সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক কর্মশালা রাজশাহীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব শীর্ষক কর্মশালা

রাজশাহীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব শীর্ষক কর্মশালা

12দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনিশ্চয়তার মুখে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে তা নিয়ে দেশের বৃহত্তম দু’টি রাজনৈতিক দল এবং তাদের জোট নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ়। আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোট বলছে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। বিএনপি এবং তাদের জোট চাইছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছার পরিবর্তে দমন-পীড়ন, সহিংস হরতাল-হানাহানিতে লিপ্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ এবং সাধারন জনগণ দু’টি প্রধান জোটের মধ্যে সংলাপ এবং সমঝোতার দিকে তাকিয়ে আছে।

বিরাজমান এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গত ৯ নভেম্বর ২০১৩ শনিবার বিকাল ৩ টায় রাজশাহী জেলা ও মহানগর সুজন কমিটি কর্তৃক চেম্বার ভবন, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয় ’সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক রাজশাহী বিভাগীয় কর্মশালা। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সুজন রাজশাহী মহানগর কমিটির সভাপতি জায়তুনা খাতুন। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজন রাজশাহী জেলা সভাপতি প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার। কর্মশালা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
কর্মশালায় ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের স্বার্থে এবং নির্বাচন হতে হবে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সকল দলের অংশগ্রহণে। নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, দেশে-বিদেশে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের শর্ত পূরণ করতে হলে দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওযামী লীগ, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। দুটি বড় দল যাতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে সেজন্য সুজন কেন্দ্রীয়ভাবে চেষ্টা করছে সংলাপ, সংবাদ সম্মেলন, গোলটেবিল বৈঠক, মানব বন্ধন, বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটি ফর্মুলাও দিয়েছে সুজন যা ইতোমধ্যে অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সুজন সম্পাদক।
তিনি বলেন, দেশের নাগরিকরা সচেতন, সক্রিয় এবং সোচ্চার হলে দেশে গণতন্ত্র কায়েম হওয়া সম্ভব। বর্তমান সংকটে নাগরিকদের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। তিনি রাজশাহীর নাগরিকদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শুধু সমালোচনায় না থেকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ’অন্ধকারকে গালিগালাজ করলে অন্ধকার দূর হয় না বরং একটি দিয়াশলাই জ্বালালেও কিছুটা আলোকিত হয়।’ এ রকম পরিস্থিতিতে নাগরিকদের দায়িত্ব এবং করণীয় কি হওয়া উচিত এ সম্পর্কে কর্মশালায় উপস্থিত রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের মতামত দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক মতামত তুলে ধরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর মোঃ আব্দুল হাই তালুকাদার, রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মো. আবু বাক্কার, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক জামাত খান, সাবেক এমপি জাহান পান্না, নারীনেত্রী রোজেটি নাজনীন, সুজন নাটোর জেলা সম্পাদক রওশন আরা শ্যামলী, সিরাজগঞ্জ জেলা সুজন সভাপতি মো. আব্দুল হালিম, ধুরইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. কাজীম উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রফেসর ড. আহাম্মদ রেজা, ডা. মো. আবু সায়েম, মোস্তাফিজুর রহমান রাশেদ, ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, এডভোকেট মোজাম্মেল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক পিয়ার বকস, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মোস্তাকিম বিল্লাহ মিশুক, মাসুম রাসেল, অনিক, আসিফ ইকবাল উজ্জল, চৈতি প্রমূখ।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ সামপ্রতিক রাজনৈতিক পরিসি’তি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন। জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের উত্তরণে সংলাপ ও সমাধানের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। খারাপ মানুষ যাতে নির্বাচনে জয়ী হতে না পারে সে জন্য সুজনের নেতৃত্বে দেশের সচেতন মানুষদের নাগরিক দায়িত্ব পারনের জন্য জোর দেন । দল নিরপেক্ষ এবং দেশের জনপ্রিয় সংগঠন হওয়ায় সুজনের সাংগঠনিক কাঠামো ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীগণ। দশম জাতীয় নির্বাচন এক তরফা হলে সে নির্বাচনকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন অধিকাংশই। দমন-পীড়ন, হানাহানির রাজনীতির প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেন এবং ইতিবাচক রাজনীতির অগ্রযাত্রার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তরুণ অংশগ্রহণকারীগণ।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ সুজনের প্রতি আহ্বান জানান,
*দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নেয়ার জন্য;
* সুজন যাতে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কারে তাদের চাপ অব্যাহত রাখে;
*  ’না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার;
* অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী সুজনের আহ্বানে মানব বন্ধন করার;
* ভোটারদেরকে প্রার্থী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা দেয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার;
*সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় কার্যক্রম গ্রহণ করার;
*সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার;
* সমাজে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মাঝে গণতন্ত্র ও সুশাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড, গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার।
কর্মশালায় উঠে আসে, সব দলের অংশগ্রহণেই কেবল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। তা না হলে দেশে বিদেশে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচন ইস্যুতে দুই প্রধান দলের দুই নেত্রী খাদের দুই দিকে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন’ নাগরিকরা বিভ্রান্তি মধ্যে রয়েছেন। এই বিভ্রান্তি থেকে বের হওয়ার পথ রাজনৈতিক নেতাদেরকেই বের করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের সচেতন নাগরিকগোষ্ঠীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

Related Post

সিলেটে সুজন এর ’সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ বিষয়ক কর্মশালাসিলেটে সুজন এর ’সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ বিষয়ক কর্মশালা

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব বাংলাদেশ অনুভব করছে। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে জনগণ একটি গ্যাড়াকলের

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজশাহী বিভাগীয় পরিকল্পনা সভাদশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজশাহী বিভাগীয় পরিকল্পনা সভা

রাজশাহী চেম্বার ভবন সম্মেলন কক্ষে গত ৯ নভেম্বর ২০১৩ সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয় সুজন রাজশাহী বিভাগীয় পরিকল্পনা সভা। পরিকল্পনা সভা শুরুর পূর্বে রাজশাহী জেলা, মহানগর এবং মেট্রো থানাসমূহের নির্বাচিত