সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নে সফলতা

স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নে সফলতা

HTML clipboard
বদিউল আলম মজুমদার
আগামী ৪ আগস্ট চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে প্রার্থীদের নিজেদের এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের সম্পর্কে কিছু ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য হলফনামা আকারে পেশ করতে হয়েছে। এসব তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্য ভোটারদের ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা জেনে-শুনে-বুঝে সঠিক প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা এবং আমরা মনে করি, এ ধরনের উদ্যোগের ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করবে আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণগত মান ও বহু কাঙ্ক্ষিত সুশাসন।
স্নরণ করা যেতে পারে, বহু প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখের রায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক’ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বস্তুত ২০০২ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন−আদালতের নির্দেশনা এবং আইনি বিধান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই ‘সুজন’ এ কাজের সূচনা করেছে।
গত বছরের জুন মাসে গঠিত ‘স্থানীয় সরকার গতিশীল ও শক্তিশালীকরণ কমিটি’ প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তা খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে এ গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি সম্প্রতি জারি করা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা অধ্যাদেশ থেকে বাদ দিয়ে তা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনী বিধিমালায় [ধারা ১২(৩)(ঈ)] প্রত্যেক সিটি এবং পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে নির্ধারিত ফরমে একটি হলফনামা দাখিলের বিধান করা হয়েছে। হলফনামায় নিচের তথ্যাদি অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক: (১) প্রার্থী কর্তৃক অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি; (২) বর্তমানে তিনি কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কি না; (৩) অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কি না, থাকলে রায় কী ছিল; (৪) তাঁর ব্যবসা বা পেশার বিবরণী; (৫) তাঁর আয়ের উৎস বা উৎসসমূহ; (৬) তাঁর নিজের এবং অন্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী; এবং (৭) কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি একক বা যৌথভাবে বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল সদস্য কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ। উল্লেখ্য, পৌরসভার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়নি।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনী বিধিমালায় (ধারা ৪৯) প্রত্যেক সিটি এবং পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় এবং উৎসের বিবরণী দাখিল করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিবরণীর সঙ্গে প্রার্থী আয়করদাতা হলে, তাঁর সম্পদ বিবরণীসহ সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন ও কর পরিশোধের প্রমাণপত্রের কপি সংযুক্তির বিধান করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিধিতে নির্বাচন-পরবর্তীকালে নির্ধারিত ফরমে নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনী বিধিতে প্রার্থী কর্তৃক হলফনামা দাখিল না করলে বা এতে অসত্য তথ্য দিলে বা তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল না করলে রিটার্নিং অফিসারকে মনোনয়নপত্র বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু মিথ্যা হলফনামা প্রদান দণ্ডবিধির অধীনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা ও নির্বাচনী ব্যয়ের উৎসের বিবরণী প্রার্থীর আয়কর রিটার্নসহ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিধান সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা নির্বাচনী বিধিমালায় [ধারা ৫৩(২)] অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সাধারণ নাগরিকদের রিটার্নিং অফিসার কিংবা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের প্রদত্ত হলফনামার কপি, নির্বাচনী ব্যয়ের উৎসের বিবরণী, তাঁদের আয়কর রিটার্ন এবং নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন প্রাপ্তির কোনো পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট আইনে বা নির্বাচনী বিধিমালায় নির্ধারিত করা হয়নি। অর্থাৎ নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রদত্ত তথ্য ভোটারদের জন্য প্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট। তাই বিধি অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসাররা কিংবা কমিশন অন্য কোনোভাবে কাউকে এসব তথ্য দিতে বাধ্য নয়। আমরা মনে করি, এটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনী বিধিমালার একটি গুরুতর সীমাবদ্ধতা, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং এর পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য পেয়ে ক্ষমতায়িত হওয়ার সফলতা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের ওপর: (ক) প্রার্থীদের পক্ষে অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন না করা; (খ) নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সব প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা; এবং (গ) কমিশনের পক্ষে অসত্য তথ্য প্রদানকারী ও তথ্য গোপনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ তিনটি ক্ষেত্রেই আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী আসন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে তথ্য গোপন করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন। আমাদের নিজেদেরও প্রার্থীদের প্রদত্ত হলফনামাগুলো পরীক্ষা করার সুযোগ হয়েছে। বেশির ভাগ হলফনামাই অসম্পূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য। বস্তুত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রিটার্নিং অফিসার এই লেখককে বলেছেন যে যথাযথভাবে হলফনামাগুলো নিরীক্ষা করা হলে ৯৯ শতাংশ মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে যেত। তাই এটি সুস্পষ্ট যে অসম্পূর্ণ হলফনামা দাখিলের কারণে ভোটারদের জানার অধিকার ক্ষুন্ন এবং তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যই বহুলাংশে ভণ্ডুল হয়ে গেছে।
তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও অনেকটা হতাশাব্যঞ্জক। হলফনামাগুলো মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৩ জুলাই দাখিল করা হলেও ১১ দিন পর অর্থাৎ ১৪ জুলাই থেকে কমিশনের ওয়েবসাইটে এগুলো প্রকাশ করা শুরু হয় এবং ১৬ তারিখে সব প্রার্থীর হলফনামার কপিগুলো ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তাও শুধু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। এ ধরনের সময়ক্ষেপণ গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরির সুযোগ বিঘ্নিত করেছে, যা নিঃসন্দেহে ভোটারদের স্বার্থহানি ঘটিয়েছে।
কমিশন অবশ্য মনে করে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ অনৈতিক। কমিশনের এ ধরনের যুক্তি আমাদের কাছে বোধগম্য নয় এবং আমরা মনে করি, এটি জনস্বার্থের পরিপন্থী। কারণ এসব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় স্বার্থসংশ্লিষ্টদের পক্ষে আপত্তি তোলা সহজ হতো। এ ছাড়া গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফলে আরও অনেক প্রার্থীই হয়তো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিত। উপরন্তু প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন এবং তাঁরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে তথ্য প্রদান করেছেন এটি জেনে যে তাঁদের তথ্য ভোটারদের কাছে প্রকাশ করা হবে। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী ভারতে হলফনামাগুলো দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের নোটিশ বোর্ডে সেগুলো টানিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও গণমাধ্যমের কাছে সেগুলো বিলি করা হয়। এ ছাড়া ভারতে ‘বিরুদ্ধ হলফনামা’ দাখিলেরও বিধান রয়েছে, যাতে প্রতিপক্ষ নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে আপত্তি তুলতে পারে এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার তা বিবেচনায় নিতে পারেন।
প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য প্রাপ্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের ওপর নির্ভর করার সমস্যা হলো, এতে দ্রুততার সঙ্গে এবং সময়মতো তথ্য পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাই তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তাছাড়া আমাদের দেশে ইন্টারনেটও সব নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য নয়। অনেকের ইন্টারনেট তথা ওয়েবসাইট ব্যবহার করার অভিজ্ঞতাও নেই। গ্রাম কিংবা মফস্বল শহরে বসবাসকারী স্বল্পশিক্ষিত নাগরিকদের এবং মহানগরের বাইরে অবস্থিত গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সুযোগ সীমিত। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও ইন্টারনেট লাইন স্পিডের সীমাবদ্ধতা এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তোলে। তাই কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ভোটারদের ক্ষমতায়িত করার চেষ্টা তেমন একটা ফলবতী হয়নি এবং অদূর ভবিষ্যতে হবে বলেও আশা করা যায় না।
নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রার্থীদের সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ও আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে। ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯ জুলাই অভিযোগ করার পর কমিশন প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের তথ্য দাখিলের তিন সপ্তাহ পর ২০ জুলাই সুজনকে আয়কর রিটার্নের কপি প্রদানের লিখিত অনুমতি প্রদান করে। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা শুরু করে। তবে অদ্যাবধি (২৯ জুলাই) সব এলাকার প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের কপি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নির্বাচনের আর এক সপ্তাহের কম সময় রয়েছে।
আমরা শুনেছিলাম, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যগুলোর সারাংশ তৈরি করে ভোটারদের জ্ঞাতার্থে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করবে। অদ্যাবধি তা করা হয়নি। আশা করি কমিশন এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। সুজনের উদ্যোগে আমরা অবশ্য সব কয়টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থীদের হলফনামার সারাংশ তৈরি করে গণমাধ্যমের কাছে ইতিমধ্যে বিতরণ করেছি। এগুলো ‘সুজন’ ওয়েবসাইটেও (www.votebd.org) পাওয়া যাবে। প্রাপ্ত আয়কর রিটার্নের একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণও আমরা শিগগির প্রকাশ করব।
নির্বাচন কমিশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, প্রার্থীদের প্রদত্ত তথ্য যাচাই করে তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া। গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেক তথ্যের অসংগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। আমরা শুনেছি, কমিশনেও অনেক অভিযোগ এসেছে। কমিশন নিজেও স্বপ্রণোদিত হয়ে তা করতে পারে। কিন্তু কমিশন এ পর্যন্ত মোট ১৬ শতাধিক প্রার্থীর একজনের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্লেখ্য, নির্বাচনী বিধিমালায় কমিশনকে প্রার্থিতা বাতিলের সুস্পষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, এ অবস্থা থেকে গেলে কমিশন একটি কাগুজে বাঘে পরিণত হতে পারে, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠেয় প্রথম দফা নির্বাচন হিসেবে আসন্ন চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভার নির্বাচনের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য খুব একটা ইতিবাচক নয়। প্রার্থীদের পক্ষে হলফনামায় পরিপূর্ণ ও সঠিক তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নির্বাচন কমিশন কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দ্রুততার সঙ্গে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রেও কমিশন সফল হয়নি। তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কমিশন কারও প্রার্থিতা বাতিল করেনি। জনস্বার্থে এসব কাজ করা কমিশনের দায়িত্ব। ফলে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য পেয়ে ভোটারদের ক্ষমতায়িত হওয়ার কাজটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি। আশার কথা, হাইকোর্ট সিটি ও পৌরসভা নির্বাচনে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদান কিংবা প্রকৃত তথ্য গোপনকারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা আশা করি, কমিশন দ্রুত এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে। কারণ এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির সফলতার ওপরই বহুলাংশে নির্ভর করবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ নির্বাচন। তাই কমিশনকে সফল হতেই হবে। এ অবস্থায় সব সচেতন নাগরিকের কমিশনকে সহায়তার হস্ত প্রসারিত করা আবশ্যক। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও এগিয়ে আসবে বলে আশা করি, কারণ তাদের সহায়তা ছাড়া সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বোপরি অর্থবহ নির্বাচন সম্ভব নয়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ১ আগষ্ট ২০০৮

Related Post

প্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক অভিনন্দনপ্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক অভিনন্দন

সমকালীন প্রসঙ্গ বদিউল আলম মজুমদার গত ১২ আগস্ট ২০০৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য ১৫ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক নাগরিক পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল

চাই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনচাই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন

বদিউল আলম মজুমদার ২০১০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সময় থেকেই ক্ষমতাসীন দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও সক্ষম করার কথা বলে আসছে। গত সোয়া তিন বছরে

গণতন্ত্র, নিয়মতান্ত্রিকতা ও দায়বদ্ধতাগণতন্ত্র, নিয়মতান্ত্রিকতা ও দায়বদ্ধতা

ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র গণতন্ত্র হল জনগণের সম্মতির শাসন, আর এটি একটি নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসনকার্য পরিচালনার কতগুলো নিয়ম