দারিদ্র্য ও বৈষম্য এবং জাতীয় বাজেট


ড. বদিউল আলম মজুমদার
“যারে তুমি নীচে ফেল,/ সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে।/ পশ্চাতে রাখিছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে/ অজ্ঞানের অন্ধকারে ঢাকিছ যারে,/ তোমার মঙ্গল ঢাকি, গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান/ অপমানে হতে হবে তাদের সমান।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাননীয় উপদেষ্টা তাঁর বাজেট বক্তৃতায় প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং দারিদ্র্য নিরসনের প্রতি অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এসব লক্ষ্য  অর্জনে তিনি দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি দ্রততর করা এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ সার্বিক যোগাযোগ কাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বস্তুত দারিদ্র্য ও বৈষম্য আমাদের পায়ের নিচে টিক টিক করা একটি তাজা বোমার সমতুল্য। প্রস্তাবিত বাজেট দারিদ্র্য ও বৈষম্য, যা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, নিরসনে সম্ভাব্য কী ভূমিকা রাখবে তা মূল্যায়ন করাই বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

দারিদ্র্যের ব্যাপকতা
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সকল সরকারই দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এ লক্ষ্যে অনেক কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। দাতাগোষ্ঠী এ কাজে অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও দারিদ্র্য আমাদের দেশ থেকে নির্মূল হয়ে যায়নি। বরং দারিদ্র্য এখনও আমাদের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী।
আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনামলের অভিজ্ঞতার কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ আয়ের দিক থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। ২০০০ সালে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। অর্থাৎ আমাদের প্রথম দু’টি গণতান্ত্রিক শাসনামলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাৎসরিকভাবে গড়ে প্রায় এক শতাংশ হারে কমেছে। এটি কোনভাবেই একটি বিরাট অর্জন নয়, বিশেষত আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রের তুলনায়।
তবে সাম্প্রতিক, ২০০৮ সাল পূর্ব অভিজ্ঞতা কিছুটা আশাব্যঞ্জক। বর্তমান শতাব্দির প্রথম ৫ বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণহারে কমেছে। ফলে ২০০০ সালের তুলনায় ২০০৫ সালে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৯ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এদের মধ্যে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০০০ সালের ৩৪ শতাংশের তুলনায় এখন হ্রাস পেয়েছে ২৫ শতাংশে। লৰণীয় যে, গত ৫ বছরে শহরের তুলনায় গ্রামীণ দরিদ্রের সংখ্যা কমেছে বেশি হারে, যদিও দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির কারণে ২০০৮ সালে এসে এই সকল অর্জন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে।
১৯৯১-০৫ সময়কালে আয় দারিদ্র্য অপেক্ষাকৃত বেশি হারে কমলেও ক্যালরি গ্রহণের ভিত্তিতে পরিমাপ করা দরিদ্রের সংখ্যার অনুপাত তেমন উল্লেখযোগ্যহারে কমেনি। আমাদের মোট জনসংখ্যার মধ্যে দৈনিক ২১২২ ক্যালরির কম গ্রহণ করা ব্যক্তির হার ১৯৯১-৯২ সালের ৪৭.৫ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ৪০.৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এৰেত্রেও গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসের হার শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি। এছাড়াও ১৯৯১-০৫ সময়কালে মোট জনসংখ্যায় দরিদ্রদের আনুপাতিক হার হ্রাস পেলেও আমাদের সমাজে মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। ১৯৯১-৯২ সালে যেখানে ২১২২ ক্যালরির কম গ্রহণ করা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ৫.১৬ কোটি, সেখানে ১৯৯৫-৯৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫.৫৩ কোটি এবং ২০০০ সালে ৫.৫৮ কোটিতে। ২০০৫ সালে তা বেড়েছে ৫.৬০ কোটিতে, যা বর্তমানে ৭.৫০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে অনেকে আশংকা করছেন। তাই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা ২০১৫ সালের মধ্যে – যে সময়সীমার মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামানোর কথা – আমাদের দেশে দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে বলে মনে হয় না।
দারিদ্র্য নিরসনের ৰেত্রে অতীতে আমাদের উলেস্নখযোগ্য অর্জন থাকলেও, চলতি বছরের দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতির কারণে সে অর্জন বহুলাংশে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)-এর একটি সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ২৫ লৰ পরিবার নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে গেছে। ২০০৫ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী গড়ে একটি পরিবারের সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই হিসাবে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে এক কোটি ২১.২৫ লক্ষ মানুষ। এর ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের হার ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি দুঃসংবাদ।
দরিদ্রদের সংখ্যা ও দারিদ্র্যের হার নির্ণয় করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা সম্পর্কে। প্রথাগতভাবে সে সকল ব্যক্তিকেই ‘দরিদ্র’ বলা হয় যারা তাদের কতগুলো পূর্বনির্ধারিত ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা (যেমন: পুষ্টি, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি) মেটাতে সক্ষম। ন্যূনতম ক্যালরি প্রাপ্তির ভিত্তিতেও দারিদ্র্যের পরিমাপ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের আয় (যেমন: ডলার-এ-ডে, টু ডলার-এ-ডে) করলে মানুষ তার প্রয়োজনীয় ক্যালরি ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সৰম হবে বলে মনে করা হয়। এ সকল সংজ্ঞার মাধ্যমে মানুষের দৈহিক শ্রমশক্তি অৰুণ্ন রাখার ওপরই প্রাধান্য দেয়া হয়, মানুষ হিসেবে তার অন্যান্য চাহিদাকে (যেমন, আত্মমর্যাদাবোধ, সৃষ্টিশীলতা ইত্যাদি) সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। তাও এতে আবার বর্তমান আয়ের মাধ্যমে বর্তমান দৈনিক শ্রমৰমতার স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় – বৃদ্ধ বয়সের আয় ও ভবিষ্যতের দৈনিক শ্রমক্ষমতার স্থিতিশীলতার ওপর নজর দেয়া হয় না। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের এ সকল সনাতন ধারণা মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো অগ্রাহ্য করে মৌলিক দেহ ধারণের চাহিদার ওপরই জোর দেয়, যা নিঃসন্দেহে অমানবিক। অধ্যাপক আনিসুর রহমানের মতে, “এগুলো গরুর দারিদ্র্যের সংজ্ঞা”। কারণ এতে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবা হয় না, বরং গবাদিপশু হিসেবেই গণ্য করা হয়।
গতানুগতিক সংজ্ঞায় আয়ের অভাবই দারিদ্র্য এবং আয় বৃদ্ধিই দারিদ্র্য দূরীকরণের একমাত্র উপায় হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ‘রিসার্চ ইনিসিয়েটিভস্‌ অফ বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সাম্প্রতিক সেমিনারের আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, অস্পৃশ্যতা ও ঘৃণা, সমাজ বিচ্ছিন্নতা, মর্যাদাহীনতা; ভূমি দখল ও বাসস্থান সমস্যা; পেশাচ্যুতি ও জীবিকা সংক্রান্ত সমস্যা; নিরাপত্তাহীনতা ও নারী নির্যাতন; তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চনা, পরিবেশ বিপর্যয়, আইনী সহায়তা না পাওয়া ও বিচারিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া; মানসম্মত শিৰার সুযোগ না পাওয়াও দারিদ্র্যের একইসাথে কারণ ও প্রতিফলন। (“জাতীয় উন্নয়ন নীতি ও বাজেট প্রণয়নে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা” শীর্ষক সেমিনার, ৪ জুন, ২০০৮) দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য জনগণের, বিশেষত সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও অন্যান্য ৰুদ্র জাতিগোষ্ঠির জন্য এই সকল সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। তবে সাথে সাথে তাদের আয়ও বাড়াতে হবে, যার কোন বিকল্প নেই।
এছাড়াও দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক বিষয়। যার স্বল্প আছে, সে বেশি চায় বলেই সে দরিদ্র ভাবে নিজেকে। আর সে বেশি চায়, কারণ অন্যের বেশি আছে – সে অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করে এবং অন্যের সমতুল্য হতে চায়। লৰণীয় যে, মানুষ ছাড়া প্রাণীকুলে দরিদ্র নেই, কারণ তাদের বেশি পাওয়ার আকাঙক্ষা নেই। বস্তুত প্রাণীকুলে একমাত্র মানুষই দরিদ্র হতে পারে।
ক্রমবর্ধমান অসমতা গত দেড় দশকে – বর্তমান বছরের আগ পর্যন্ত – বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুপাত কিছুটা কমলেও, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হয়েছে আরো প্রকট। ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের কারণে বস্তুত আমরা একটি অসম সমাজে পরিণত হচ্ছি। এ অসমতা শুধু আয়ের ৰেত্রেই নয়, এটি সুযোগের ৰেত্রেও বিরাজমান। আর আয় ও সুযোগের বৈষম্যই প্রতিভাত হয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ৰেত্রে। তাই দরিদ্ররা সামাজিকভাবে হয় উপেৰিত এবং রাজনৈতিকভাবে ৰমতাহীন। তাদেরকে সমাজে অনেকটা ‘ভেড়ার পাল’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
গত দেড় দশকে জিনি কোইফিশিয়েন্টের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, জাতীয়ভাবে ১৯৯১-৯২ সালের তুলনায় ২০০০ সালের অসমতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে শেষ পাঁচ বছরে জাতীয়ভাবে অসমতার চিত্র অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে অসমতা কিছুটা বাড়লেও শহরে এ অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে এ সকল তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে তথ্য বিকৃত করার অনেক অভিযোগ রয়েছে।
জিনি কোইফিশিয়েন্ট-এ শেষ ৫ বছরে তেমন কোন অসমতা ধরা না পড়লেও, জাতীয় পর্যায়ে পারিবারিক আয় বন্টনের তথ্য থেকে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। সরকারি তথ্য মতে, আমাদের দেশে ৫ শতাংশ সর্বাধিক ধনী পরিবারের জাতীয় আয়ের শেয়ার ১৯৯১-৯২ সালের ১৮.৮৫ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ২৬.৯৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে দেশের ৫ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের শেয়ার ১.০৩ শতাংশ থেকে ০.৭৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ১৯৯১-৯২ সালে ধনী-দরিদ্রের আয়ের বৈষম্য ছিল যেখানে ১৮ গুণ ২০০৫ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ গুণে। অর্থাৎ আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনামলে আয়ের অসমতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে – এটি একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি।
বাজেটে দারিদ্র্য নিরসনের বরাদ্দ
দারিদ্র্য নিরসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা আগামী অর্থবছরের ৯৯,৯৬২ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ২,১৭১ কোটি টাকা কর্মসংস্থান ও উন্নয়নখাতে ব্যয় করার প্রস্তাব করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় তা হলো ১,১২৫ কোটি টাকা বেশি। এ বরাদ্দ অনুন্নয়ন খাতের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য যে, এ খাতে বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১,৫১১ কোটি এবং সংশোধিত সম্ভাব্য ব্যয় ১,০৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাত থেকে কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৪৬৫ কোটি টাকা কম ব্যয় হবে বলে অর্থ উপদেষ্টা ধারণা করছেন।
মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে, প্রস্তাবিত বাজেটে ১৬,৯৩২ কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রেখেছেন, কর্মসংস্থান কর্মসূচি যার অংশ। আরো বরাদ্দ রেখেছেন ১৩,৬৬৮ কোটি টাকা জ্বালানি, খাদ্য ও কৃষি উপকরণের জন্য ভর্তুকি হিসেবে। এছাড়াও ১০,২৫৩ কোটি টাকা শিৰক ও ডাক্তারদের বেতনখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অনুন্নয়ন বাজেট থেকে এ সকল অর্থ বরাদ্দ হলেও, এগুলো কার্যত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বলে তিনি দাবি করেছেন।
দারিদ্র্য নিরসনে এবং বৈষম্য দূরীকরণে বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি সর্বাধিক ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়। আগত অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের পরিমাণ ২৫,৬০০ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ ছিল ২৬,৫০০ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ২২,৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে- অর্থাৎ সংশোধিত এডিপি প্রস্তাবিত এডিপি’র তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। প্রস্তাবিত এডিপি বিদায়ী অর্থবছরের প্রাক্কলিত এডিপি’র পরিমাণ থেকেও ৩.৪ শতাংশ কম। দশ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ধরে নিলে এ হার দাঁড়াবে ১৩.৩ শতাংশ। প্রস্তাবিত এডিপি, জিডিপি’র ৪.২ শতাংশের সমতুল্য, ১৯৯১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। বস্তুত এডিপি প্রস্তাবিত মোট বাজেটের প্রায় ২৫ শতাংশ, যেখানে নববইয়ের দশকের শুরম্ন থেকে এ অনুপাত ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা বাস্তবায়নের সমস্যার কারণে এডিপি’র বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন যে, প্রতিবছর এডিপি’র প্রায় ২০ শতাংশ ব্যয় হয় না। বিদায়ী অর্থ বছরের বাস্তবায়নের হার আরো হতাশাব্যঞ্জক। অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে মূল এডিপি বরাদ্দের ৪৭ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপি’র ৫৫ শতাংশ মাত্র বাস্তবায়িত হয়েছে।
নিঃসন্দেহে এডিপি বাস্তবায়ন একটি বড় চলমান সমস্যা। তবে মাননীয় উপদেষ্টা মোট বাজেটের পরিমাণ বড় করেও এডিপি’র আকার ছোট করেছেন মূলত জ্বালানি, খাদ্য ও কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তূকি এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। বস্তুত বিরাজমান অথনৈতিক বাস্তবতার নিরীখে প্রস্তাবিত বাজেটকে তিনি সঙ্কট উত্তরণের দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
[লেখক : গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর,
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ]
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ জুন ২০০৮

Related Post

গণতন্ত্র: সংসদকে কার্যকর করতে হলেগণতন্ত্র: সংসদকে কার্যকর করতে হলে

বদিউল আলম মজুমদার সংসদ বা আইনসভা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ধারক বা কেন্দ্রবিন্দু। বস্তুত, সংসদ যতটুকু কার্যকর, গণতন্ত্র ততটুকুই ফলপ্রসূ। আমাদের অষ্টম জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তষ্টি রয়েছে। বিগত

সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন জরুরিসংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন জরুরি

বদিউল আলম মজুমদার একটি সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক শিরোনাম অনুযায়ী, ‘শতাধিক এমপি সরকারের মাথাব্যথার কারণ’ (আমাদের সময়, ২৩ জুলাই ২০১১)। গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে অনেক সংসদ সদস্যের অপকর্মের কাহিনীই এখন জানা যাচ্ছে। অনেকেই