সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক Uncategorized,সংবাদ সম্মেলন ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌর নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌর নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Jpeg

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১.০০টায়, প্রগতি কনফারেন্স সেন্টার, মুক্তি ভবন, ঢাকাতে সুজনÑসুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌর নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেৃতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পৌরসভা নির্বাচন, আক্ষরিক অর্থেই, আমাদের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের দোষারূপে লিপ্ত। এদিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু হওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলছে। অনেক এলাকা থেকে দুর্বল প্রার্থীদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। আর এসব অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারো বিরুদ্ধেই কোনোরূপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী ব্যবস্থা না নিয়ে নির্বাচন কমিশন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেই যাচ্ছে। একইসঙ্গে যেন নিজের অসহায়ত্বের প্রমাণ হিসেবে, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘন থামাতে কমিশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

তিনি প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, যুগান্তর ও ইত্তেফাক প্রত্রিকায় প্রকাশিত সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, গত ২৪ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১২টি নিজ দলের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে, আর ৩৮টি ঘটনা ঘটেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে। সহিংসতা শুরু হয় মূলত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় থেকে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৭ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুটি দৃশ্যমান সহিংস ঘটনা ঘটেছে। গত ২ দিনে ১১টির মতো সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ২৭১ জন আহত হয়েছেন। তিন জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতার ঘটনাও সংগত কারনেই বাড়ছে। এসব দৃশ্যমান সহিংসতার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কারো বিরুদ্ধেই কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আমরা শুনিনি।

তিনি বলেন, দৃশ্যমান সহিংসতা ছাড়াও অদৃশ্য নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। একটি বড় নির্বাচনী অপরাধ ঘটেছে ফেনীতে, যেখানে তিনটি পৌরসভার ৪৮টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৪৪টিতেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ব্যাপারে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন প্রার্থীদের কাছ থেকে জোর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে কমিশন এব্যাপারে টু-শব্দটিও করেনি। এছাড়াও ৬ জন মেয়র ১৩৪ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, যা পৌরসভা নির্বাচনের জন্য একটি রেকর্ড।

তিনি আরো বলেন, গত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির সংবাদ আমরা গণমাধ্যমের সুবাদে জানতে ও দেখতে পেরেছি। তাই আসন্ন নির্বাচনে গণমাধ্যমের রিপোর্টিংয়ের ওপর বাধা-নিষেধ আরোপ করার কমিশনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসে কমিশনের প্রতি আমাদের আহ্বান: যেসব প্রার্থী নিজে বা প্রার্থীর পক্ষে অনিয়ম করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে দোষীকে জেলে প্রেরণ করুন। এমনকি দু একজনের প্রার্থিতা বাতিল করুন। প্রয়োজনে নির্বাচন স্থগিত করুন বা নির্বাচন বাতিল করুন। যেসব প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব দূরীকরণে কঠোর ব্যবস্থা নিন। কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ভোট গণনার ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করুন।

সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান: সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে তা নিশ্চত করুন। নির্বাচনী দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিন।

জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এবারেই প্রথম দলভিত্তিক পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো দায়বদ্ধ ও পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি। তাই হত্যা মামলার আসামীসহ অনেক অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন, যাদের সংযত আচরণ তথা আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়াও ২৩ জন সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।

পৌর নির্বাচনে সরকারের কোন পরিবর্তন আসবে না, সবগুলো পৌরসভাতে যদি সরকারি দল জিতে যায় বা হেরে যায় তাতেও কোন পরিবর্তন আসবে না উল্লেখ করে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, তবে জনসমর্থন কাদের পক্ষে তা জানা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমের ওপর বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক নয়। তিনি নির্বাচন কমিশনকে সাংবাদিকদের ওপর সকল প্রকার বাধা-নিষেধ তুলে নেবার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, অবাক করা বিষয় হলো, ৬ জন মেয়র ও ১৩৪ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে এবং তারা সকলেই সরকারী দলের একজনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নয়। সত্যিই বিষ্ময়কর! এদের কেউ কেউ বিরোধী দলের হওয়াটাই উচিৎ ছিলো। আমি মনে করি, এসকল জায়গায় অগণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করছে এবং এঘটনার পেছনে অবশ্যই ক্ষমতাসীনদের মদদ রয়েছে।

মূল প্রবন্ধ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Related Post

সুজন-এর আয়োজনে ঘিওরে প্রার্থী ও ভোটারদের নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠানসুজন-এর আয়োজনে ঘিওরে প্রার্থী ও ভোটারদের নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠান

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও ভোটারদের নিয়ে গতকাল রোববার ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক। উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান বিকেল

‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খুলনা মডেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নেতৃবৃন্দ। তারা আজ ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি

‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্তক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্তক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘ব্যাপক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী অনিয়মের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবচেয়ে মন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর নেতৃবৃন্দ। আজ ২৬ মে ২০১৬ সকাল