সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গোলটেবিল বৈঠক ‘সুজন’ -এর উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনদুর্ভোগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

‘সুজন’ -এর উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনদুর্ভোগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত


নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনদুর্ভোগ ও করণীয়’ ‘ শিরোনামে আজ ২৯ মার্চ ২০২২, সকাল ১০:০০টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল-এ (ভিআইপি লাউঞ্জে) একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকের মূল আয়োজন করেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর ঢাকা মহানগর কমিটি। বৈঠকটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

মূল প্রবন্ধটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি জনাব ক্যামেলিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জনাব ক্বাফী রতন, নাগরিক সমাজের সভাপতি জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়াও সুজন- ঢাকা মহানগর ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।

জনাব বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের আজকের প্রোগ্রাম সাধারণ মানুষের জন্য। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার রকেটনিয়ে রকেট গতিতে উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবের সাথে তার কোন মিল নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের বিরাজমান যে নির্বাচন ব্যবস্থা, তা আজ ভেঙ্গে পড়েছে। এই দেশে সব দিকেই এখন সিন্ডিকেট। এর উত্তরনের জন্য দরকার একটি দায়বদ্ধ সরকার।

জনাব জুবায়েরুল হক নাহিদ বলেন- অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি কিভাবে ব্যবসায়ীদের একটি কুচক্রী মহল জনগণকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে কুক্ষিগত করে ফেলছে। আশা করছি সুজন-এর এই আয়োজনে আপনাদের কাছ থেকে আমরা এই সমস্যার সমাধান বের করতে পারবো এবং এই কথাগুলো আমরা নীতিনির্ধারকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো।

বৈঠকটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তিনি বলেন বৈশ্বিক করোনা মহামারীর ঢেউ সামলে স্বাভাবিক আয়ে ফিরতে লড়াই করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের এ লড়াই আরও কঠিন করে তুলেছে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ। চাল, ডাল, তেল, আটা থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম ক্রমাগতভাবেই বেড়েই চলেছে। বাজারের উত্তাপ সইতে না পারায় মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়াচ্ছেন। নিত্যপণ্য সেখানেও হাহাকার। ভোক্তা ও বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার, নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে আনাসহ বাজার তদারকি জোরদার করা হলেও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। বাজারে বেশি মুনাফা লুটতে এখনো তৎপর মজুতদার ও সিন্ডিকেট চক্র। এটা খুবই অনাকাক্সিক্ষত, দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্যের বিশাল পার্থক্যই বলে দিচ্ছেন আমাদের বাজার ব্যবস্থা ভোক্তাবান্ধব নয়। উৎপাদন অথবা আমদানি পর্যায় এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্যের যে বড় ব্যবধান, তা ন্যায্য ব্যবসার পরিচয় বহন করে না।

জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন সবগুলো উৎপাদন, বিপনন এবং বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বভাব একইরকম হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দৌরাত্মে কেউ পিছিয়ে নেই। দুর্নীতি যে করে এবং যে প্রশ্রয় দেয় উভয় দলই সমান অপরাধী।

জনাব ক্বাফী রতন বলেন, আমাদের সমাজ এখন অলিগার্কিক (ঙষরমধৎপযরপ) সমাজে পরিণত হয়েছে। সিন্ডিকেটের হাতে আমাদের তেল, চিনি ইত্যাদি তুলে দেয়া হয়েছে। মুষ্টিমেয় একটি শক্তি এখন সবকিছু কন্ট্রোল করছে। আমাদের সরকার এখন ‘ অফ দি ব্যবসায়ী, বাই দি ব্যবসায়ী এবং ফর দি ব্যবসায়ী’ সরকারে পরিণত হয়েছে। কৃষকেরা আমাদের দেশের একমাত্র উৎপাদক। কিন্তু তারাই নিজেদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। এদেশে বর্তমানে ৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসিমার নিচে বসবাস করছে। গতকালকের হরতাল আমরা সফল করতে পেরেছি কারন সাধারণ জনগন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা ড়ষরমধৎপযু নয় বরং শষবঢ়ঃড়পৎধপু। আমাদের সরকার নিজেই এই সিন্ডিকেট প্রমোট করছেন। আমি নিজে দেখেছি চট্টগ্রামে টিসিবির ট্রাকের পিছনে ২০০জন নারীপুরুষ দৌড়াতে দেখেছি কারন টিসিবির পণ্য তারা পাননি, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। দেখলে মনে হয় দুর্ভিক্ষ নিয়ে কোন চলচ্চিত্রের একাংশ। আমি মনে করি, সবচাইতে বড় সিন্ডিকেট হল সরকার। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চুরির সরকার সরাতে না পারছি, দেশে কিছু ঠিক হবে না।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Related Post

“উন্নয়ন, স্বশাসন ও স্থানীয় সরকার” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক“উন্নয়ন, স্বশাসন ও স্থানীয় সরকার” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

গত ১০ এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১০টায় ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব-এর ভিআইপি লাউঞ্জে একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘সুজন’-এর সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ-এর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ

“সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার, ক্ষমতা ও দায়মুক্তি: স্বরূপ ও ব্যাপকতা” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত“সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার, ক্ষমতা ও দায়মুক্তি: স্বরূপ ও ব্যাপকতা” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত

আমাদের সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদে সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তির বিধান রয়েছে। সাংবিধানিক বিধানানুযায়ী সংসদ আইনের দ্বারা এগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু এ বিষয়ে অদ্যাবধি কোনো আইন

সুজন-এর উদ্যোগে ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকসুজন-এর উদ্যোগে ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

‘বিরাজমান সাংবিধানিক কাঠামোই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা’: সুজন নেতৃবৃন্দ ‘আমাদের বিরাজমান সাংবিধানিক কাঠামোই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে একটি অন্তর্নিহিত প্রতিবন্ধকতা। এমতাবস্থায় এমনকি সবচেয়ে স্বাধীন, শক্তিশালী