সুজন, নেত্রকোনা পৌর কমিটির উদ্যোগে ১২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন, দুর্গাপুর, নেত্রকোনায় অনুষ্ঠিত হয় ’নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ। সভায় সভাপতিত্ব করেন সুজন দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি, নেত্রকোনার সভাপতি মতিলাল হাজং। প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন সাইদুল হোসেন আকুঞ্জী, চেয়ারম্যান, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ, নেত্রকোনা। সংলাপে প্রধান আলোচক ছিলেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নূরুল ইসলাম, সম্পাদক, সুজন, দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি, নেত্রকোনা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম; শ্যামলেন্দু পাল, সভাপতি, সুজন, নেত্রকোনা জেলা কমিটি; দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক, মেয়র, মদন পৌরসভা, নেত্রকোনা; অরবিন্দ পাল, সম্পাদক, সুজন, নান্দাইল উপজেলা কমিটি, ময়মনসিংহ; অজয় সাহা, সভাপতি, সুজন, দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি, নেত্রকোনা; গোলাম মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন স্বাধীন, সম্পাদক, সুজন, রংপুর মহানগর কমিটি।
আলোচক হিসেবে অংশ নেন বিশিষ্ট রাজনীতিক দুর্গা প্রসাদ তেওয়ারী; প্রধান শিক্ষক নূরুন্নাহার বেগম; দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল আলম সাজু; প্রধান শিক্ষক ও মিক্ষক সমিতির নেতা এ কে এম ইয়াহিয়া; সুজন জেলা সমন্বযকারী নাজমুল হোসাইন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, দুর্গাপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি দিলদার হোসেন খান; সাবেক পৌর মেয়র কামাল পাশা; সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ হক প্রমুখ।
সুজন সমন্বয়কারী বলেন, নির্বাচনের পূর্ব থেকেই দুর্বৃত্তরা দেশের নানা জায়গায় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ভূক্ত মানুষের ওপর শারীরিক হামলা চালিয়েয়েছে, মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে, প্রতীমা ভাংচুর করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করেছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে; অর্থাৎ তারা সব ধরনের অপকর্মই করেছে। ঘটনার আকষ্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের দূর্ভাগ্য যে, এই সহিংসতা এখনও চলছে অব্যাহতভাবেই। তিনি এর অবসানে উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান উপসি’ত সকলকে।
আলোচনায় বক্তাগণ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে সরকারকেই মূল দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনাকাঙ্ক্ষিত এসকল ঘটনা প্রতিরোধে এগিয়ে এসে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে এ উপলব্ধি আরো জোরালো হয় যে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিসহ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন সকল নাগরিকদের দাঁড়াতে হবে আক্রান-দের পাশে এবং এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের নামে সহিংসতা পরিহার করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি দলকে রাজনৈতিক সংকটের স’ায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসে রাজনৈতিক অসি’রতা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বর্জন করতে হবে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে আপোষ বা অশুভ মৈত্রী গড়ে তোলার চিন-াও।
বক্তাগণ বলেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা এদেশে কারো অনুগ্রহে বসবাস করে না, এটা তাঁদের জন্মগত ও সাংবিধানিক অধিকার। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বৃটিশবিরোধী আন্দোলনসহ এই জনপদের প্রতিটি লড়াই-সংগ্রাম এবং জাতিগত প্রতিটি গৌরবোজ্জ্বল অর্জনে তাঁদেরও অবদান রয়েছে। এই বিষয়গুলো স্মরণ রেখে, আমরা সকলেই যদি স্ব স্ব অবস’ানে থেকে রাষ্ট্র প্রদত্ত, পেশাগত ও নাগরিক দায়-দায়িত্ব, অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে সঠিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হই, তবে সামপ্রদায়িক সহিংসতার মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো আমরা সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবো।
নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় করণীয় শীর্ষক নাগরিক সংলাপ, নেত্রকোনা
Categories: