শোকবার্তা

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ গত ২২ মে ২০১২ তারিখ রাতে ল্যাব এইড হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি….. রাজিউন।) আমরা তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।

তিনি কেবল অর্থনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক। অর্থনীতি, স্বাস্থ ও শিক্ষা ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়। একই সঙ্গে তিনি গণতন্ত্র ও সুশাসন, পরিবেশ আন্দোলন, মানবাধিকার রক্ষা,  দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার ছিলেন। অনেকগুলো সামাজিক সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনেরও সাবেক সভাপতি।
অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ। বাবা নাজির আহমেদ এবং মা জাহানারা বেগম। ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে তিনি মাস্টার্স করেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি হরগঙ্গা কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তখনো তাঁর মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়নি। এরপর পিএইচডি শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন এবং আইউব-মোনায়েম খানের তাবেদারদের রোষানলে পড়ে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর কিছুদিন তিনি করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। যোগ দেন ইপিআইডিসিতে। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন (আইবিএ) ইন্সটিটিউটে যোগ দান করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন এজন পণ্ডিত ব্যক্তি এবং দেশে-বিদেশে তাঁর একাধিক গ্রন’ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আনর্-জাতিক প্রতিষ্ঠানে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের তিনি ছিলেন পুরোধা। তিনি ছিলেন দৃঢ় চেতা, নির্ভীক এবং কোন দিন কারো রক্ত চক্ষুর কাছে মাথা নত করেননি।
আমরা তাঁর পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সুজনে’র পক্ষ থেকে-
দিলীপ কুমার সরকার
সমন্বয়কারী

Related Post

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রসঙ্গচতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রসঙ্গ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনা (ধারা ৫৯) অনুযায়ী, অত্যন্ত প্রাচীন ও কার্যকর ‘প্রশাসনিক একক’ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার গঠন ও কার্যকর করা একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এ বাধ্যবাধকতা জেলা ও

সংঘাত, না সংলাপ?সংঘাত, না সংলাপ?

সুবিধাবাদী হালুয়া-রুটির রাজনীতি আমাদের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অকার্যকর। বহুদলীয় গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায়, সেই সংস্কৃতি কি আমাদের দেশের রাজনীতিতে এখনো গড়ে ওঠেনি? আমাদের এই দেশের ভবিষ্যৎ