সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক জাতীয় সম্মেলন,সম্মেলন সুজন-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন

সুজন-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন


IMG_20141227_135041বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হলো সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন-২০১৪। আজ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ-এর মাল্টিপারপাস হলরুমে (ঢাকা) অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আগত ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রায় আট শ’ জন সুজন নেতৃবৃন্দ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সকাল ১০.০০ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সুজন কেন্দ্রীয় সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব আবু হেনা ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজ উদ্দিন আহমদ, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষক আসিফ নজরুলরুবায়েত ফেরদৌস, বিশিষ্ট টিভি টকশো উপস্থাপক আশরাফ কায়সার ও ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সহ-সভাপতি এ.এস.এম শাহজাহান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম ও অধ্যাপক নাজমা হাসিন ও ড. জালাল উদ্দিন প্রমুখ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে আইন আছে, শাসন আছে, কিন্তু সুশাসন নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। কিন্তু জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলের পরিবতে বর্তমানে দেশে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুজন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছি। এরফলে আমাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’

ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে সুজন-এর মত নাগরিক সংগঠনগুলোকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হচ্ছে, সরকার বদল হচ্ছে, কিন্তু গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে। এর কারণ হলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। আমাদের সংসদ দুর্বল, নির্বাচনী ব্যবস্থা দুর্বল। আমরা সুশাসন থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। অথচ বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। আমি মনে করি, আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবেই।’
জনাব আবু হেনা বলেন, ‘আমি যখন প্রধান নির্বান কমিশনার ছিলাম তখন সুজন-এর কার্যক্রম ছিল না। আমি খুবই গর্বিত হতাম, যদি সে সময় সুজন থাকতো। বর্তমানে সুজন কাজ করছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতান্ত্রিক একটি দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, তথা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশকে বলা হত বটমলেস বাস্কেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি। কিন’ আজকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, সাক্ষরতা ও নারী শিক্ষার হার বেড়েছে এবং গার্মেন্টস খাতের সমৃদ্ধি হয়েছে। এ তথ্যগুলো আমাদের আশান্বিত করে। কিন্তু আজকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি বেড়েছে। আমরা তো এ রকম সমাজ ভাবিনি। এ থেকে মুক্তি দরকার।’
এ.টি.এম শামসুল হুদা বলেন, ‘বতর্মানে গণতন্ত্র মানে বুঝানো হয়- পাঁচ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন অর্থাৎ নির্বাচনী গণতন্ত্র। এরফলে সংসদ কার্যকর হয় না।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্র বলি। অথচ তাদের নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভাল চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে অথনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, এটা ভাল সংবাদ। কিন্তু বর্তমানে একটি নাগরিক সনদও নিতে ঘুষ দেয়া লাগে। তারমানে প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি এমনকি গ্রামাঞ্চলেও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’
ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বৈরি রাজনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যেও সুজন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সুজন যে মঙ্গল জ্বালিয়ে রেখেছে তা আলো জ্বালাবে। সুজন তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাবে এমনটা আশা করছি।’
ড. এমাজ উদ্দিন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উন্নয়ন না হলে সুশাসন নিশ্চিত হয় না। মানুষের সম্মান প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সুশাসন প্রয়োজন। এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন গণতন্ত্র।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক সংগঠনই তাদের কার্যক্রম চালান অবস্থা বুঝে। কিন্তু সুজন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অর্থাৎ যারাই ক্ষতায় থাকুন না কেন, যেখানেই কুশাসন, সেখানেই সোচ্চার সুজন।’ এ সময় তিনি সুজন-এর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন।

আশফাক কায়সার বলেন, ‘বাংলাদেশের আজকের যে গণতন্ত্রের অবস্থা সে অবস্থায় দলনিরপেক্ষ মানুষ তথা সুজন এর মত সংগঠনের ভূমিকা থাকা দরকার। গণতন্ত্রের নামে বর্তমানে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই দলনিরপেক্ষ ভূমিকা দরকার। কারণ বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র দেখতে চায়।’

সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও জাতীয় সনদ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক সংস্কার ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ ও তরুণ সমাজের মধ্যে গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড-সহ অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ সকাল ১২.০০টায় দ্বিতীয় পর্বে কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও জাতীয় সনদের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সারা দেশ থেকে আগত সুজন নেতৃবৃন্দ।

Related Post

সুজন-এর সপ্তম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্নসুজন-এর সপ্তম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন

বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হলো সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর সপ্তম জাতীয় সম্মেলন-২০২০। আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ-এর মাল্টিপারপাস হলরম্নমে

সুজনের দশম বর্ষপূর্তি ও জাতীয় সম্মেলনে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বক্তব্যসুজনের দশম বর্ষপূর্তি ও জাতীয় সম্মেলনে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বক্তব্য

সুজনের দশম বর্ষপূর্তি ও জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বক্তব্য (০৫ জানুয়ারি, ২০১৩) একটি রাষ্ট্রের কিছু সার্বভৗম অধিকার আছে। ঐতিহ্যগতভাবে সেই অধিকারকে তিনভাগে ভাগ করা হয় – নির্বাহী

‘সুজনে’র চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন ও দশম বর্ষপূর্তি সফলভাবে সম্পন্ন‘সুজনে’র চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন ও দশম বর্ষপূর্তি সফলভাবে সম্পন্ন

“সচেতন, সোচ্চার ও সংগঠিত জনগণই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ৫ জানুয়ারি, ২০১৩ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের