সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

press conference 7.12.13বিরাজমান সংকট নিরসনে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদকে নিয়ে অনৈতিক খেলা থেকে বিরত থেকে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন বলে মন-ব্য করেছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ সকাল ১১টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ আয়োজিত ‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ মন-ব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস’াপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং সুজন কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ জনাব আব্দুল হক প্রমুখ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ সত্যিকারার্থেই এক চরম সঙ্কটের মুখোমুখি। গত অক্টোবর ২৫ তারিখ থেকে ৭০-এর অধিক মানুষ নিহত, হাজার হাজার আহত, ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি; চারদিকে যেন মানুষ হত্যা ও মানবাধকিার লঙ্ঘনের উৎসব চলছে। অর্থনীতি চরম চাপের মুখে, অবরোধে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষয়ক্ষতি, বিরাট পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে।’ এ অবস’ায় বিরাজমান সংকট সম্পর্কে দুটি ‘সিনারিও’ বা দৃশ্যপটের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথমটি হলো – একতরফা একদলীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া; দ্বিতীয় দৃশ্যপট হতে পারে: স্বল্পমেয়াদি – আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষের ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান; দীর্ঘমেয়াদি – সমস্যার স’ায়ী ও টেকসই সমাধান দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য প্রয়োজন বৃহত্তর পরিসরে সংলাপ ও জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি; একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও  স্বাক্ষর। মোটাদাগে তিনটি ক্ষেত্রে ঐকমত্য: নির্বাচনকালীন সরকার; সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য করণীয়; নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারের জন্য করণীয়।’
তিনি সুজনের পক্ষ থেকে সরকার/সরকারি দলের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আহ্বান জানান। আহ্বানে তিনি বলেন, ‘একদলীয়/একতরফা নির্বাচন থেকে বিরত থাকুন; বিরোধী দলকে শানি-পূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিন, দমন-পীড়নের অবসান ঘটান এবং গ্রেফতার করা বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দিন; রাজপথে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে প্রতিরোধের প্রচেষ্টা ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকুন; যানবাহনে অগ্নিসংযোগকারী ও নাশকতায় জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুন; সেনাবাহিনীকে একতরফা/একদলীয় নির্বাচনে জড়িত ও বিতর্কিত করা থেকে বিরত থাকুন; জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও স্বাক্ষরের লক্ষ্যে বৃহত্তর পরিসরে সংলাপের আয়োজন করুন।’
বিরোধী দলের কাছে আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতা থেকে দূরে থাকুন; খোলা মনে সংলাপে বসুন এবং সঙ্কট উত্তরণে ঐকমত্যে পৌঁঁছান।’
উভয় দলের কাছে আহ্বান রেখে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এরশাদের সঙ্গে অনৈতিক খেলা থেকে বিরত থাকুন এবং এরশাদের পরিবর্তে একে অপরের সাথে আলাপ-আলোচনা করুন ও সমঝোতায় পৌঁছান।’
নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘এক দলীয় নির্বাচনের তফসিল বাতিল করুন এবং সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন তফসিল ঘোষণা করুন এবং বিতর্কিত ভূমিকা থেকে বিরত থাকুন।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘জাতি হিসেবে আজ আমরা এক বহু কথিত ‘খাদপ্রানে-’। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস’া আবারও ভেঙে পড়তে পারে। অগণতান্ত্রিক শক্তি আরেকবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই বর্তমান পরিসি’তি সামাল দিতে আজ আমাদের রাজনীতিবিদদেরকে, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে।’
ড. হামিদা হোসেন দুই নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘এই মারামারি-হানাহানি বন্ধ করুন। আপনারা আমাদের মত সাধারণ জনগণের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার নন অথচ নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যতিব্যস-।’

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে আমাদের দুই নেত্রী রাজনীতি করছেন। আপনারা একটু ভেবে দেখুন ইতিহাস আপনাদের কিভাবে বিচার করবে? আপনাদের জন্য সমাজ একবার ভেঙে যেতে বসেছিলো – ইতিহাস এভাবে লেখা হবে কিনা?’ তিনি বলেন, ‘নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়ে গিয়েছে আমাদের রাজনীতি। জনগণ এ থেকে পরিত্রাণ চায়। আসন্ন নির্বাচনে ইতোমধ্যে ৩৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে এই খেলার প্রয়োজন নেই। এ নির্বাচন কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নানাভাবে দেশে জরুরি অবস্থার কথা আসছে। কিন’ আমি বলবো, আমাদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আমরা কাউকে দিইনি, এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

জনাব আব্দুল হক বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বড় বড় অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সে সুযোগ আমরা হারাতে বসেছি। এর কারণ হলো – রাষ্ট্র বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।’

জনাব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, দুই নেত্রীর নাটকীয় সংলাপের পর সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হলেও তা তারা অস্বীকার করেছেন। দু দলই বলছেন, আলোচনার দ্বার খোলা, কিন’ কেউ কাউকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না। বিরোধীদলীয় নেত্রীও কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। নাগরিক হিসেবে আমাদের আহ্বান আপনারা সংলাপে বসুন। আমরা এ সংকট থেকে পরিত্রাণ চাই।’

Related Post

‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌর নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পৌর নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১.০০টায়, প্রগতি

‘সংলাপ ও সমঝোতা আজ জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘সংলাপ ও সমঝোতা আজ জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক দলসমূহকে অবিলম্বে সংলাপে বসার জন্য স্বনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ (১০ জানুয়ারি, ২০১৫)

‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

উপজেলা নির্বাচনে দলভিত্তিক প্রার্থী মনোনয়ন বা সমর্থন প্রদান, চাপ সৃষ্টি করে কোন প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ