৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ৪ টায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ’সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সম্প্রীতি রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফখরুল আনাম, সহ সভাপতি, সুজন, রংপুর এবং স্থানীয় সুজন সদস্য আবদুল মতিন। মূখ্য আলোচক হিসেবে অংশ নেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
আলোচনায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম, সাহিত্য সংগঠন সংগঠক মাহমুদুল হাসান পিন্টু, মহিলা পরিষদ নেত্রী অর্চনা রানী সরকার, শিক্ষার্থী আনন্দ কুমার, সমাজ সংগঠক খলিলুর রহমান চৌধুরী, কাউনিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলমগীর হোসেন লিটন, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি গনেশ কুমার দেবশর্মা, যুবলীগ নেতা আজগর আলী, সংগঠক শামসুল হক, রংপুর সুজন সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ।
সুজন সমন্বয়কারী বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। নির্বাচনের পূর্ব থেকেই দুর্বৃত্তরা দেশের নানা জায়গায় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভূক্ত মানুষের ওপর শারীরিক হামলা চালিয়েয়েছে, মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে, প্রতীমা ভাংচুর করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট করেছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে; অর্থাৎ তারা সব ধরনের অপকর্মই করেছে। ঘটনার আকষ্মিকতায় আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের দূর্ভাগ্য যে, এই সহিংসতা এখনও চলছে অব্যাহতভাবেই।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে মূল দায়িত্ব নেবে সরকার – এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনাকাক্সিক্ষত এসকল ঘটনা প্রতিরোধে এগিয়ে এসে আইনি দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান তারা। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে এ উপলব্ধি আরো জোরালো হয় যে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিসহ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন সকল নাগরিকদের দাঁড়াতে হবে আক্রান্তদের পাশে এবং এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, কোনো ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি তাই ধর্মীয় নয় জাতিগত চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ভ করতে হবে। বৃটিশরা আমাদের সমাজে বিভেদের বীজ রোপন করে গিয়েছে। এ বিভেদ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। অনাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বক্তাগণ বলেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা এদেশে কারো অনুগ্রহে বসবাস করে না, এটা তাঁদের জন্মগত ও সাংবিধানিক অধিকার। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বৃটিশবিরোধী আন্দোলনসহ এই জনপদের প্রতিটি লড়াই-সংগ্রাম এবং জাতিগত প্রতিটি গৌরবোজ্জ্বল অর্জনে তাঁদেরও অবদান রয়েছে। এই বিষয়গুলো স্মরণ রেখে, আমরা সকলেই যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে রাষ্ট্র প্রদত্ত, পেশাগত ও নাগরিক দায়-দায়িত্ব, অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে সঠিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হই, তবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলো আমরা সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবো।