সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গোলটেবিল বৈঠক সুজন-এর উদ্যোগে ‘নগর সরকারই সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

সুজন-এর উদ্যোগে ‘নগর সরকারই সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

Round Table_Shujan 2নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিতে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি সুজন নেতৃবৃন্দের
ঢাকা মহানগরে সুশাসন এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে ‘নগর সরকারব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ ২৩ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘নগর সরকারই সমাধান’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সুজন নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপসস্থাপন করেন সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। আলোচনায় অংশ নেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য জনাব আলী ইমাম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকুসদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, স্থপতি ইকবাল হাবিব, অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক নাজমা হাসিন, রাজনীতিবিদ জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জনাব এ.এস.এম আকরাম, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী জনাব বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাহরানে সুলতান বাহার, ড. ক্যাপ্টেন রেজাউল করিম চৌধুরী, মো. জামান ভূঞা এবং কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে সুশাসন ও সেবা নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান ‘সিটি করপোরেশন’ কাঠামোতে আর তা পুরাপুরি সম্ভব নয়। কারণ ঢাকা মহানগরী শাসনের প্রধান সমস্যা হলো একক কর্তৃপক্ষের অভাব। ঢাকায় ৫৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা রয়েছে। এগুলো আটটি মন্ত্রণালয়ের অধীন। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় তাদের নীতি অনুযায়ী তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনা করে। ফলে মেয়রের পক্ষে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, ‘যে নগরে জনসংখ্যা পঞ্চাশ লাখ অতিক্রম করবে সেই নগরে নগর সরকার গঠন করা দরকার। নগর সরকার হবে একটি পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো। নগর সংসদ, নগর প্রশাসন ও নগর আদালত মিলে নগর সরকার গঠিত হবে। মেয়র নগর সরকারের প্রধান হবেন। কাউন্সিলররা নগর সংসদের সদস্য হবেন। এই সংসদ শুধু নগরের জন্যে নীতি প্রণয়ন করবে। নগর সংসদে নগরের সমস্যা আলোচিত হবে। নগরীর সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগর সরকারের অধীন হবে। মেয়র নগরীর মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম বাস-বায়ন করবেন বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। নগর পুলিশের মাধ্যমে নগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগর সরকার হলেই যে সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে বড় ধরনের ওলটপালট হবে তা নয়। সরকারি সেবা সংস্থা যেমন, ওয়াসা, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির স্থানীয় পরিচালকবৃন্দ সবাই তাদের বাজেট ও দায়িত্ব-সহ নগর সরকারের অধীনে চলে যাবেন। নগর সরকারের নির্দেশনায় তাঁরা পরিচালিত হবেন। নগর সরকার প্রধান নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেবেন। এই ‘সমন্বয়কারীরা’ কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীর মতো স্থানীয়ভাবে মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। প্রতিটি সেবাদানকারী সংস্থার কাজ সমন্বয়ের জন্যে মেয়রের কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের জন্য পৃথক কার্যালয় (মন্ত্রণালয়) থাকবে। কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা যেমনিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তেমনি মেয়রের নেতৃত্বে একটি ‘নগর নির্বাহ পরিষদ’ নগরের শাসন পরিচালনা করবে। নগর কাউন্সিলের সদস্যগণ নগরের পার্লামেন্ট হিসেবে নিয়ম নীতি প্রণয়ন এবং ‘নগর নির্বাহ পরিষদ’কে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখবেন।’
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে শুধু কাউন্সিলর (এমপি) নির্বাচিত হবে। দলীয় ভিত্তিতেই এই নির্বাচন হতে পারে। বাংলাদেশে দলের বাইরে কোনো বড় নির্বাচন হয় না। যেসব নির্বাচনে দলের কথা বলা হয় না সেসব নির্বাচনেও পরোক্ষভাবে দল ভূমিকা পালন করে। নির্বাচিত কাউন্সিলররা তাঁদের নেতা নির্বাচন করবেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই নেতা ও তাঁর পরিষদের নাম ঘোষণা করা যায়। ভোটাররা তখন একটি প্যানেলকে নির্বাচিত করবেন। সংসদীয় পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হলে মেয়র একনায়ক হতে পারবেন না। কাউন্সিলরদের ভোটেই তাঁকে মেয়র হতে হবে। কাউন্সিলররা চাইলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে মেয়র পরিবর্তন করতে পারে।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৫৯নং অনুচ্ছেদে ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স’ানীয় শাসনের ভার প্রদান” করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবিধানের এ বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারাই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়ার কথা। তাঁরাই জনগণের সকল প্রকার সেবা নিশ্চিতকল্পে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু তাদের ক্ষমতা সীমিত থাকলে এবং নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে তা সম্ভব হবে না। এজন্য নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিকল্পে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিকে জনদাবিতে পরিণত করতে হবে।’
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘মেয়রদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা না থাকায় তাঁরা উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করতে পারেন না। তাই নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করে একক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা দরকার। এজন্য স’ানীয় সরকার আইনের আমূল সংস্কার করে নগর সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’ তবে ঢাকাকে দুই ভাগ করে রেখে নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নগর সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দীর্ঘদিনের। এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। আশার কথা হলো- আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক প্রার্থীই নির্বাচিত হলে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে নগরের উন্নয়নে নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন মেয়র চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন।’
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম একটি আধুনিক শহরে পরিণত করা সম্ভব। আর এজন্য দরকার নগর সরকার। যে সরকারের অধীনে আসবে রাজধানীতে সেবা দানকারী ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে রাজধানীর সাথে সাথে সমান্তরালভাবে সারাদেশের উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে উন্নয়ন সুষম হবে।’
জনাব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হত। কিন্তু বর্তমানে আমরা যেন পিছনের দিকে যাত্রা করছি। মেয়রদের দাবির পরও বিগত সরকারগুলো নগর সরকার প্রতিষ্ঠা করেনি। তাই নগর সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সমাজ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। তাই এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। নগর সরকার ছাড়া যে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়, এটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে।’

Related Post

গণতন্ত্র আজ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারাগণতন্ত্র আজ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

গত ২৮ মার্চ ২০১২, সকাল ১০ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজনের উদ্যোগে, আমাদের গণতন্ত্র কোন পথে’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে সঞ্চালক

সুজন-এর উদ্যোগে ‘গুম ও অপহরণ: নাগরিক উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিতসুজন-এর উদ্যোগে ‘গুম ও অপহরণ: নাগরিক উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশে গুম ও অপহরণ এক সর্বনাশা মাত্রা লাভ করেছে। এতে নাগরিক সমাজ ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ ৮ মে ২০১৪ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুজন-সুশাসনের

সরকারের সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার শামিল-গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারাসরকারের সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার শামিল-গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

গত ২৯ wW‡m¤^i ২০১১, সকাল ১০.৩০টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজনের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার বিষয়ে সামপ্রতিক সরকারি সিদ্ধান্ত ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সুজন সহ-সভাপতি