পাবনার ঘটনার পেছনে তিন কারণ

 

ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র
গত ১৭ সেপ্টেম্বর, পাবনায় অনুষ্ঠিত ন্যক্কারজনক ঘটনাবলী এবং আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে সরকারের গৃহীত পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। এসব আলোচনা-সমালোচনায় একটি সুরই বারবার অনুরণিত হয়েছে- জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, প্রশাসনের মনোবল যেন ভেঙে না যায় এবং তারা যেন সরকারের প্রতি অসহযোগী না হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে যেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বেসামাল আচরণ বন্ধ হয়।

রোগের চিকিৎসা করতে হলে যেমন রোগের কারণ নির্ণয় করা দরকার, তেমনিভাবে পাবনার ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে হলে এর পেছনের কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি। অতএব পাবনার ঘটনাবলীর নেপথ্যের কারণ চিহ্নিত না করলে, তা হবে রোগের পরিবর্তে তার উপসর্গেরই চিকিৎসায় ব্যতিব্যস্ত থাকার শামিল। আমাদের ধারণা, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল করা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হওয়া রোগের উপসর্গ মাত্র।

আমরা মনে করি, পাবনার ঘটনার পেছনে অন্তত তিনটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, সরকারের পক্ষ থেকে ফায়দাতন্ত্রের নগ্ন চর্চা। দ্বিতীয়ত, ফায়দাতন্ত্রকে লালন-পালনের লক্ষ্যে সরকারি ক্রয়নীতির পরিবর্তন। তৃতীয়ত, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সারাদেশে 'এমপিরাজ' প্রতিষ্ঠার অব্যাহত ও আত্মঘাতী অপচেষ্টা।

ফায়দাতন্ত্রের বিস্তার : স্মরণ করা যেতে পারে, গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলে এবং তথাকথিত হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট না হলে কারও পক্ষেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা তথা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এমনি এক প্রেক্ষাপটে, নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের প্রাক্কালে, আওয়ামী লীগ তার দিন বদলের সনদে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল : 'রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা, পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেঃ দলীয়করণমুক্ত ও অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।' এসব অঙ্গীকারে বিশ্বাস করেই জনগণ মহাজোটকে নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে মহাবিজয় উপহার দিয়েছে। প্রসঙ্গত ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচন-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবারও ঘোষণা দেন, তার সরকার হবে সবার, দলবিশেষের নয়, যা দেশবাসীকে দারুণভাবে আশ্বস্ত করেছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা না হয়ে সংযত থাকতে হবে; জনসেবার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নির্বাচন-পরবর্তীকালে মহাজোট সরকার চারদলীয় জোট সরকারের পদাংক অনুসরণ করে একই ধরনের ফায়দাতন্ত্রের চর্চা শুরু করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও মেধাসম্পন্নদের পরিবর্তে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের মাধ্যমে ফায়দাতন্ত্রের চর্চা শুরু হলেও ক্রমাগতভাবে তা সর্বক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং সরকারের নীতিতে পরিণত হয়েছে বলেই মনে হয়। এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, 'ন্যাশনাল সার্ভিস' কর্মসূচির আওতায় প্রতি ঘরে একজন করে মোট ৫০ হাজার ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের জন্য দলীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে আবেদনপত্র গ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য সরকারের দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্রের সীমাহীন প্রয়োগের এ নীতিরই প্রতিফলন।

স্মরণ করা যেতে পারে, গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২০ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত কর্মীদের মধ্য থেকেই ১৩ হাজার ৫০০ জনকে কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। উপদেষ্টা মহোদয় এ কথা অস্বীকার করে সংবাদপত্রে প্রতিবাদ প্রেরণ করলেও, প্রথম আলোর (৬ অক্টোবর ২০১০) রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিডিও টেপে ধারণ করা বক্তব্য থেকে দেখা যায় তিনি বলেছেন, '১৩ হাজার ৫০০ পোস্টেরঃ একটাও যাতে আমাদের দলের বাইরে না হয়, পরীক্ষিত কর্মীরা পায়, সে জন্য আমি মোটামুটি একটা সিস্টেম করেছি। আমি তো আমার অফিসারদের বলে দেব, আমার লোককে চাকরি দিতে হবে।ঃ আমরা আল্লাহর ওয়াস্তে যেন অজু-গোসল কইরাঃ অন্ততপক্ষে যে ক'দিন আছি, চেষ্টা করি।ঃ যদি কিছু নিতে হয়, নিজেদের কর্মীদের কাছ থেকে নিতেঃ।'

ফায়দাতন্ত্রের এমন নগ্ন পৃষ্ঠপোষকতার ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা জন্মানোই স্বাভাবিক যে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও চাকরি-বাকরি একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। তাদের দল ক্ষমতায়, তাই এগুলোর ওপর শুধু তাদেরই অধিকার। সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচনী পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষমতা প্রদান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে অসহযোগিতারই সমতুল্য। বস্তুত পাবনা সদর আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগই উত্থাপন করেছেন। তাই পাবনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা জন্মাতেই পারে যে, পরীক্ষা পণ্ড, সরকারি সম্পত্তি ভাংচুর এবং কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করা তাদের 'দায়িত্ব'। এছাড়া অন্যায় করলেও তাদের কিছুই হবে না। কারণ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা তো অহরহই ঘটছে! ফলে তাদের পক্ষে বেপরোয়া হওয়াই স্বাভাবিক। সুতরাং আমরা মনে করি যে, ফায়দাতন্ত্রের অবসান না ঘটলে পাবনার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো অসম্ভব। এ ব্যাপারে বহুদিন থেকেই আমরা উচ্চকণ্ঠ। (দেখুন, বর্তমান লেখকের উপসম্পাদকীয়, 'গণতন্ত্রের বড় শত্রু ফায়দাতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র' (প্রথম আলো, ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯)।

ক্রয়নীতির পরিবর্তন : ফায়দাতন্ত্র কার্যকর করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সরকারি ক্রয়নীতির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে দুই কোটি টাকা পরিমাণ সরকারি ক্রয়ের জন্য ওপেন টেন্ডার বা খোলা দরপত্রের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কোন পূর্ব অভিজ্ঞতার। এছাড়াও 'কনকারেন্ট পেমেন্ট' বা কাজের সঙ্গে সঙ্গেই মোট ব্যয়ের অধিকাংশ অর্থ ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়।

অতীতেও দলীয় নেতাকর্মীরা সরকারি কাজের জন্য দরপত্র জমা দিত, কিন্তু সে দরপত্র তাদের পক্ষে কোন অভিজ্ঞ ঠিকাদারকে জমা দিতে হতো। তবে কাজটি ঠিকাদারই করত এবং কাজ জুগিয়ে দেয়ার জন্য দলীয় ব্যক্তিটি কিছু পার্সেন্টেজ পেত। সীমিত সংখ্যক নেতাকর্মীই সাধারণত এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতো। এছাড়া যেহেতু কাজটি ঠিকাদারের নামেই বরাদ্দ হতো এবং এর সঙ্গে তার সুনাম এবং ভবিষ্যতে তার নিজের সরকারি কন্ট্রাক্ট পাওয়া জড়িত, তাই এটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে তার কিছুটা হলেও আন্তরিকতা থাকত। ফলে লুটপাটের পরিমাণও অনেক কম ছিল।

যেহেতু বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী নিজেরাই সরাসরি দু'কোটি টাকা মূল্যমানের দরপত্র জমা দিতে পারে, তাই এখন অনেক বেশিসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক দরপত্র জমা দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ফলে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে শৃংখলা রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, বিশেষত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এসব প্রতিযোগীকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের কারণে। পাবনার ঘটনা এমন বিশৃংখলারই প্রতিফলন। উল্লেখ্য, দল এবং দলের লেজুড় সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতাও ফায়দাতন্ত্রেরই বিষফল। যেহেতু অনেক বেশিসংখ্যক ব্যক্তি ফায়দা প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়- অনেক অবাঞ্ছিত ব্যক্তিও ফায়দা প্রাপ্তির আকর্ষণে দলে ভিড় জমায়- এ প্রতিযোগিতা অনেক ক্ষেত্রেই মারামারির রূপ নেয়। স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণেই যা ঘটে। যেমন ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে রেডক্রিসেন্টের ঠিকাদারি নিয়ে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সাম্প্রতিক ইউসুফ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে (যুগান্তর ৯ সেপ্টেন্বর, ২০০৯)। সুতরাং পাবনার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে হলে সরকারি ক্রয়নীতিতে পরিবর্তন আনতে এবং নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে।

প্রসঙ্গত ক্রয়নীতির এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের কারণে সরকারি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অপচয়ের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। আগে অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা কাজে অনেক কম ফাঁকি দিত। কিন্তু বর্তমানে বিশেষত তিন কোটি টাকা পরিমাণের মূল্যমানের কাজের ক্ষেত্রে ফাঁকিই যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর কিছু কাজ যা হয়, তাও অত্যন্ত নিম্নমানের।

এমপিরাজ প্রতিষ্ঠা : চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সংসদ সদস্যদের স্থানীয় উন্নয়ন কাজে ব্যাপকভাবে জড়িত করা হয়। স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সংসদ সদস্যরাই তখন পালন করতেন। ওই সরকারের আমলে 'জেলা মন্ত্রী'র পদও সৃষ্টি করা হয়, যা অবশ্য পরে হাইকোর্ট সংবিধানের পরিপন্থী বলে রায় দেন। ফলে জোট সরকারের আমলে গতানুগতিক প্রশাসনিক কাঠামোর সমান্তরালে এক ধরনের 'এমপি সরকার' গঠিত হয়। সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত এ ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৃণমূল পর্যায়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে এবং এ প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যরা অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যার মাশুল তাদের দিতে হয় চরমভাবে। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচনের আগে 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকে'র উদ্যোগে ৮৭টি নির্বাচনী এলাকায় ভোটার-প্রার্থী মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যার প্রায় সবগুলোতেই চারদলীয় জোট প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করতে সাহস পাননি।

কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইন করেই যেন 'এমপিরাজ' প্রতিষ্ঠা তথা যে কোন মূল্যে এবং সর্বক্ষেত্রে এমপিদের ক্ষমতায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যেমন, উপজেলা আইনে সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা এবং পরিষদের জন্য তাদের পরামর্শ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই সত্যিকারার্থেই পাবনার মতো বিশৃংখলা ও সহিংসতা এড়াতে হলে সংসদ সদস্যদের তাদের সংবিধান নির্ধারিত 'আইন প্রণয়নের' কাজে (অনুচ্ছেদ ৬৫) নিবিষ্ট করতে হবে। উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বনাম বাংলাদেশ মামলার রায়ে [১৬বিএলটি(এইচসিডি)২০০৮] সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সংসদ সদস্যদের স্থানীয় উন্নয়ন ও জনশৃংখলা রক্ষার কাজে জড়িত হওয়া সংবিধানের নগ্ন লংঘন।

পাবনার ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের আজ উদ্বেগ প্রকাশ করার এবং সরকারের ভুল-ভ্রান্তি চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর সময় এসেছে। কারণ মহাজোট সরকার যেন জাতিকে মহাসংকটের দিকে ধাবিত করছে। সময় এসেছে প্রশ্ন করার, যে সব সংসদ সদস্য সব ন্যায়নীতি ও শিষ্টাচারবোধ বিসর্জন দিয়ে গাট বেঁধে 'এমপিরাজ' প্রতিষ্ঠার জন্য নেমেছেন, তারা কি রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যকার বিভাজন অনুধাবন করেন? তারা কি বুঝতে পারেন- প্রশাসন রাষ্ট্রের, দলের নয়? তারা কি জানেন, তাদের গর্হিত কার্যক্রম রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি করছে, সরকারকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এমনকি তাদের দলকেও ধিকৃত করছে? আর নীতি-আদর্শের পরিবর্তে ফায়দা প্রাপ্তির লোভে উন্মত্ত তথাকথিত নেতাকর্মীরা কি দল ও সরকারের জন্য 'এসেট' বা সম্পদ, না লায়াবেলিটি বা দায়? এভাবে 'ক্ষমতা যার, মুলুক তার' প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে দেশ কী শাসনের যোগ্য থাকবে? আর তার পরিণতিই বা কী হবে?

পরিশেষে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেছে। এখন গণতন্ত্রের ভিতকে সুদৃঢ় করার জন্য আমাদের শাসন ব্যবস্থায় অনেকগুলো পরিবর্তন করতে হবে। দিন বদলের সনদের মাধ্যমে এসব পরিবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সত্যিকারের দিন বদল করতে হলে এগুলোর পরিবর্তন অতি জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, মহাজোট সরকারের হাতে এখনও সময় আছে, এসব পরিবর্তন আনার এবং ভবিষ্যৎ বিপর্যয় এড়ানোর।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক

সূত্র: যুগান্তর, ১২ অক্টোবর ২০১০

Related Post

১৮ ডিসেম্বরের নির্বাচন: তারপর কী?১৮ ডিসেম্বরের নির্বাচন: তারপর কী?

ড. বদিউল আলম মজুমদার কল্পনা করুন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং যা হতেই হবে। আওয়ামী লীগে’র নেতৃত্বে গঠিত ‘মহাজোট’ অথবা বিএনপি’র

রাজনীতির গুণগত মান উত্তরণ কোন পথে?রাজনীতির গুণগত মান উত্তরণ কোন পথে?

বদিউল আলম মজুমদার গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা উপজেলা ও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। দেশের আপামর জনসাধারণেরও কামনা, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ গ্রহণেই ১৮ ডিসেম্বর