সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক Uncategorized 'বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

'বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Press conference 01.11.13প্রধান দু’টি দলের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আজ সকাল ১১টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান, সহ-সভাপতি জনাব এস এম শাহজাহান, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সৈয়দ আবুল মকসুদ, জনাব ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. তোফায়েল আহমেদ, সহসম্পাদক জনাব জাকির হোসেন ও সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবার অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথের বাধা দূর করার জন্য আমাদের প্রধান দু’টি দলের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া আবশ্যক। এ লক্ষ্যে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই দু’টি বিকল্পের কথা ভাবা যেতে পারে।

প্রথমত, মহাজোটের পাঁচজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য, ১৮-দলীয় জোটের পাঁচ জন সংসদ সদস্য ও একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে (যিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) নিয়ে অন-র্বতীর্কালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আমাদের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতিগণকে নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ওই কমিটিকে শর্তসাপেক্ষে এই ১১ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শর্তটি হবে যে, অন-র্বর্তীকালীন সরকারের কোন সদস্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা নির্বাচনী প্রচারণায় লিপ্ত হতে পারবেন না। প্রসঙ্গত, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রেখে দলীয় ব্যক্তিদেরকে নিয়ে অন-র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে সে সরকার সম্পূর্ণ অকার্যকর হবে বলে আমাদের আশঙ্কা।

দ্বিতীয়ত, মহাজোটের পাঁচ জন সংসদ সদস্য, ১৮-দলীয় জোটের পাঁচ জন সংসদ সদস্য এবং দল নিরপেক্ষ পাঁচ জন ব্যক্তির (তাদের একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) সমন্বয়ে অন-র্বতীর্কালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও সাবেক প্রধান বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ওপর এই ১৫ জনকে চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এ বিকল্পের ক্ষেত্রেও অন-র্বর্তীকালীন সরকারের কোন সদস্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা নির্বাচনী প্রচারণায় লিপ্ত হতে পারবে না। এ বিকল্পের ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দলীয় ব্যক্তিদের উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করে আনতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই অন-বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন এবং নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার বাইরে সরকারের রুটিন কার্যক্রমের মধ্যে নিজেদের তাঁরা সীমাবদ্ধ রাখবেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অসি’রতার স’ায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি যে, স’ায়ী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে আমাদের দুই প্রধান দলের বাইরেও বৃহত্তর পরিসরে সংলাপ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়িক সমপ্রদায়, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ সংলাপে অংশ নিতে পারেন। সংলাপের মাধ্যমে নব্বইয়ের তিন জোটের রুপরেখার আদলে, মোটা দাগে তিনটি ক্ষেত্রে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে এবং এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে। ঐকমত্যের প্রথম ক্ষেত্রটি হবে – সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস’া উদ্ভাবন। এটি হবে ‘নির্বাচন-পূর্ব’ ঐকমত্যের ক্ষেত্র। ঐকমত্যের দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হবে ‘নির্বাচনকালীন’ সময়ের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন, যা সবাই মেনে চলবে। এটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে নব্বইয়ের তিন জোটের রুপরেখায় অন-র্ভুক্ত আচরণবিধিটি কাজে লাগানো যেতে পারে। ঐকমত্যের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হতে হবে ‘নির্বাচন-পরবর্তী’ সময়ে নির্বাচনকালীন সরকারের করণীয় সম্পর্কিত।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা থাকলেও, কমিশন যেন তা প্রয়োগে অনিচ্ছুক। গত কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন’ কমিশন কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস’া নিয়েছে বলে আমরা শুনিনি।

জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, দেশের পরিসি’তি অত্যন- সংকটময়। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনও বিতর্কিত হচ্ছে তাদের কার্যকলাপ দ্বারা। তারা এখানো পর্যন- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি, যা দু:খজনক। তারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী কারো সাথে অলাপ-আলোচনা না করেই করলো। সমাধান ও সমঝোতার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না বলে মন-ব্য করে জনাব এ এস এম শাহজাহান বলেন, ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না, আর সংলাপ যদি সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে তা আরো উদ্বেগজনক। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমরা সকলেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। কিন’ যে অবস’া তাতে মনে হচ্ছে অবাধ কারচুপির একটা ব্যবস’া চলছে। সরকার যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস’া চলছে। জনাব জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, না ভোটের বিধান প্রর্বতন খুবই জরুরি। নির্বাচনে যেই পরাজিত হোক না কেন সেই দলকে অবশ্যই সংসদে যেতে হবে। প্রয়োজনে তারা সংসদে যেয়ে বারবার ওয়াকআউট করুক। তিনি আরো বলেন, বিচারপতিরাও মানুষ, তারা লোভ-লালষার উর্ধ্বে নয়। তাই তাদেরকেও প্রতি বছর আয়কর বিবরণী প্রদানের বিধান করতে হবে। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদেরকে প্রবন্ধে উল্লেখিত নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করতে হবে। এব্যাপারে নাগরিকদের সক্রিয়তা অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন-ব্য করেন ।

Related Post

রংপুরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন:নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব শীর্ষক কর্মশালারংপুরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন:নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব শীর্ষক কর্মশালা

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে, তা নিয়ে দেশের বৃহৎ দুটি দল ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনিশ্চয়তার মুখে। আওয়ামী লীগ এবং তাদের ১৪ দলীয় জোট বলছে সর্বদলীয়

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনঃ মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠাননারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনঃ মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে ‌সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গত রবিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কের মুক্তমঞ্চে “জনগণের মুখোমুখি” অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করণীয়গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করণীয়

ড. বদিউল আলম মজুমদার গত ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। নবগঠিত সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যান্ডেট হলো রাষ্ট্রে একটি কার্যকর