সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর সংবাদ সম্মেলন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর সংবাদ সম্মেলন


সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স¤পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সুজন-এর পক্ষ থেকে আজ ২৯ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, সকাল ১১:৩০টায়, অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

সুজন-সভাপতি জনাব এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে সুজন সহ-সভাপতি ড. হামিদা হোসেন, স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-স¤পাদক জনাব জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি এম এ মতিন, ড. তোফায়েল আহমেদ, জনাব আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, ড. শাহনাজ হুদা, শফিউদ্দিন আহমেদ, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য জনাব একরাম হোসেন ও সঞ্জীব দ্রং এবং বিভাগীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে ড. এস এম শফিকুল ইসলাম কানু, মনিরুজ্জামান নাসিম, হুমায়ুন ইসলাম তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, যৌক্তিক সমালোচনার যুৎসই জবাব না থাকলে সমালোচনাকারীর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি অপকৌশল। ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যরহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।নির্বাচন কমিশনের সাথে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো স¤পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলোও না। তিনি কমিশন থেকে কখনও কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা । অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কান কথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মাঝে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯,৫০,৬০০ টাকা প্রদান করে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল­া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩,০০,০০০ টাকা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ দু’টি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লক্ষ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দু’টির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে স¤পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ উঠা সম্পূর্ণ অমূলক। অথচ কে এম নূরুল হুদা ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা এখন আইনে অন্তর্ভ‚ক্ত। আইনুযায়ী এসব তথ্য না দিলে কিংবা তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিলে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কথা এবং তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে নির্বাচনও বাতিল হওয়ার কথা। তাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো হলফনামার তথ্যগুলি যাচাই-বাছাই করে দেখা, যাতে হলফনামা সত্যিকারার্থে ‘আমলনামায়’ পরিণত হয়ে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখে, যা করতে নূরুল হুদা কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমতাবস্থায় এসব তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও বিশ্লেষণের জন্য সুজনকে যেখানে বাহবা দেওয়ার কথা, তার পরিবর্তে সিইসি হুদা তাঁর মন্তব্যের দ্বারা আমাদের কাজের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য এবং সুজনের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন। একইসঙ্গে প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁর এবং তাঁর সহকর্মীদের সুস্পষ্ট ধারণার অভাব, যা এসব গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তাদের অযোগ্যতারই পরিচায়ক।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সিইসি হুদা আরও অভিযোগ করেছেন যে, ড. মজুমদার কমিশন থেকে কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করতে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক লোক নিয়ে তাঁর অফিসে হাজির হয়েছেন। তাঁর এ মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই সুজন নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন এবং তা পদ্ধতিগতভাবে এপয়েন্টমেন্ট করেই। একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাছাড়াও ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বৈশাখী টেলিভিশনের আট পর্বের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার যে আবেদন করেন, তাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুজন-এর অনেক নেতৃবৃন্দ ছিলেন স্বাক্ষরকারী। আর এ জন্যই সিইসি হুদার গাত্রদাহ এবং তাঁর অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই Ñ যে কলঙ্ক বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে Ñ তিনি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। সিইসি হুদা নির্বাচন সম্পর্কে ড. মজুমদারের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। তাঁর জানা থাকার কথা যে ড. মজুমদার দেশে-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর শিক্ষকতা করেছেন Ñ তিনি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল প্রফেসর ছিলেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও গবেষক। বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে তিনি এক ডজনের বেশি বই লিখেছেন এবং লিখেছেন বহু বিদেশী জার্নালে অনেক প্রবন্ধ। গত ২০ বছরের অধিককাল ধরে তিনি নির্বাচন নিয়ে কাজ করে আসছেন এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এমনকি আমাদের উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমালোচনার সদুত্তর না থাকলে, কৃতকার্যের কোনো ব্যাখ্যা না থাকলে সমালোচনাকীরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ পন্থা। এটি একটি নিকৃষ্ট পন্থা, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি আশ্চর্য হইনি, পাঁচ বছর তিনি এভাবেই কাটিয়েছেন। তাঁর কৃতকাজের বিচার চেয়ে জন্য আমরা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন করেছিলাম। আজ হোক কাল হোক এজন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে আমার বিশ্বাস।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নূরুল হুদার নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অনেক। রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে। আদালতের রায় আছে- নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ ওঠলে ইসি তদন্ত করতে পারে। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচন বাতিল করতে পারে। কিন্তু তারা কোনটাই করেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরকম একজন খলনায়ককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা এ কথাগুলো উঠিয়ে নিজেদের কথাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন। সুজন কারও কাছ থেকে টাকা নেয় না, চায়ও না। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধেই কুমিল­া ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সুজন তথ্য প্রচারের কাজ করেছেন। যারা নির্বাচন ও ভোটাধিকার নিয়ে কাজ করছেন তাদের অনেক ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয়। আজকাল খুব বেশি মানুষ এতে আগ্রহী হয় না ব্যক্তিগত কাজ ও চাপের কারণে। তাই যেসব মানুষ এসবে এখনও লেগে আছেন, তারা সবার কাছ থেকে একটু সংবেদনশীলতা আশা করতে পারে।

জাকির হোসেন বলেন, সিইসি কথা বলার সময় সামান্য সৌজন্যতাও রক্ষা করেন না। উনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন আমরা জোর করে উনার সাথে দেখে করতে গিয়েছিলাম। অথচ উনি কমিশনে দায়িত্ব নেয়ার পর এপয়েন্টমেন্ট করেই আমরা দেখা করতে গিয়েছিলাম। কতগুলো লোক নিয়ে দেখা করতে এসেছিলেন বলে উনি দেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ প্রদর্শন করেননি।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, কমিশনের কয়েকজন লোক সিইসিকে আর্থিক অনিয়মের কথা বলেছে। শুনার পর তাঁর উচিত ছিল বিষয়টির তদন্ত করা বা দুদকে পাঠানো। কিন্তু সেটা না করে তিনি কানকথা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তাতেই বুঝা যায় এটা অসত্য। জনসমপৃক্ত কাজে নিয়োজিত মানুষদের এচাবে কালিমা লেপন করলে কেউ আর এসব কাজে এগিয়ে আসবে না।

Related Post

‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেবে, এগুলোর ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন- করবে; প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে

‘চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হলেন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হলেন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ নির্বাচনে শুধু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে অন্যান্য যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ থাকে না বলে মন-ব্য করেছেন

‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

গত ৪ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ১০.৩০টায়, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে