২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ অনুষ্ঠিত হয় আমাদের বহু প্রতীক্ষিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ হয় এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে পারে, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘সুজন’ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। কর্মসূচিসমূহের মধ্যে উলেখযোগ্য ছিল – প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্যের ভিত্তিতে তুলনামূলক চিত্র তৈরী করে তা ভোটারদের মাঝে সরবরাহ, সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে পোস্টারিং-লিফলেটিংসহ বিভিন্নমূখী প্রচারণা, ব্যয় মনিটরিং ও প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা যাচাইপূর্বক অসত্য তথ্য প্রদানকারীসহ আচরণবিধি ভঙ্গকারী প্রাথীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এডভোকেসি, প্রার্থীগণকে এক মঞ্চে এনে ‘জনগণের মুখোমুখি’ (প্রজেকশন মিটিং) করা ইত্যাদি। কর্মসূচিসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ছিল ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান; যার তথ্য নিম্নে প্রদত্ত হলো।
অনুষ্ঠানটিতে একটি নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীগণকে এক মঞ্চে এনে ‘জনগণের মুখোমুখি’ করা হয়। জাতীয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ৯২টি আসনের প্রার্থীগণকে ৮৭টি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘জনগণের মুখোমুখি’ করা হয়। ৮৭টি আসনের মধ্যে ১৭টি অনুষ্ঠান ‘সুজন’ এর একক উদ্যোগে এবং ৭০টি অনুষ্ঠান সুজন, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে হয়েছে। কিছু কিছু অনুষ্ঠানের সঙ্গে সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র), কেয়ার-বাংলাদেশ, ব্রীফ, নারীপক্ষ, স্থানীয় প্রেস ক্লাব, এমনকি উপজেলা প্রশাসনও সম্পৃক্ত ছিল।
অনুষ্ঠানসমূহে প্রার্থীগণ যেমন তাঁদের প্রত্যাশা, পরিকল্পনা ও প্রতিশ্র“তি তুলে ধরেন, অপরদিকে ভোটাররাও বিভিন্ন প্রশ্ন করার সুযোগ পান। প্রার্থীগণের বক্তব্যের পূর্বে তুলনামূলক চিত্রে প্রকাশিত তাঁদের তথ্যসমূহ উপস্থাপন করা হয় এবং ভোটারদের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে জনস্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ‘সুজন’ কর্তৃক প্রণীত অঙ্গীকারনামা পাঠ করে শোনানো হয় এবং একমত পোষণ সাপেক্ষে অঙ্গীকারনামায় প্রার্থীদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। অঙ্গীকারসমূহের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণের পরস্পরের হাত ধরে শপথ বাক্য উচ্চারণ ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। শুধুমাত্র প্রার্থীরাই নন অনুষ্ঠানের আর একটি আকর্ষণ ছিল ভোটারদের শপথ।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ এ, সারা দেশে যে সকল নির্বাচনী এলাকায় মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেগুলো হচ্ছে – পঞ্চগড়-১, ঠাকুরগাঁও-১ ও ৩, দিনাজপুর-১, ৩, ৪ ও ৬, নীলফামারী-২ ও ৪, রংপুর-২ ও ৩, কুড়িগ্রাম-২, গাইবান্ধা-২ ও ৪, জয়পুরহাট-১, বগুড়া-৩, চাপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-২, রাজশাহী-৬, নাটোর-২, সিরাজগঞ্জ-২, পাবনা-৪ ও ৫, মেহেরপুর-১ ও ২, কুষ্টিয়া-৩, চুয়াডাঙ্গা-২, ঝিনাইদহ-২ ও ৩, যশোর-৫, নড়াইল-১ ও ২, বাগেরহাট-২ ও ৩, খুলনা-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২ ও ৩, পটুয়াখালী-৪, বরিশাল-৫, টাঙ্গাইল-১, ৫, ৬, ৭ ও ৮, জামালপুর-১ ও ৫, শেরপুর-৩, ময়মনসিংহ-৪, ৬, ৮ ও ১১, নেত্রকোনা-১, ২, ৩ ও ৪, কিশোরগঞ্জ-১, ২, ৩ ও ৪, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১২, ১৪ ও ১৬, গাজীপুর-২, ৪ ও ৫, নরসিংদী-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২, শরিয়তপুর-১, সিলেট-১, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-১ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩ ও ৪, কুমিল¬া-৯, চাঁদপুর-৩, নোয়াখালী-৪, লক্ষীপুর-৩, চট্টগ্রাম-৮ এবং খাগড়াছড়ি।
উলিখিত মুখোমুখি অনুষ্ঠানসমূহে ‘সুজন’ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, সহ-সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য – এ এস এম শাহজাহান ও সৈয়দ আবুল মকসুদ; জাতীয় কমিটির সদস্য ডা: জাফরুল¬াহ চৌধুরী, অধ্যাপক হান্নানা বেগম, ড. মেহের-ই-খোদা, অধ্যাপক সিকান্দার খান, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সহযোগী সমন্বয়কারী মাহবুব আক্তার প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও সকল এলাকার অনুষ্ঠানসমূহে উপস্থিত থাকাসহ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়-দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ। জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানসহ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সুজন কর্তৃক গৃহীত সকল কার্যক্রম পরিচালনায় মূল উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন ‘সুজন’ এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারীগণ।
অনুষ্ঠানসমূহে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৫৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৩৩ জন, জাতীয় পার্টির ৬ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ১৩ জন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের ১৮ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র ১৫ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১৫ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১৩ জন, গণফোরামের ১২ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৪৩ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ৯ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ৮ জন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এল ডি পি’র ৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি’র ৩ জন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের ৬ জন, জাকের পার্টির ৮ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৮ জন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৭ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির ৪ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৪ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ২ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ২ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ২ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের ১ জন, বাংলাদেশের বিপ¬বী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের ১ জন, গণফ্রন্টের ১ জন, জাতীয় পার্টি- জেপি’র ১ জন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির ১ জন এবং স্বতন্ত্র ২৫ জন, সর্বমোট ৩৩১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
উলেখ্য যে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রার্থীগণের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন মোট ৫৬ জন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ৫১ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ২ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ১ জন নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণের মধ্য থেকে জনাব এ এম এ মুহিত, ডা: দীপু মনি, জনাব রেজাউল করিম হীরা ও জনাব আ ফ ম রুহুল হক মন্ত্রী হিসাবে এবং জনাব তানজিম আহমদ সোহেল তাজ, জনাব মন্নুজান সুফিয়ান ও জনাব আহাদ আলী সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। নবম জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদও জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ ‘জনগণের মুখোমুখি’
Categories: