ধনের শর্তগুলো মেনে চলার সদিচ্ছা দলগুলো এ পর্যন্ত প্রদর্শন করেনি এবং এগুলো অমান্য করলে নির্বাচন কমিশনের করারও কিছু থাকবে না। বস্তুত সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি শর্তগুলো মানার ব্যাপারে কোনো আন্তরিক উদ্যোগই নেয়নি। তারা জাতীয় সংসদে পাস করা আইন অমান্য করেছে এবং নিজেদের দেওয়া দলের সংস্কার করার প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করেছে−দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নির্বাচন কমিশনও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যে এ ধরনের আইন অমান্য করা, কথা দিয়ে কথা না রাখা তথা অনৈতিকতা ও পশ্চাৎপদতার পরিণাম অশুভ হতে বাধ্য।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯
দল নিবন্ধন: এ যেন এক তৈলাক্ত বাঁশে ওঠারই অভিজ্ঞতা
Categories: