সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই’

‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই’


‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মূল নির্বাচন কমিশনের। তাই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা রোধে নির্লিপ্ত না থেকে কমিশনকে কঠোর ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা আজ সকাল ১১.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সুজন’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী এবং সুজন কেন্দ্রীয় সহযোগী সমন্বয়কারী শামীমা মুক্তা।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে আমাদের তিনটি প্রধান সংশয় রয়েছে। প্রথমত, এই নির্বাচন হচ্ছে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। এই অবস্থায় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই এ ব্যাপারে কমিশনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংসদ বহাল রেখেই। তাই সতর্ক থাকতে হবে যে, মন্ত্রী বা সাংসদরা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন এবং তাদের পদের প্রভাব ব্যবহার না করতে পারেন। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নৈতিকতা ও সাহসিকতার সাথে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা কর্ণোগোচর বা দৃষ্টিগোচর হলে, অভিযোগ দায়েরের অপেক্ষা না করে দ্রুত  ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো অভিযোগে পেলেও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই।’ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশনের অগাধ ক্ষমতা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা- সাংবাদিকদের করা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের অধীনেই রংপুর সিটিতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন, সরকার, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই যদি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তাই আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবো।’

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সংকট তৈরি হয়। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি পারস্পরিক আলোচনা ও একটি সমঝোতা স্মারক বা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অনেক দেরিতে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও দলগুলোর মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তবে আশার কথা এই যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে বলেই আমাদের ধারণা। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই উৎসবমূখর পরিবেশে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদানের কাজ সম্পন্ন করেছে বা করার পথে। যদিও দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানকালে শো-ডাউন নিয়ে বড় দু’টি দলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণই নয়, ভোটারদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণও আমরা প্রত্যাশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ বা ক্ষমতার মালিকরা সরাসরি দেশ পরিচালনায় অংশ নেয় না। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেয় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে। আর এই জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পদ্ধতিই হচ্ছে নির্বাচন। এই পদ্ধতি বা বাছাই প্রক্রিয়া যদি সঠিক হয়, তবে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে চলে আসে। পাশাপাশি  সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগের অবশ্য কর্তব্য হলো নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। সঙ্গত কারণেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে তার আইনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তবে এও সত্য যে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের একক প্রচেষ্টায় কখনোই সম্ভব নয়। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, নির্বাচনে প্রিতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও সমর্থক এবং ভোটারদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের প্রতি ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে কিছু আহবান তুলে ধরা হয়। নিম্নে সে আহবানগুলো তুলে ধরা হলো:

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান:

  • সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগসহ সকল অংশীজনদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করুন; নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ থেকে সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করুন এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন; সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভালো দৃষ্টান্তসমূহ অনুসরণ করুন; সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন; মনোনয়নপত্রের সাথে প্রার্থী প্রদত্ত হলফনামা ও আয়কর বিবরণীসমূহ দাখিলের সাথে সাথেই তথ্য সংগ্রহে আগ্রহীদের কাছে সরবরাহ করুন এবং দ্রুত তার সথে ওয়েবসাইটে আপলোড করুন; হলফনামায় প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যসমূহের সঠিকতা যাচাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করুন; প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করুন এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন; নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে মাননীয় সংসদগণ যাতে বিশেষ কোন সুযোগ না পান সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন; কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন; প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ হিসেবে নিয়োগের জন্য যাদের মনোনীত করা হয়েছে তাদের পরিচয় স¤পর্কে নিশ্চিত হোন। কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা কোনো প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজন যেন এসকল পদে দায়িত্ব না পান সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। কেউ নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যাতে তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ না করে, গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাউকে হয়রানি না করেন সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন; সারাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ তারা যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং নির্বাচনের পরে যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করুন; প্রার্থীদের হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মানুযায়ী তথ্যচিত্র তৈরি করে ভোটারদের মাঝে তা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করুন; ভোটকেন্দ্রে সকল দলের পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। কোনো ভোটকেন্দ্র বা এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে সেই এলাকার নির্বাচন স্থগিত করুন এবং প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহণ করুন; শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে আগাম সন্দেহ প্রকাশ না করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই বার্তা দিন যে, কোনো ধরনের অনিয়ম বা কারসাজির সাথে জড়িত থাকলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

সরকারের প্রতি আহবান:

  • সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন; নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কোনোভাবেই কোনো দলের পক্ষে প্রভাবিত করবেন না; নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই বার্তা দিন যে, সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান:

  • অসৎ, অযোগ্য, অপরাধপ্রবণ, কালোটাকার মালিক, ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ ও সম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের পরিহার করুন এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রকৃত রাজনীতিকদের তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মনোনয়ন দিন; যে কোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন। ‘আমরা বিজয়ী হবোই’ এই ধরনের বক্তব্য না দিয়ে, গণরায় মাথা পেতে নেয়ার ঘোষণা দিন; এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।

মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান:

  • নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন; পদ ব্যবহার করে বাড়তি কোনো সুবিধা গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন; এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের কোনোভাবেই নিজের বা অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য প্রভাবিত করবেন না।

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহবান:

  • নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন; কোনো বিশেষ কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন; এবং ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সৃষ্টিকারীসহ জাল ভোট প্রদানকারীদের পুলিশে সোপর্দ করুন এবং প্রয়োজনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করুন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান:

  • পক্ষপাতহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন; সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন; সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন, যাতে নিরপরাধ কেউ হয়রানীর শিকার না হন; ভোটকেন্দ্রে গমনাগমনকালে কোনো ভোটার যাতে বাধার সম্মুখিন না হন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তীকালে সারাদেশের বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন; কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর সপক্ষে যেন কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারা, ব্যালট ছিনিয়ে নেয়া, জাল ভোট প্রদান ইত্যাদি ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন; এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

গণমাধ্যমের প্রতি আহবান:

  • নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করুন।
  • অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য প্রার্থী বা অন্য কাউকে সতর্ক করা হলে অথবা জরিমানা বা অন্য কোনো ধরনের শাস্তি প্রদান করা হলে তা ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার করুন।
  • প্রার্থীদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।
  • প্রার্থী কর্তৃক হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যসমূহ ভোটারদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরুন, যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন।

প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি আহবান:

  • নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন; অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ভোট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন; ভোটার বা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন বা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন; এবং নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন এবং যে কোনো ধরনের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিন।

সচেতন নাগরিকদের প্রতি:

  • অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলেই যেন স্ব স্ব অবস্থানে থেকে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেন, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করুন; এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে আওয়াজ তুলুন এবং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন, যাতে তাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।

ভোটারদের প্রতি আহবান:

  • ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন; অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন; এবং দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, ধর্মব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোন অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘সুজন’-এর উদ্যোগে যেসব সম্ভাব্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে তা তুলে ধরা হয়। কর্মসূচিসমূহ হলো: ১. সংবাদ সম্মেলন; ২. জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান; ৩. ভোটারদের মধ্যে তথ্যচিত্র বিতরণ; ৪. সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রচারণা; ৫. মানববন্ধন ও পদযাত্রা; ৬. প্রচারণায় সোশাল মিডিয়া ব্যবহার ইত্যাদি।

Related Post

সুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি’ বলে

‘চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হলেন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হলেন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ ব্যবসায়ীদের করায়ত্ত হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ নির্বাচনে শুধু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে অন্যান্য যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ থাকে না বলে মন-ব্য করেছেন

প্রস্তাবিত ‘উপজেলা আইন’ বিষয়ে সুজনে’র সংবাদ সম্মেলনপ্রস্তাবিত ‘উপজেলা আইন’ বিষয়ে সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন

নবনির্বাচিত সরকার গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রণীত ‘স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮’ অনুমোদন না করে একটি নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার ১৯৯৮ সালের ‘উপজেলা পরিষদ