সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব বাংলাদেশ অনুভব করছে। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে জনগণ একটি গ্যাড়াকলের মাঝে আটকে আছে। অন্ধকারকে গালিগালাজ না করে আসুন একটি করে মোমবাতি জ্বালাই। ১৬ নভেম্বর শনিবার দুপুর ২ টায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলা কমিটি আয়োজিত ’সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন: নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক সিলেট বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। নির্বাচিত সরকার যদি সুশাসন, ন্যায় ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করে তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। একতরফা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। আবার নির্বাচন করতে না পারলেও দেশের ভবিষ্যত হবে অনিশ্চিত। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমাদেরকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, দেশের এই সংকটময় মূহুর্তে সারা দেশে সুজন নেতৃবৃন্দসহ চিন্তাশীল নাগরিকগণ কি ভাবছেন তা জানা প্রয়োজন এবং তাদের পরামর্শক্রমে করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সে জন্যই সুজনের পক্ষ থেকে ৭টি বিভাগে সুজন নেতৃবৃন্দের সাথে বিভাগীয় পরিকল্পনা সভা এবং সচেতন নাগরিকদের সাথে বর্তমান রাজনৈতিক পরিসি’তিতে কি করণীয় তা নিয়ে বিভাগীয় কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিদিদেরকে সবসময় নাগরিকদের সুযোগ সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।.দেশের বিত্তশালীদের অধিকাংশই ব্যবসার জন্য চিন-া করেন, কিন’ দেশের জন্য কম ভাবেন।
সুজন জেলা কমিটির সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউস শামস এর পরিচালনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ড. জহির বিন আলম, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, ব্যারিস্টার আরশ আলী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ আশরাফ হোসেন, জাতীয় পার্টি সিলেট জেলা শাখার সহ সভাপতি ইশরাকুল ইসলাম শামিম, গণফোরামের জেলা সভাপতি এডভোকেট নীলেন্দু দে, জাসদ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমদ লিজা, এডভোকেট শহীদুল ইসলাম, গোলাম সোবহান চৌধুরী, ধ্রুব জ্যোতি দে, কাউন্সিলর আজিজুল হক মানিক প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক সংকীর্ণতার গন্ডি থেকে যতদিন না বেরিয়ে আসতে পারবো ততদিন পর্যন- এদেশে শানি- কামনা করা সম্ভবপর হবে না। সকল রাজনৈতিক দলের অভ্যন-রে রাজনৈতিক চর্চা বাড়াতে হবে। জনগণের মত প্রকাশে যাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, জনগণের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা না হয় এজন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়াস চালাতে হবে আমাদের। অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে বক্তারা ’না’ ভোটের পুন:প্রচলন এর দাবী জানান। রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের স্বপক্ষে অধিকাংশ বক্তা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে সুজন সিলেট এর সদস্যগণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভাগীয় পরিকল্পনা সভার আয়োজন করে এবং তাদের করণীয় চিহ্নিত করে। সুজন সদস্যরা জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন, সুজন বন্ধু কমিটি গঠন, নতুন ভোটারদের নিয়ে কর্মশালা, মানব বন্ধন, সমাবেশ, আলোচনা সভা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জনগণের মুখোমুখি করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে স’ানীয় পর্যায়ে প্রশাসন, সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময়, সংখ্যালঘুদের সাথে মতবিনিময়, প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য সংগ্রহ, নতুন সদস্য সংগ্রহ প্রভূতি বিষয়ে পরিকল্পনা করেন।