মুহিতের মোহিতকরণ বাজেট

jugantor_logo
অ ধ্যা প ক মো জা ফ ফ র আ হ ম দ
নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে এবং কৌশল হিসেবে মজুদদারি ও মুনাফাখোরির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। বাজেটে এ সম্পর্কে কোন বক্তব্য নেই। দ্রব্যমূল্য কমাতে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতকে সঙ্গত কারণেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
বাজেট নানাভাবে বিবেচিত হতে পারে। যারা এটাকে মূলত অর্থনৈতিক দলিল হিসেবে বিবেচনা করেন, তাদের জন্য বিবেচনার বিষয় প্রবৃদ্ধি ছাড়াও ডিস্ট্রিবিউশনাল এন্ড এলোকেটিভ এফিসিয়েন্সি, যার ফলে রিয়েল সেক্টরে উৎপাদনে উল্লম্ফন হয়। এ জাতীয় বিবেচনায় যেহেতু দৃষ্টি থাকে উৎপাদনের দিকে, সে কারণে ইক্যুয়িটির প্রশ্নটি অনেক সময় অনুল্লিখিত থেকে যায়। আমাদের মতো বিভাজিত দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতিতে এফিসিয়েন্সির সঙ্গে ইক্যুয়িটির প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই বাজেটকে সমাজ বিনির্মাণের একটি কৌশল হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। আমাদের দেশে বাজেটের সমাজতত্ত্ব সাধারণত আলোচনায় আসে না। সরকারি উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন কর্মের মাধ্যমে সামাজিক বিভিন্ন স্তর নানাভাবে প্রভাবিত হয়। এই প্রভাবের ফলে সমাজের সুযোগ-সুবিধা অনেক সময়ই বিষমভাবে বন্টিত হয়, যার ফলে সমাজের সুষম পরিবর্তন বিঘ্নিত হয়ে থাকে। আমাদের আলোচনায় এই ধারণা প্রায়শই অনুপস্থিত।

বাজেট অবশ্যই একটা রাজনৈতিক দলিল, এখানে সমাজের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত বিভিন্ন গ্রুপ তাদের অনুকূলে কর, রাজস্ব আহরণের অভিঘাত এবং ব্যয়ের কারণে সৃষ্ট হরেক রকম সুযোগ নিয়ে থাকে। এ কারণেই বাজেটের রাজনৈতিক অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দিক। আমরা আমাদের দেশে বাজেটের যে আলোচনা দেখি তাতে বিভিন্ন গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং অর্থনৈতিক আলোচনায় সামষ্টিক অর্থনীতির চলগুলোকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়। এখানে সামষ্টিক অর্থনীতির বেষ্টিক দিকটি বিবেচনায় থাকে না বলে রাজনৈতিক অর্থনীতি অনুক্ত থেকে যায়। আমাদের আলোচনায় আমরা রাজনৈতিক দলের দায়বদ্ধতার দিকটি ধারণ করেছি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের সময় ইশতেহারের মাধ্যমে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই আলোচনা সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে করা হয়েছে। বাজেটের আলোচনায় সংবিধানে প্রদেয় ডাইরেক্টিভ প্রিন্সিপালসের বিবেচনায়ও হতে পারে এবং হওয়া উচিত। এতগুলো দিক থেকে বাজেট আলোচনা অবশ্যই দীর্ঘ হবে, আমরা সেদিকে অগ্রসর না হয়ে কেবল দায়বদ্ধতার দিক থেকে বাজেটটি আলোচনা করেছি। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আশা করি বাজেট বিবেচনার অন্য দিকগুলো নানাভাবে আমাদের এই উপস্থাপনায় চলে এসেছে এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এদেশের জনসাধারণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও স্বচ্ছভাবে দায়বদ্ধ হওয়ার অবস্থানে নিয়ে আসবে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নিয়ে যে উপস্থাপনা করেছেন তাতে সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে। এখানে ইক্যুইটি ও এফিসিয়েন্সির বিবেচনা একেবারে ক্ষীণ। এ কারণেই এ বাজেটকে মোহিতকরণের একটা প্রচেষ্টা বলে ধারণা করা যায়।
HTML clipboardঅর্থমন্ত্রীর এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায় নির্ধারিত করে সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন ব্যয় গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বাজেটের আয়কাঠামো ও ব্যয়কাঠামো প্রকৃতিগতভাবে আগের বছরের তুলনায় তেমন পরিবর্তিত হয়নি। সর্বাধিক অনুন্নয়ন ব্যয় প্রাক্কলিত হয়েছে অর্থবিভাগ (৬০.১৭%), এরপর যেসব মন্ত্রণালয়ের জন্য বেশি অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে সেগুলো হল : খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (৭.৩৬%), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (৩.৫৯%), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (৫.১৩%), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (৩.৩৭%), শিক্ষা মন্ত্রণালয় (৩.৯৯%) ও কৃষি মন্ত্রণালয় (৩.২১%)। এসবই আগের বছরের তুলনায় শতাংশ হিসেবে তেমন ভিন্নতা দেখায়নি। উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে (২১.২৯%)। তারপর আসছে বিদ্যুৎ বিভাগ (১১.৩০%), সড়ক ও রেলপথ বিভাগ (৯.৭৬%), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ (৯.৭২%) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা (৯.০৫%)। উল্লেখ্য, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ হয়েছে (৪.১১%), শিক্ষা খাতে (৩.৪১%), কৃষি খাতে (২.৮৩%), সেতু নির্মাণের জন্য (২.৫৩%) এবং জ্বালানি খাতে (২.২৩%)। দিন বদলের বাজেটে আমরা ব্যয়ের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য কোন কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করি না। অন্যদিকে আয়ের ক্ষেত্রেও কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার আকাঙক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সেজন্য করের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সংস্কারের ওপর পূর্ববর্তী বাজেটগুলোর মতোই অধিক দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ৪২% আমদানি শুল্ক থেকে আসে, এবারের বাজেটেও এ খাত থেকে অধিকতর কর রাজস্ব আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমনি করা হয়েছে মূল্য সংযোজন খাতের আওতা প্রসারণের জন্য। আয়করের ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ভিন্নতর কোন অবস্থান নেয়া হয়নি। রাজস্ব ব্যতিরেকে রাজস্ব বহির্ভূত আয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
বাজেটের ঘাটতি জিপির ৫%-এর মধ্যে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেটা আগের বছরের চেয়ে কিঞ্চিত বেশি। ঋণের বেলায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ কিছুটা বাড়বে এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ আসবে মূলত ব্যাংকিং খাত থেকে, যেখানে অনেক তারল্য বর্তমানে আছে। বৈদেশিক ঋণের বেলায়ও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সাম্প্রতিককালের চেয়ে প্রাক্কলিত বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের ৫০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক ঋণ থেকে আসবে বলে দেখানো হয়েছে। প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি জিডিপির সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ এটা আগের বছরের মতোই। বিনিয়োগ হবে জিডিপির ২০ শতাংশের বেশি, এখানেও ধারাবাহিকতা লক্ষণীয়।
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ হয়েছিল, এখন খাদ্যদ্রব্য মূল্য কম হওয়ায় এবং পেট্রোল ও ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে। বাজেটে জাতীয় সঞ্চয় জিডিপির কত শতাংশ হবে তার কোন প্রাক্কলন নেই এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বার্ষিক হিসেবে কত জনবৎসর বৃদ্ধি পাবে তারও কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট নেই।
নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে এবং কৌশল হিসেবে মজুদদারি ও মুনাফাখোরির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছিল। বাজেটে এ সম্পর্কে কোন বক্তব্য নেই। দ্রব্যমূল্য কমাতে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতকে সঙ্গত কারণেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ এবং একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। কৃষি খাতে প্রয়োজন মোতাবেক ভর্তুকি থাকবে। যার পরিমাণ ২০০৯-১০ সালে ৩,৬০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটের ৫,৭৮৫ কোটি টাকার চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কম। কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ, বীজ সংরক্ষণ ও মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, কৃষি গবেষণা ও কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতে লক্ষণীয় বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কোন প্রস্তাবনা নেই। লাঙল যার, জমি তার- এ দিকেও সরকার অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয় না। উপরন্তু কৃষকের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টাও অনুল্লেখভাবে বাজেটে এসেছে। বীজ ও অন্যান্য উপকরণের সমবায়ী মালিকানার প্রতি কোন অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি, যদিও সংবিধানে সমবায়ী মালিকানার ক্ষেত্রটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর এক্ষেত্র অগ্রাধিকারের দাবিদার।
নির্বাচনী ইশতেহারে বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এর অভিঘাত ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে বিভিন্ন খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানা রকম বিনিয়োগ এবং নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বমন্দার প্রভাব মোকাবেলায় বাজেটে অন্যান্য দেশের মতো বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। রফতানি খাতে সরকার ১৩টি পণ্যকে রফতানি সহায়তা দিয়ে থাকে। উপরন্তু বাজেটে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি খাতে সহায়তার পরিমাণ ২.৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য বাজেট বরাদ্দ ৪২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে এবং সহায়তার অর্থ দ্রুত পরিশোধের জন্য নীতিমালা সহজীকরণ করা হয়েছে। যার ফলে প্রাপ্য সহায়তার ৭৫ শতাংশ বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করা হবে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা, ডিউটি ড্র ব্যাক সুবিধা, ৫ শতাংশ রফতানি সহায়তা এবং সুতা আমদানির ওপর ০ (শূন্য) শুল্কহার বিদ্যমান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও আমদানি ও বিনিয়োগ সংহত করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১২ ও ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ডাউন পেমেন্টের মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, কেস টু কেস-এ ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, রফতানি খাতে নিয়োজিত প্লান্টের উন্নতি ও যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের জন্য প্রদেয় লাইসেন্স ও নবায়ন ফি প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সব রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের করণীয় কার্যক্রম আশু বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচনকে নির্বাচনী ইশতেহারে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান কৌশল হিসেবে কৃষি ও পল্লী জীবনে গতিশীলতা আনয়ন, হতদরিদ্রদের নিরাপত্তা প্রদান এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা প্রদানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রের বিষয়টি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য পশুসম্পদে বিনিয়োগের মাধ্যমে মাংস, দুধ ও ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি, মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জলাশয় ও পোনা উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রণোদনা সহায়তা প্রদানের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। পানি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ছাড়া এদেশের ভূমি সম্পদের যথার্থ ব্যবহার সম্ভব নয়, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনশক্তির যথার্থ ব্যবহার। এজন্য প্রয়োজন নদীসহ সব জলাশয় দূষণ ও দখলমুক্ত করাসহ নদী সংরক্ষণ, নদীভাঙন রোধ, লবণাক্ততা প্রতিরোধ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণ। নদীর নাব্যতা ও টেকসই পুনরুদ্ধার আমাদের জলসম্পদের ব্যবহারকে সুনিশ্চিত করতে পারে। বাজেটে এ ব্যাপারে অতীতের মতোই যথেষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সম্প্রসারণ, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি সরবরাহসহ পল্লী অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে ঋণদান, দক্ষতা উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পল্লী উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলজিইডির অনুকূলে উন্নয়ন বরাদ্দের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সম্পর্কটি যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন নয়। বাজেটে সার্বিক ত্রাণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট একটি বাড়ি একটি খামারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হলে জেলাভিত্তিক ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেটের ওপর নেকদৃষ্টি লক্ষণীয়, যখন স্থানীয় সরকারের কার্যকারিতা বাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের পৃথক ও সমন্বিত বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (বাকি অংশ আগামীকাল)
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ :অর্থনীতিবিদ, সভাপতি, সুজন

তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২৫ জুন ২০০৯

Related Post

সংসদ নির্বাচন: অপরাধীরা যোগ্য বিবেচিত হতে পারে নাসংসদ নির্বাচন: অপরাধীরা যোগ্য বিবেচিত হতে পারে না

বদিউল আলম মজুমদার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের আপিলসাপেক্ষে, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠেছে। এর পেছনে যুক্তি হলো, যে কোনো, এমনকি নিকৃষ্টতম অপরাধীরও দণ্ডের বিরুদ্ধে  আপিল করার

অধ্যাপক মোজাফ্ফরকে যেমন দেখেছিঅধ্যাপক মোজাফ্ফরকে যেমন দেখেছি

বদিউল আলম মজুমদার অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদকে ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে চিনি। তখন তিনি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। আমি এ খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে ছাত্র। সে সময়ে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব-মোনায়েমের তাঁবেদাররা অর্থনীতি বিভাগের জনপ্রিয়

নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষানির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ১০-০৫-২০১২ সম্প্রতি প্রথম আলোতে (২৫ এপ্রিল ২০১২) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, আমাদের একজন মাননীয় সাংসদ এনামুল হক সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে লিপ্ত রয়েছেন,