সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন দেশবাসী

সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন দেশবাসী

ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র
আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল ও বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠছে। বহুদিন থেকেই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাত চলে আসছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী পরস্পরের ছায়া পর্যন্ত মাড়ান না। বস্তুত, বর্তমানে তারা আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নন, তারা যেন এখন পরস্পরের 'শত্রুতে' পরিণত হয়েছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যা হওয়ার কোন অবকাশ নেই। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, বিশেষত সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকারের অংশ। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, মতবিনিময় ও সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণই রাজনীতির মূল কথা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। উপরন্তু শুধু দলের সঙ্গে দলেরই নয়, দলের এবং দলের অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরেও, বিশেষত ফায়দাতন্ত্রের কারণে বিশৃংখলা ও সহিংসতা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে।

সংঘাতের রাজনীতির পরিণতি হিসেবে অতীতে কিছু রাজনৈতিক হত্যা সংঘটিত হলেও গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এএমএস কিবরিয়া প্রমুখের হত্যার মাধ্যমে এ গর্হিত কর্মে যেন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। তবে সহিংসতা ও তা ধামাচাপা দেয়ার নগ্নতম রূপ প্রতিভাত হয় ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা এবং 'জজ মিয়া নাটক' মঞ্চস্থ করার মাধ্যমে। বিএনপি নেতা জামালউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়া এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে জীবিত উদ্ধার করতে না পারা ছিল জোট সরকারের আমলের সহিংস রাজনীতির আরেকটি ন্যক্কারজনক ঘটনা।

গত ২৫ জুন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের গুম ও তাকে আজ পর্যন্ত খুঁজে না পাওয়া অতীতের সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তিই ঘটিয়েছে। 'অধিকারে'র হিসাব মতে, শুধু গত এপ্রিল মাসেই রাজনৈতিক সহিংসতায় সারাদেশে ২৪ জন নিহত ও দুই হাজার ৫২৮ জন আহত হয়েছেন (www.odikhar.org) গত ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া ছাড়াও সাম্প্রতিককালে আরও অনেক নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। 'অধিকারে'র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালে মাত্র দুটি অনিচ্ছাকৃত নিখোঁজ (enforced disappearance) হওয়ার ঘটনা ঘটলেও ২০১০ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৮, ২০১১ সালে ৩০ এবং ২০১২-এর প্রথম চার মাসে ১৩ জনে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল ২০১২ পর্যন্ত ২৭ মাস ১৯ দিনে সারাদেশে ১০০ ব্যক্তি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছে। প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী গত বছর শুধু ঢাকা শহর থেকেই ৩০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে (২৩ এপ্রিল ২০১২)। গত ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী তাদের নিজ গৃহে খুন হন এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের হত্যাকারীদের আজও শনাক্ত করতে পারেনি। একজন সৌদি কূটনীতিক ও একজন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতার হত্যাকারীদেরও এ পর্যন্ত খুঁজে বের করা যায়নি, যা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরকালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এসব ঘটনা আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অপারগতা বা অনিচ্ছারই ইঙ্গিত বহন করে।

প্রসঙ্গত 'আরটিভি'তে সম্প্রচারিত এক সাম্প্রতিক (৮ মে ২০১২) রিপোর্ট অনুযায়ী, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম ২০১০-১১ সালে এক হাজার ৫৪ জন বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে। এমন লাশের সংখ্যা ২০১১-১২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯৩০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এ তথ্যও বর্তমান বছরে গুমের ঘটনা বৃদ্ধির ইঙ্গিতই বহন করে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিলেই ৪৬২ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে শুরু হওয়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। 'অধিকারে'র হিসাব মতে, বর্তমান বছরের প্রথম চার মাসে ৪২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার লংঘনের সমস্যা বর্তমান সরকারের আমলেও যে বিরাজ করছে, এসব ঘটনা তারই প্রতিফলন। যদিও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিনবদলের সনদে এসব, বিশেষত বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল। এমনকি সফররত জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রীও তার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে এ সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন।

শুধু গুম, রাজনৈতিক হত্যা ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিই নয়, সাম্প্রতিককালে আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা-ও অনেকের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনগুলোর বিশৃংখল আচরণ ও বেআইনি কার্যক্রম সারাদেশে এক চরম অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। এসব সংগঠনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব ইত্যাদি বেপরোয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদিও আওয়ামী লীগ তার দিনবদলের সনদে এসব অপকর্ম বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ছাত্রলীগের খুনখারাবি ও তাণ্ডব সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

নগ্ন দলবাজির কারণে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। অতীতে ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাধ কর্মকাণ্ড ও তথাকথিত শিক্ষক রাজনীতি অন্য সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও বুয়েট এতদিন অনেকটা নিরাপদ অবস্থানে ছিল। সেই বুয়েটেও এখন চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। একই অবস্থা ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। তবে আশার কথা যে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আবার ক্লাসে ফিরে গেছেন।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব অপরাধ কমর্কাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠান আবশ্যক, মামলা প্রত্যাহারের ফলে যা সম্ভবপর হয় না। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের এক অশুভ সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে। 'অধিকারে'র তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হিসেবে পাঁচ হাজার ৮৮৮টি মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ৯৪৫টি মামলা থেকে কিছু আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয় (প্রথম আলো, ৪ এপ্রিল ২০১২)। এ প্রক্রিয়ায় ৭৩ হাজার ৫৪১ জন অভিযুক্ত আসামিকে খালাস দেয়া হয়, যার মধ্যে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পক্ষান্তরে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম দফায় ছয় হাজার ৭৮৬টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় খুন ও অস্ত্র আইনের মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ২৯৭টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহার আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের সমতুল্য।

বিগত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দুর্নীতি দূরীকরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর একজনও চিহ্নিত ও বড় ধরনের দুর্নীতিবাজের সাজা হয়নি। বরং যাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল তারা একে একে আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে। এছাড়াও দুদককে বহুলাংশে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। উপরন্তু সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠলেও তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেয়া হয়নি। শেয়ারবাজার লুটকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ। সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে পুনঃনিয়োগ, যার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের দুর্নীতির প্রতি আপসকামিতার পরিচয়ই বহন করে।

ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয় নিয়ে বিরোধী দলের পাঁচ দিনের হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ও পাঁচজনের মৃত্যু বিগত জোট সরকারের আমলের লাগাতার হরতাল ও সহিংসতার কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। পরে মির্জা ফখরুলসহ বিরোধী দলের ১৭৩ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, যাদের মধ্য থেকে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের অনেককেই দেশের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি বিরোধীদের প্রতি সরকারের দমননীতির বহিঃপ্রকাশ বলে অনেক নাগরিকের ধারণা। বিশেষ করে হাইকোর্টের গেটে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাহারা বসিয়ে আগাম জামিন লাভের জন্য বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের আদালতে যাওয়া থেকে বাধা প্রদান অনেক নাগরিককে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।

তড়িঘড়ি করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি সব দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চরম দলীয়করণে এ অনিশ্চয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা আমাদের ২০০৭ সালের প্রথমদিকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন চারদলীয় জোট সরকার একটি পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের এবং মহাজোট তা ঠেকানোর জন্য দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবারও ভেঙে পড়তে পারে, যা অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের পথকে সুগম করে দিতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের বিরোধিতা সত্ত্বেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে অনেক নাগরিকই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংশোধিত আকারে হলেও ফিরিয়ে আনার পক্ষে। এটি সুস্পষ্ট যে, বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। এ অস্থিরতা অনেক নাগরিককেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। কারণ অনেকের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হব। বস্তুত কারও কারও মতে, আমরা এরই মধ্যে ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে পড়েছি। তবে অনেকের মতে, বর্তমান অবস্থা সাসটেইনেবল বা স্থায়ী হওয়ার মতো নয়। অর্থাৎ এ অবস্থা টিকে থাকবে না এবং এর পরিবর্তন ঘটবেই। কিন্তু সে পরিবর্তন কাঙ্ক্ষিত পথে নাও ঘটতে পারে, যা অনেকের মনেই শংকার উদ্রেক করে। কারণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় পরিবর্তন ঘটলে সহিংসতা সৃষ্টি হতে এবং জাতি আরও অনেক পিছিয়ে পড়তে পারে। তাই এমন পরিবর্তন যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন রাজনীতিকদের প্রজ্ঞা ও দায়িত্বশীলতা। আশা করি, আমাদের শ্রদ্ধাভাজন রাজনীতিকরা বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন এবং অনতিবিলম্বে সংলাপে বসে কতগুলো বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছবেন। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জোড়াতালির সমঝোতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন বিরাজমান সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান। যেমন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আমাদের অকার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান নয়। তাই আমাদের সমাধান করতে হবে সেসব সমস্যার, যেগুলো আমাদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ আমাদের রাজনীতির নামে অপরাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে, দুর্বৃত্তায়নের আখড়ায় পরিণত হওয়া রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে, দলবাজি-ফায়দাবাজির ইতি টানতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, রাজনীতিকরা সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেবেন না। এর জন্য প্রয়োজন হবে নাগরিক সক্রিয়তা। নাগরিকরা সোচ্চার ও প্রতিবাদী হলেই রাজনীতিকরা তাদের আচরণ বদলাতে বাধ্য হবেন। আর রাজনীতি একটা 'নন-কনট্রাক্ট স্পোর্ট' বা নির্লিপ্ত খেলা নয়, এ খেলায় নাগরিকের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। তবে এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সমপাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ১৯ মে ২০১২

Related Post

সংলাপ ও সম্ভাব্য সমাধানসংলাপ ও সম্ভাব্য সমাধান

  বদিউল আলম মজুমদার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রীর মধ্যকার বহু প্রতীক্ষিত ফোনালাপের পর সংলাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুই নেত্রীই এখনো সংলাপ ও সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার-সম্পর্কিত

রাজনীতি নিয়ে শুধু রাজনীতিবিদেরাই কি মাথা ঘামাবেনরাজনীতি নিয়ে শুধু রাজনীতিবিদেরাই কি মাথা ঘামাবেন

বদিউল আলম মজুমদার দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নেওয়ার কারণে একজন বর্ষীয়ান আইনজীবী ও একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রাজনীতিতে নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছে। আমরা নিজেরাও, যারা নির্দলীয় অবস্থান থেকে বহুদিন

গণতন্ত্র: সংসদকে কার্যকর করতে হলেগণতন্ত্র: সংসদকে কার্যকর করতে হলে

বদিউল আলম মজুমদার সংসদ বা আইনসভা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ধারক বা কেন্দ্রবিন্দু। বস্তুত, সংসদ যতটুকু কার্যকর, গণতন্ত্র ততটুকুই ফলপ্রসূ। আমাদের অষ্টম জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তষ্টি রয়েছে। বিগত