সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আয় বাড়া সংবিধান সম্মত নয়: সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ

মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আয় বাড়া সংবিধান সম্মত নয়: সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ

_DSC0129

’সংবিধানে সরকারের মন্ত্রীসহ বিশেষ আটটি পদে আসীন ব্যক্তিগণের ক্ষেত্রে বেতন ছাড়া অন্যান্য আয় অর্জন নিষেধ করা হয়েছে। অথচ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট প্রার্থীগণ ব্যবসাসহ অন্যান্য উদ্যোগের সাথে জড়িত থেকে তাদের সম্পদ অনেক গুন বাড়িয়েছেন, যা সংবিধান সম্মত নয়।’ আজ সকাল (২৭ ডিসেম্বর ২০১৩) ১১.০০টায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি ২০১৪, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে ১১০৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও বাতিলের পর সর্বমোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪১ জন। কিন্তু ১৫৪টি আসনে একজন করে প্রার্থী থাকায় বাকী ১৪৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৮৭ জন প্রার্থী। এ নির্বাচনে প্রার্থীগণ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে আট ধরনের তথ্য স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। ‘সুজন’-এর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার তথা বাক স্বাধীনতার অংশ হিসাবেই বিষয়টি আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সর্বমোট ৪৮ জন প্রার্থীর আয় গড়ে ৫৮২% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির হার মাননীয় মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৩%, মাননীয় প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ৪৬৪% এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা, চীফ হুইপ, হুইপদের ক্ষেত্রে ৩০৭১%। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পীকারের আয় বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১৩৬% ও ৪৪৩৫%। প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সর্বমোট ৪৮ জন প্রার্থীর সম্পদ গড়ে ৩৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির হার মাননীয় মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৭%, মাননীয় প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ৪৫৯% এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা, চীফ হুইপ, হুইপদের ক্ষেত্রে ১৬৮৯%। প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ ৪৬% এবং ডেপুটি স্পীকারের সম্পদ ২৩৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই বর্তমানে ঋণ গ্রহীতা। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় সকলেই আয়করের আওতাভূক্ত হলেও ১২ জন (২৫%) প্রার্থীর আয়কর সংক্রান্ত কোন কাগজ-পত্র পাওয়া যায়নি।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘৫ জানুয়ারি ২০১৪-এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি  প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন। গুটিকয়েক রাজনৈতিক দল ও স্বল্প সংখ্য প্রার্থী নিয়ে এই নির্বাচন। ফলে এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যেও তেমন আগ্রহ নেই। তারপরেও আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী কিছু প্রার্থীর তথ্য গণমাধ্যমের সহায়তায় ভোটারদের মাঝে প্রকাশ করছি। আশা করি এই সংবাদ সম্মেলন প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটাদের জানা-বুঝার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানের ১৪৭ (৪) ধারায় বর্ণিত সরকারের মন্ত্রীসহ ৮টি পদে যারা আসীন আছেন, তাদের বেতন ছাড়া অন্যান্য আয় অর্জন নিষেধ এবং কোনো লাভজনক পদে আসীন হতে পারবেন না। তাদের বেতন সংসদ কর্তৃক নির্ধারণ করা আছে। তারা  উক্ত দায়িত্বে আসীন হওয়ার পূর্বে কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগে অংশীদার থাকলে পদে আসীন হওয়ার পর তার দায়িত্ব অন্য কারও কাছে    হস্তান্তর করবেন। অথচ আমরা দেখছি যে, গত পাঁচ বছরে আমাদের অনেক মন্ত্রী এবং সাংসদ ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথে জড়িত থেকে তাদের সম্পদ অনেক গুন বাড়িয়েছেন, যা সংবিধান সম্মত নয়।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রার্থীদের অনেকেই মৎস খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন, এর কারণ হলো এ খাতে করের পরিমাণ মাত্র তিন শতাংশ। তাই আসলেই তাদের মৎস খামার আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা দরকার। আরেকটি বিষয় হলো Ñ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হতে পারবেন না। অথচ প্রার্থীদের অনেকের হলফনামায় দেখা গেছে, তারা এর বেশি পরিমাণ সম্পদের মালিক। এক্ষেত্রে সরকার এখন কি পদক্ষেপ নেয়, তা হবে দেখার বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আপত্তি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ আপত্তি আমলে নিয়েছে। এ সংবাদে আমরা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার যাতে ক্ষুণœ না হতে পারে সে জন্য নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে।’

প্রতিবেদক: নেসার আমিন, সুজন সচিবালয়।

Related Post

‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরাজমান সংকট নিরসনে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদকে নিয়ে অনৈতিক খেলা থেকে বিরত থেকে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন বলে মন-ব্য করেছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ সকাল ১১টায়,

‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন: বিজয়ীগণের তথ্য উপস্থাপন ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন: বিজয়ীগণের তথ্য উপস্থাপন ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। একইসাথে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুজন নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশন-সহ সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী

‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (তৃতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (তৃতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দুই পর্বের নির্বাচনেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অনিয়ম ও কারচুপিও হলেও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সংষর্ষ, মৃত্যু, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা বেশি ঘটেছে এবং নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে