দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সা¤প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ, সহিংসতা বন্ধ ও দোষীদের বিচারের দাবিতে আজ ২৩ অক্টোবর ২০২১, শনিবার, সকাল ১১টায়, সারাদেশে সুজন-এর উদ্যোগে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম, বিকশিত নারী নেটওয়ার্কসহ সমমনা সংগঠনসমূহকে নিয়ে এক মানববন্ধনের কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে, মানিক মিয়া এভিনিউ-এ। অন্যান্য সমমনা সংগঠনের মধ্যে গণস্বাক্ষরতা অভিযান, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, এবং রিসার্চ এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট অরগানাইজেশন এই মানববন্ধনে যোগ দেয়।
মানববন্ধনে সুজন-এর সহসভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি রাশেদা আক্তার শেলী, দ্য মান্থলি ইন্ডিপেন্ডেস এর স¤পাদক অধ্যাপক চন্দন সরকার, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের স¤পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন, সুজন-এর সাবেক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের শাকিল রহমান ও সাফিয়া সিদ্দিকা, সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী মুসবাহ আলিম, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরি, মহানগর কমিটির স¤পাদক মো. সেলিম, ঢাকা মহানগর স¤পাদক জোবায়ের হক নাহিদ, ঢাকা জেলা কমিটির সহসভাপতি ড. আব্দুল আওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, গত ১৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া সা¤প্রদায়িক হামলা এখনো অব্যাহত আছে, কিন্তু অনেক জায়গার খবর প্রকাশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বরিশালের গৌরনদী এলাকা থেকে গতকাল আমাকে ফোন করে জানানো হয়েছে সেখানে সুজন নেতৃবৃন্দকে মানববন্ধন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে বলা হয়েছে যে সেখানকার সংসদ সদস্য কোনো অনুষ্ঠান না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমারা এর নিন্দা জানাই। আমরা দেশজুড়ে ঘটা সা¤প্রদায়িক হামলার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের আহŸান জানাই, যেখানেই এ ধরনের ঘটনার পূর্বাভাষ পাওয়া যাবে সেখানেই সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে আহŸান জানাই দোষারোপের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃতপক্ষেই যারা অপরাধী তাদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করুন।
আমরা সরকারের প্রতি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও আহŸান জানাই।
মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, সমস্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে রাজনীতি, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়েছে কারণ রাজনীতি করতে গেলে যে গুণাবলি লাগে তার একটিও তাদের মধ্যে নাই। আমাদের নাগরিক সমাজও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, কারণ তারাও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দেশের জনগোষ্ঠীকে প্রথম শ্রেণি দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভাগ করে রাখলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না।
মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে এসময়টাকে ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলে অভিহিত করা হবে। এই কালো অধ্যায় কবে কাটবে সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। এই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে অপরাধীকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে কেন এত সময় লাগল সেটি ভাবার বিষয়, সর্ষের মধ্যেই ভ’ত আছে কি না সেটি খুঁজে দেখতে হবে।
চন্দন সরকার বলেন, হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। সব জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এখনই এর বিচার হওয়া দরকার।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, আমরা আজকে আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা দেখছি ২০০১ সাল থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে, ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু সেই কমিটির কোনো প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না, অপরাধীরা ধরা পড়ে না। আমার এখানে দাঁড়িয়েছি যেন একটা সৌহার্দ ও স¤প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি যাতে আমাদের আর এভাবে রাস্তায় নামতে না হয়।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে, আমরা কেউই নিরাপদ নই। এটা আমাদের জন্য জেগে উঠার ঘণ্টাধ্বনি। দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দোষারোপের সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের মিতু হত্যার পর আমরা দেখলাম পুলিশ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে, অথচ পরে দেখা গেল সর্ষের মধ্যেই ভ‚ত। অথচ কত মানুষের জীবন জীবিকা নষ্ট করে দেওয়া হল। সা¤প্রতিক হামলাগুলোর ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের তরুণরা অনেক ক্ষেত্রে সামনের কাতারে ছিল, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক একটি বিষয়। তরুণদের জন্য আমাদের এখনই একটি জাতীয় কর্মসূচি নিতে হবে।
হামিদা হোসেন বলেন, প্রশাসন ও পুলিশ ঠিকমত কাজ করছে না। এখন নাগরিকদের বিভিন্ন সক্রিয় কর্মসূচি নিতে হবে। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনকে একজোট হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শ্ন, তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ করতে হবে।