সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘প্রসঙ্গ জেলা পরিষদ আইন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘প্রসঙ্গ জেলা পরিষদ আইন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

????????????????????????????????????

বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ, শক্তিশালী, যুগোপযোগী ও কার্যকর জেলা পরিষদ গঠনের জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানিয়েছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর নেতৃবৃন্দ। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১.০০টায়, রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত ‘প্রসঙ্গ জেলা পরিষদ আইন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জনাব জাকির জোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ. ড. তোফায়েল আহমেদ এবং সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘২০১৬ সালের মধ্যে জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানাই। বর্তমানে যে আইনটি রয়েছে এতে তিনটি ত্রুটি রয়েছে। প্রথম ত্রুটিটি হলো, এ পদ্ধতিতে জনসাধারণ সরাসরি ভোট দিতে পারবেন না। ভোট দেবে নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যগণ। প্রত্যেকটি জেলায় ১৫টি ওয়ার্ড থাকবে। এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ব্যতিক্রম। এখানে সংবিধানের মূল চেতনা মানা হচ্ছে না। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথেও যায় না, সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক। আরেকটি ত্র“টি হলো, সংবিধানের আওতায় সংসদ যা খুশি তাই করতে পারে, সংবিধানের বাইরে নয়। কিন্তু এ আইনে জেলা পরিষদ কী  কী কাজ করবে তা সুস্পষ্ট করা হয়নি। সেখানেই সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেননা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে সরকারের ১৩টি হস্তান্তরিত বিভাগ রয়েছে, উপজেলাতেই ১৭টি বিভাগ রয়েছে, কিন্তু জেলা পরিষদে তা করা হয়নি। এছাড়াও, আমাদের সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে ‘প্রশাসন ও সরকারি কর্মচারীদের কার্য’ সম্পর্কিত দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের ওপর ন্যস্ত থাকা সত্ত্বেও, জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের সঙ্গে ডিসি/এসপিসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কী ধরনের সম্পর্ক হবে তা এ আইনে কিছুই বলা নেই। তৃতীয়ত, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধীনেই কর্মকর্তারা কাজ করে থাকেন। সংশোধিত আইনেও সংসদ সদস্যদেরকে জেলা পরিষদের উপদেষ্টা করার বিধান অব্যাহত রয়েছে। আমরা জানি যে, সংসদ সদস্যদের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ কাজ করতে পারছে না, সেখানে আবার জেলা পরিষদেও সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করাটি ঠিক হয়নি। এটি আইনের আরেকটি বড় ত্রুটি।’

তিনি সরকারের নিকট তিনটি প্রস্তাব পেশ করে বলেন, ‘বর্তমান আইনটি থেকে ইলেক্টোরাল কলেজ (নির্বাচকমণ্ডলী) পদ্ধতি বাদ দিতে হবে। এলাকা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা পরিষদকে ওয়ার্ডে বিভক্ত করতে হবে। জনগণের সরাসরি নির্বাচনের অধিকার দিতে হবে। সংবিধানের ৫২ (২) এবং ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা পরিষদকে কাজ দিতে হবে এবং সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা করার বিধান বাতিল করতে হবে।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সবগুলো সরকারই অতীতে সংবিধান লঙ্ঘন করে এসেছে। বর্তমান সরকার যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমরা আনন্দিত এবং সরকারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু সরকার আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালে পাশ করা জেলা পরিষদ আইনকেই সংশোধন করে পুনঃপ্রচলন করছে। আইনের পুনঃপ্রচলন দোষের কিছু নয় সেই আইন যদি যুগোপযোগী হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আগের জেলা পরিষদ আইনটি ছিল ধারণাগতভাবে পশ্চাৎপদ এবং মূলত মান্ধাতার আমলের চিন্তা-চেতনার সন্নিবেশন। এটি ছিল অনেকটা আইউব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্রে’র আদলে গড়া।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র’, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ‘শাসন’ প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচিত সরকারের পাশাপাশি জেলায় নির্বাচিত জেলা পরিষদ, উপজেলায় নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়নে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহরে নির্বাচিত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নিজ নিজ এলাকায় শাসনকার্য পরিচালনা করবে।’ এ সময় তিনি জেলা পরিষদেও সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানান। এছাড়া তিনি জনসংখ্যা অনুযায়ী জেলা পরিষদকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভাগ করা, নারীদের জন্য জন্য ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি প্রবর্তন করা এবং হলফনামার মাধ্যমে জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা আইনে সংযোজনের দাবি জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত সব ধাপই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হবে সেটাই আমাদের সংবিধানে বর্ণিত আছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার যে আইন অনুমোদন দিয়েছে সেই আইনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কতটা প্রতিফতি হবে সে ব্যাপারে আমাদের সংশয় রয়েছে। কেননা প্রত্যেক সরকার দলীয় স্বার্থে স্থানীয় সরকারকে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আমরা জনগণের সরকারের পরিবর্তে দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আমরা মনে করি, অনুমোদিত জেলা পরিষদ আইনটি সংবিধানের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। আর তাই অধ্যাদেশ বা মূল আইন করারর আগে সরকারের প্রতি আইনটি পুনরায় মূল্যায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।’

মূল প্রবন্ধ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Related Post

সুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি’ বলে

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানসুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২১ মার্চ,

‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

উপজেলা নির্বাচনে দলভিত্তিক প্রার্থী মনোনয়ন বা সমর্থন প্রদান, চাপ সৃষ্টি করে কোন প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ