মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চলছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন করে গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে এই নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা। মূলত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের নামে চলছে এই হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা সহস্র ছাড়িয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে আজ এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ১০.০০টা থেকে ১১.০০টা পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত। মানবন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুজন মহানগর কমিটির জুবায়েরুল হক নাহিদ, সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও মো: নাজিমউদ্দিন, ঢাকা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ইউনূস আলী মাসুদ ও মো: সেলিম, জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা হাফিজ, জাভেদ জাহান, মো: ইব্রাহিম প্রমুখ।
সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা ও প্রাণ বাঁচানো জন্য লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পালিয়ে আসার সময়ও পলায়নপর মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। পলায়নের সময় নৌকাডুবিতেও প্রাণ হারিয়েছে অনেকে। এখন পর্যন্ত নৌকাডুবির ঘটনায় ৯১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানা গেছে। এরা মূলত মুসলিম হলেও কিছু সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও রয়েছে এদের মধ্যে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের এই ঘটনা নতুন নয়, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রথম ১৯৭৭ সালে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে স্বদেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। তখন ২ লক্ষ ৮০ হাজার বাংলাদেশে আসলেও এদের মধ্য থেকে ১৯৭৮ সালে কিছু ফেরত নেয়া হয়। ১৯৯২ সালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয় এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে কিছু সংখ্যক শরনার্থীকে স্বদেশে ফেরত নেয়া হয়। ২০১২ সাল থেকে উপর্যুপরি রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও দেশ থেকে বিতাড়িত করার ঘটনা ঘটেতে থাকে। ২০১৩, ২০১৪ সালেও ২০১৬ একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। ২০১৬-এর অক্টোবর থেকে পরিচালিত সেনা অভিযানে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানা যায়। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে; যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক বলে জানা যায়। শুধু তাই নয়, ভারত, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যেও রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে।
বর্তমানে রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বের সচেতন ও মানবতাবাদীদের এগিয়ে আসাসহ বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমাদের জোরালো দাবি:
* অবিলম্বে রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করা হোক।
* রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলসহ জাতিসংঘকে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কুটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হোক।
* জাতিসংঘ কর্তৃক মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হোক।
* বাংলাদেশে আশ্রিত শরনার্থীদের দ্রুত স্বদেশে ফেরত নেয়াসহ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও যথাযথ পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
* শরনার্থীদের যথাযথভাবে নিবন্ধন করাসহ পরিচয়পত্র প্রদান করা হোক। যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বাংলাদেশে অবস্থান করবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার অন্যান্য রাষ্ট্র তথা দাতাগোষ্ঠী কর্তৃক বহন করা হোক।
* রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হোক।
* জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাখাইন রাজ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিশন’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ মিয়ানমার সরকার কর্তৃক অবিলম্বে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
* কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা হোক।