সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক আলোচনা সভা,প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী,মানববন্ধন শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত


‘একটি রাষ্ট্রের নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ নেই। তাই নাগরিকরা সোচ্চার হলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা আজ সুজন কেন্দ্রীয়, ঢাকা জেলা ও মহানগর কমিটির উদ্যোগে ১২ নভেম্বর ২০১৭, সকাল ১০:০০টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটরিয়ামে সুজন-এর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আলোচনার সভার পূর্বে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকাল ৯.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানবন্ধন কর্মসূচি এবং ৯.৩০টায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

র‌্যালি ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, ড. তোফায়েল আহমেদ, ড. হামিদা হোসেন, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালিকুজ্জামান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, রাজনীতিবিদ এএসএম আকরাম, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি এবং এম এন ইসলাম চৌধুরী তপন প্রমুখ। এছাড়া রাজনীতিবিদ-সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকগণ উপস্থিত থেকে সুজন-এর কাছে তাঁদের প্রত্যাশা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন সহ-সভাপতি বিচারপতি কাজী এবাদুল হক।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে থাকাবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সুজন বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করে, এর বেশিরভাগ প্রস্তাবই কমিশন গ্রহণ করেছিল। নির্বাচনে প্রার্থী প্রদত্ত হলফনামার বিধানটি আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে সুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।’ ভবিষ্যতে নির্বাচন ‘না ভোটে’র বিধানটি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সুজন আইনি লড়াই পরিচালনা করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘সুজন-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। তবে সুজন-এর বেশিরভাগ কাজ পরিচালিত হয় নির্বাচনকেন্দ্রিক। কারণ আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ ও জনকল্যাণকামী নেতা নির্বাচিত হয় এবং দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটে।’ বাংলাদেশ যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুজন একই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ সচেতন নাগরিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি নাগরিক সংগঠন। দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাগরিক সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০০২ সালের ১২ নভেম্বরে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে ‘সিটিজেন্স ফর ফেয়ার ইলেকশন্স (সিএফই)’ নামে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করলেও, পরবর্তীতে দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয় এবং লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সংগঠনটির নামকরণ করা হয় ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’, সংক্ষেপে ‘সুজন’। তিনি তাঁর বক্তব্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন রাখা, নির্বাচনী আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনা, সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুজন-এর বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন,

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে সুজন-এর অনেক অর্জন রয়েছে। আগামী দিনে নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সার্বিকভাবে সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সুজন-এর কাজ করা দরকার। একইসঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা ও ইস্যু নিয়েও কাজ করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ নিয়েও কাজ করা দরকার। নির্বাচনের মানে বর্তমানে অবনতি ঘটেছে। হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা হয় না।’ শুধু ভাল সংবিধান আর আইন থাকলেই হয় না, নাগরিকরা সোচ্চার হলেই দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জনাব খালিকুজ্জামান বলেন, ‘সুজন-এর উদ্যোগে অনেক সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়েছে। বিভিন্ন সময় যাঁরা সুজন-এর কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন তাঁদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আজকে জনগণকে ক্ষমতাহীন করে ফেলা হচ্ছে। টপ-ডাউন অ্যাপ্রোচে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা কারো কাম্য হতে পারে না। রাজনীতি আজ দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গিয়েছে। তাই সত্যিকারের রাজনীতি চাই, পরিশুদ্ধ রাজনীতি চাই।’

Related Post

সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে বাগেরহাটে সুজনের মানববন্ধনসুন্দরবন রক্ষার দাবিতে বাগেরহাটে সুজনের মানববন্ধন

গত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪, শনিবার, বিকেল ৪টায়, বাগেরহাট জেলাশহরের মিঠাপুকুর পাড়ে, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, বাগেরহাট জেলা কমিটির উদ্যোগে সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে ‘সুন্দরবন বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও’ শিরোনামে এক মানববন্ধনের

সুজন-এর উদ্যোগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজনসুজন-এর উদ্যোগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন আয়োজন

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চলছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন করে গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে এই নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা।

নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়ার কপি আইনমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিল সুজননির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়ার কপি আইনমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিল সুজন

আইনের খসড়াটি দেখতে ক্লিক করুন নাগরিক সংগঠন সুজন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ শিরোনামে আইনের খসড়ার একটি কপি আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হকের কাছে পৌঁছে