সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি প্রশাসন: গতিশীলতার সমস্যা দূর করতে হলে

প্রশাসন: গতিশীলতার সমস্যা দূর করতে হলে

palo_logo
বদিউল আলম মজুমদার
প্রশাসনের কার্যকারিতা ও গতিশীলতার সমস্যা নিয়ে অভিযোগ বহুদিনের। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও ‘কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি’র অধিবেশনে প্রদত্ত সমাপনী ভাষণে (৪ নভেম্বর ১৯৭২) এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে, তাঁরা শাসক নন−তাঁরা সেবক।’ বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও প্রশাসনিক স্থবিরতার অভিযোগ উঠেছে, ‘দিনবদলের সনদ’ বাস্তবায়নের জন্য যা দূর করা অতি জরুরি।

বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অনেকেই প্রশাসনে গতিশীলতার অভাবের জন্য ঘাপটি মেরে থাকা বিগত সরকারের প্রতি অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ী করে থাকেন। তাঁদের মতে, এসব ব্যক্তি বর্তমান সরকারের কর্মসূচিকে ‘স্যাবোটাজ’ বা ভণ্ডুল করছেন এবং ব্যাপক রদবদল করেও এর সমাধান করা যাচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই তা ঘটছে, তবে এটি আমাদের অতীতের ‘পাপে’রই ফসল। অতীতের সরকারগুলোর আমলের প্রশাসনে ক্রমবর্ধমান হারে যে দলীয়করণ হয়েছে, বর্তমান অবস্থা অনেকটা তারই পরিণতি।
প্রশাসনে গতিশীলতার অভাবের একটি বড় কারণ হলো, সমাজে বিরাজমান ব্যাপক দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের সমস্যা এবং সে সমস্যা প্রতিহত করার লক্ষ্যে আরোপিত নতুন নতুন বিধিনিষেধ। এ প্রসঙ্গে একটি পুরোনো গল্পের কথা মনে পড়ে, যা অনেকেরই জানা। এক মহারাজার গোয়ালা দুধে ভেজাল দিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মহারাজা ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেন। তার পরও ভেজাল কমে না, বরং দুধে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তা সমাধানের জন্য পরে আরও ইন্সপেক্টরের নিয়োগ দেওয়া হয়। এভাবে নিয়োগের পর নিয়োগ চলতে থাকে। কিনতু সমস্যার সমাধান হয় না−দুধে ভেজাল দেওয়া বন্ধ হয় না।
আমাদেরও হয়েছে অনেকটা একই রকমের অবস্থা। অনেক কিছুই আমাদের দেশে যথাযথভাবে কাজ করে না। তাই আমরাও কাজ তদারক করার জন্য, অনেক ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য নয়−একের পর এক প্রশাসনিক স্তর সৃষ্টি করে চলছি। একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক ক্ষমতার কেন্দ্র তৈরি করছি। এর মাধ্যমে দায়বদ্ধতার জায়গা ক্রমাগতভাবেই শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ, একই কাজের জন্য বহু ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বহু অথরিটি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এতে কাজের ফলাফলের জন্য কাউকেই সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

দায়বদ্ধতার এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমরা স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার নতুন নতুন বিধিবিধানও আরোপ করছি। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের চাপের কারণে। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ সরকারি ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘পিপিআর’ পদ্ধতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা। সম্পূর্ণ সৎ ও জনকল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য নিয়ে এ বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি করা হলেও এর মাধ্যমে ক্রয় ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেক কার্যক্রমের গতিই শ্লথ হয়ে গেছে, যদিও এর মাধ্যমে দুর্নীতি দূর হয়েছে কি না তা নিয়ে অনেকের মনেই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বস্তুত অনেক ক্ষেত্রে রোগের কারণ চিহ্নিত না করে, রোগের উপসর্গের চিকিৎসা নিয়ে আমরা ব্যস্ত।
মহারাজা ও তাঁর গোয়ালার রূপক গল্পটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। মহারাজা বিশ্বাস করে খাঁটি দুধ সরবরাহের জন্য গোয়ালা নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্বাস ভঙ্গ করে দুধে ভেজাল দেওয়ার জন্য তিনি গোয়ালার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারতেন, তিনি তাকে বরখাস্ত করতে পারতেন। কিনতু গোয়ালাকে দায়বদ্ধ না করে তিনি আরেকটি কতৃপক্ষের সৃষ্টি করলেন। এতে সমস্যার সমাধান না হয়ে তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।
দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরও বিশ্বাসভিত্তিক পদ্ধতির দিকে যেতে হবে। বিভিন্ন কার্যক্রমের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করতে হবে। তাঁদের জন্য ‘পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া’ বা সফলতার সূচক নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও দায়দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে তাঁরা সফল হতে পারেন। তাহলেই প্রশাসনে গতিশীলতা আসবে। আর সফল হলে তাঁদের স্বীকৃতি দিতে হবে, বিফল হলে দায়বদ্ধতার কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। অনিয়ম ও অসদাচরণে লিপ্ত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ কার্যকর পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তবে শাস্তি হতে হবে ত্বরিত। কারণ, বিলম্বিত বিচার অবিচারেরই শামিল।
দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং অনিয়মের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি বড় বাধা হলো দলীয়করণ। আরও নগ্নভাবে বলতে গেলে দলবাজি। দুর্ভাগ্যবশত গত দেড় দশকের নির্বাচিত সরকারের আমলের একটি বড় অবদান হলো, সমাজের সব স্তরে দলবাজির ব্যাপক বিস্তার। যাঁরা স্বচ্ছ প্রতিযোগিতায় সফল হতে পারেন না, সেসব অযোগ্য-অদক্ষ ব্যক্তিই সাধারণত দলবাজিতে লিপ্ত হন। ফলে মেধাবীরা বহু ক্ষেত্রে বঞ্চিত হন এবং অযোগ্যরা ক্ষমতায়িত হন। এমতাবস্থায় প্রশাসনে গতিশীলতা আনা অতি দুরূহ। কারণ, এভাবে প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে যায়।
প্রশাসনে গতিশীলতা আনার পথে আরেকটি বড় বাধা হলো আমাদের তদবিরের সংস্কৃতি। সরকারের বা ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা, জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের কাছাকাছি অবস্থানকারী ব্যক্তিরাই সাধারণত এ অপসংস্কৃতির অংশ। তদবিরের মাধ্যমে ‘নিজেদের লোকদের’ ফায়দা প্রদান করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ‘তদবির বাণিজ্যে’র অভিযোগও শোনা যায়।
অনেক পেশায় তদবিরের মাধ্যমেই নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শাস্তি প্রদান ইত্যাদি নির্ধারিত হয়। দল ও দলের অঙ্গসংগঠনগুলো সাধারণত এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। যেমন, চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ব্যাপক। দলীয় নেতা-নেত্রী কিংবা অঙ্গসংগঠনগুলো এতে সম্পৃক্ত থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে আজ তদবির এড়ানো প্রায় অসম্ভব। ফলে তদবিরের ‘মামা’ না থাকায় অনেক মেধাবী কর্মকর্তা তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যোগ্য ও দক্ষদেরও আজ তদবিরকারী খুঁজতে হচ্ছে।

সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সরকারি সেবা জনগণের কাছে সহজপ্রাপ্য ও সহজলভ্য করা এবং তা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। এর মাধ্যমে তাঁরা জনগণের প্রতি করুণা প্রদর্শন করেন না, বরং নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় দেড় দশক আগে এক সরকারি কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে সচিব হিসেবে কর্মরত, আমাকে বলেছিলেন, তিনি বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা পেয়ে থাকেন, তা সাধারণ মানুষের অর্থ ব্যয়ে এবং তাদের সেবা প্রদানের সুবিধার্থে। তাই তাঁর কর্তব্য গ্রামের ‘লুঙ্গিপরা’ মানুষটির কাজ সম্পূর্ণ সততা, নিষ্ঠা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদন করা। দলবাজি, ফায়দাবাজি ও পক্ষপাতিত্বপরায়ণতার কারণে এ ধরনের ‘সেন্স অব পাবলিক সার্ভিস’ বা জনসেবার মানসিকতা যেন দিন দিন লোপ পাচ্ছে। বস্তুত কর্মকর্তাদের বড় অংশের মধ্যে আজ ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে। আরও বিরাজ করছে ক্ষমতাসীনদের ‘আপন লোক’ হওয়ার এবং অন্যদের ল্যাং মারার এক অশুভ প্রতিযোগিতা।
প্রশাসনে গতিশীলতার সমস্যার আরেকটি বড় কারণ হলো, কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের ভয়ভীতি। তদবির ছাড়াও সাম্প্রতিককালে ‘নাম ভাঙানো’র আরেকটি অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ কোনো সরকারি সেবা পেতে হলে সাধারণত কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির নাম ব্যবহার করা হয়, ‘আমি অমুকের অমুক, আমাকে অমুক ব্যক্তি পাঠিয়েছেন’ ইত্যাদি। এর একটি বড় কারণ হলো, উৎকোচের বিনিময় বা তদবির ছাড়া এখন প্রায় কোনো কাজই হয় না। নাম ভাঙানো অবশ্য তদবিরের চেয়ে কম কার্যকর। তবুও অন্যায় আবদার নিয়ে নাম ভাঙানো হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ক্ষমতাধরদের রোষানলে পড়ার ভয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। ফলে অবিচারের আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার সমস্যাও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পথে এটি একটি বড় বাধা।
প্রশাসনে গতিশীলতার সমস্যার আরও কতগুলো মৌলিক কারণ রয়েছে। একটি কারণ হলো, আমাদের ঘুণে ধরা আমলাতন্ত্র। আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ছিল ব্রিটিশদের পক্ষে একটি বড় ধরনের উদ্ভাবন। যেমন, এ কাঠামো ব্যবহার করে ব্রিটিশরা সীমিতসংখ্যক আমলা দিয়ে গোটা ভারতবর্ষ শাসন করতে পেরেছিল। ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য এ কাঠামো অত্যন্ত উপযোগী হলেও একটি স্বাধীন দেশের জন্য এটির যথার্থতা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। বস্তুত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকারব্যবস্থায় ব্যবহারের জন্য আমলাতান্ত্রিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা দরকার। এ ছাড়া বহুভাবে অপব্যবহারের কারণে আমাদের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আজ অনেক কাজ করে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয় এবং এগুলো অনেক ক্ষেত্রে জনগণের অযথা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি এগুলোর মাধ্যমে অবিচারও করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাজউক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত কোনো জমির মালিক তা হস্তান্তর করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। এ নিয়ে অকারণে সময়ক্ষেপণ হয় ও বহু সমস্যা দেখা দেয়, যার মাশুল জনগণকে গুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে মালিকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করাই যথেষ্ট। এভাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ব্যাপক। তাই প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বা স্তরের পুনর্বিন্যাস করার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রও কমাতে হবে। অকারণে সৃষ্ট প্রশাসনিক জটিলতার গিট্টু খুলতে হবে। তা না হলে প্রশাসনে গতিশীলতা আসবে না, বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটবে না এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও চাঙা হবে না।
প্রশাসনে গতিশীলতার সমস্যার আরেকটি বড় কারণ হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রিকতা। এ সমস্যা আমাদের দেশে দিন দিন প্রকট হচ্ছে। যেসব সিদ্ধান্ত আগে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিতেন, তা এখন সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গ্রহণ করতে হয়। এমনকি অনেক ক্ষুদ্র সিদ্ধান্তের জন্যও এখন সরকারপ্রধানের সম্মতির প্রয়োজন হয়। ঐতিহাসিক আর্থার স্লেসিনজার অনেক দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইম্পেরিয়াল প্রেসিডেন্সি’ বা রাজকীয় রাষ্ট্রপতি গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। আমাদের দেশে নিরঙ্কুশ দলীয় ও সরকারি ক্ষমতা ক্রমাগতভাবে এক হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় আমরাও রাজকীয় প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বলে অনেকের আশঙ্কা। প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে হলে একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি তাই আজ অতি জরুরি। জরুরি স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মাধ্যমে এডিপি বাস্তবায়নসহ অনেক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গতিশীলতা আসবে।
প্রশাসনে গতিশীলতার সমস্যার আরেকটি বড় কারণ হলো, মন্ত্রিপরিষদের কিছু কিছু সদস্যের অযোগ্যতা। যোগ্যতার পরিবর্তে ব্যক্তিগত আনুগত্য মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ব্যাপারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকের অভিযোগ। এক টিম হিসেবে কাজ করার জন্য আনুগত্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিনতু তা যোগ্যতা ও পেশাদারিত্বের মাপকাঠিকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশের স্লোগান এবং অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতাভিত্তিক রাজনীতিতে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব সৃষ্টির তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্য তাঁদের নেতা-কর্মর্দের দ্বারা এত বেশি পরিবেষ্ঠিত থাকেন যে তাঁদের পক্ষে কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করাও দুরূহ হয়ে পড়ে। দল ক্রমাগতভাবে সরকার কর্তৃক, প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার ভাষায়, ‘গলাধঃকরণের কারণে’ এ সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের চাপে তাঁদের তদবিরেও অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।
পরিশেষে, এটি সুস্পষ্ট যে দিনবদলের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রশাসনে গতিশীলতা আনা আজ অতীব জরুরি। এ জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে কিছু আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (যেমন, অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবস্থাপনা) কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রথম আলোয় (২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯) প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আমি এমন একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছিলাম। ‘সিটিজেনস চার্টার’ পদ্ধতির কার্যকর প্রয়োগও এ ব্যাপারে সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদিভাবে আমাদের দলবাজি, ফায়দাবাজি ও তদবিরের সংস্কৃতি পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আরও মনোনিবেশ করতে হবে কতগুলো মৌলিক বিষয়ের প্রতি, প্রশাসনিকসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও দুর্নীতির নির্মূলকরণ যার অন্যতম।
বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২২ আগষ্ট ২০০৯

Related Post

সুশাসন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদসুশাসন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

বদিউল আলম মজুমদার গত ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সব পর্যবেক্ষকের মতে নির্বাচনটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যদিও মাঝরাতে ভোট গণনা নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর

সরকার ও বিশ্বব্যাংক: পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির পরিণতিসরকার ও বিশ্বব্যাংক: পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির পরিণতি

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ১৩-০৭-২০১২ পদ্মা সেতু নিয়ে যা হলো তার পরিণতি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। পদ্মা সেতু নির্মিত না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই,

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন বিতর্কতত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন বিতর্ক

গণতন্ত্র বদিউল আলম মজুমদার কয়েক মাস থেকে শোনা যাচ্ছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে আগ্রহী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে আলাপ-আলোচনাও চলে আসছে। প্রথম আলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন (২ সেপ্টেম্বর