সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান

Press conference 21.03.15সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২১ মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১.০০টায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এর সেমিনার হলে (কাকরাইল, ঢাকা) উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সহ-সভাপতি বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জনাব জাকির হোসেন এবং সুজন নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “গত ১৮ মার্চ ২০১৫ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মনে করি, এই নির্বাচন ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা সিটি করপোরেশন দুটিতে নির্বাচন না হওয়ায় এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিকরা বিভিন্ন সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে শিগগিরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এবং জুলাই মাসের মধ্যেই এ নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
তিনি এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করায় নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানান। কিন্তু একইসাথে এ নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং কিছু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথাও জানান। ড. বদিউল বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রশ্নটি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা নিয়ে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণের ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরের ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬টি এবং ঢাকা দক্ষিণের ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭টি। ঢাকা উত্তরের ভোটার সংখ্যা দক্ষিণের চেয়ে প্রায় পাঁচ লাখ বেশি হলেও দক্ষিণের ওয়ার্ড সংখ্যা ২১টি বেশি। ভোটার সংখ্যার সঙ্গে ওয়ার্ড সংখ্যার এ বিরাট অসঙ্গতি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। আরেকটি অসঙ্গতি হলো- ঢাকার দুই সিটিতে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার সংখ্যায় ব্যাপক তারতম্য।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি মানদণ্ড – প্রশাসনিক সুবিধা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং ভোটার সংখ্যা – ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শহরাঞ্চলে সাধারণত প্রশাসনিক সুবিধা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতায় তারতম্য থাকে না, তাই ভোটার সংখ্যায় যথাসম্ভব সমতাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। মোট ভোটার সংখ্যা, ওয়ার্ড সংখ্যা ও ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার সংখ্যার সঙ্গে প্রতিনিধিত্বশীলতার প্রশ্ন জড়িত। আর গণতন্ত্রের মূলকথাই হলো প্রতিনিধিত্বশীলতা। তাই কোন যুক্তিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডসংখ্যা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ডের সীমানা পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোটারদের সম-প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান- ও ভূমিকা নিয়েও অনেকের মনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। ১ মার্চ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জুন/জুলাই মাসের মধ্যেই এই তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। এরপর হঠাৎ করেই ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে পেট্রোল বোমা হামলা ও বিচার বহির্ভূত হত্যাসহ নানা ধরনের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী মামলার কারণে কারারুদ্ধ বা পলাতক রয়েছেন। অনেকেই মনে করেন যে, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতা অনেকটা প্রশমিত হতো এবং অপেক্ষাকৃতভাবে শানি-পূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করতো। ফলে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতেন এবং ভোটাররাও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন।’
সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন এমন অভিযোগ এনে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। কিন’ আমরা লক্ষ করছি যে, কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে তিন সিটিতেই অসংখ্য বিলবোর্ড স্থাপন ও দেয়ালে পোস্টার সাটার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রেও তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন- নির্বাচন কমিশন ছিল সম্পূর্ণ নির্বাক। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এ ধরনের প্রচারণার সুযোগে ধনাঢ্য প্রার্থীরা নির্ধারিত ব্যয়সীমার বাইরে ভোটারদেরকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিমাণের অর্থ ব্যয় করতে পারেন, যা নির্বাচনী ক্ষেত্রকে অসমতল করে তোলে। এমন অসমতল ক্ষেত্র কম বিত্তবান প্রার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক।’
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “আশার কথা যে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর পক্ষ থেকে আশা করি, তফসিল ঘোষিত হওয়া তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শানি-পূর্ণ হবে, যার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নির্বাচন না হওয়ায় একজন নাগরিক হিসেবে আমি নিজেও ভুক্তভোগী।’ তাই এ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা-সহ যানজট সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে। কিন্তু বিগত আট বছর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়াই একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এতে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘিত হয়েছে।’ তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
ড. হামিদা হোসেন, ‘তফসিল ঘোষিত হওয়া নির্বাচনগুলোতে নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।’ বিশেষ করে তিনি নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধানের লঙ্ঘিত হলে সে সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, সংবাদ সম্মেলনে সুজন পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনগতভাবে নির্দলীয় এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন/সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকার এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া সংগঠন হিসেবে সুজন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করবে তা-ও গণমাধ্যমের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হয়।

Related Post

উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশউপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গত ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ প্রথম পর্যায়ে ১০২টি উপজেলার জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন-২০১৪ এর কার্যক্রম। এ পর্যন- চার দফায়

‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন: কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন: কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ তথা সুষ্ঠু হয়নি। অসংগতি ও অনিয়মে ভরা এই নির্বাচন কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই এখনই আমাদের সোচ্চার হতে হবে নির্বাচন পদ্ধতি