সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তার তাৎপর্য-২

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তার তাৎপর্য-২


ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ইত্যাদি
ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র
সংবিধানের ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত ঘোষণার মধ্যে একটি চরম গোঁজামিল রয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বজায় রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে। অষ্টম অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং কোন বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান একসঙ্গে যেতে পারে না। এছাড়াও ধর্ম একটি বিশ্বাস- প্রতিষ্ঠান নয় এবং এর রাষ্ট্রীয়করণ অযৌক্তিক। আমাদের দেশের সাতজন বিশিষ্ট নাগরিক ‘তবু কেন রাষ্ট্রধর্ম’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে এ ব্যাপারে সম্প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন (প্রথম আলো, ১৫ জুলাই ২০১১)।

এ বিষয়ে আরেকটি গুরুতর স্ববিরোধিতা সৃষ্টি করা হয়েছে বাহাত্তরের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপিত করার মাধ্যমে। এ অনুচ্ছেদে বলা আছে : ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্র্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার এবং (ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার ওপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।’ একযোগে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বজায় রাখা এবং ১২ অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার’ নিষিদ্ধ করা চরমভাবে স্ববিরোধী। এধরনের স্ববিরোধিতা পুরো বিষয়কেই হাস্যস্পদ করে ফেলেছে।
সংবিধানে একদিকে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বজায় রাখার পেছনে যুক্তি দেয়া হয়, আওয়ামী লীগ তা না করলে উগ্রবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে ধর্মহীনতার অভিযোগ তুলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করবে, যার প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়বে। এটি একটি খোঁড়া যুক্তি। কারণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার অতীতে ঘটেছে, এমনকি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগ কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? তবে এ ধরনের আপসকামিতার কারণে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে এবং তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে পার্থক্য বহুলাংশে দূরীভূত হয়ে গিয়েছে। অশুভ ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে ধর্মসহ অনেকগুলো স্পর্শকাতর বিষয়ে।
সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ
পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত ৭ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী : ‘(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়- (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে। (২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত- (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে- তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে। (৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’

এই অনুচ্ছেদ পাকিস্তানের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ৬(১) অনুচ্ছেদেরই অনেকটা প্রতিস্থাপন। পাকিস্তানের সংবিধানে ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘৬.(১) যদি কোন ব্যক্তি সংবিধানকে ক্ষমতাবলে বাতিল করে, পরিবর্তন করে, অথবা জোর করে বা শক্তি প্রদর্শন করে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে, সে ব্যক্তি চরম দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে। (২) কোন ব্যক্তি (১) ধারায় উল্লেখিত কার্যক্রমের সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান করলে, সে ব্যক্তিও একইভাবে চরম দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবে।
(৩) সংসদ আইনের মাধ্যমে চরম দেশদ্রোহীদের শাস্তি নির্ধারণ করবে।’
দেশদ্রোহিতার শাস্তি সাধারণত মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু ১৯৭৩ সালের সংবিধান রচনার পর পাকিস্তানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউল হকের মৃত্যুদণ্ড হয়নি। বরং মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সংবিধান প্রণয়নকারী জনাব ভুট্টোর। নিয়তির কী পরিহাস! তাই কঠোর শাস্তির বিধান করে অবৈধ ক্ষমতা দখল এড়ানো যায় না। এছাড়া জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখনও বহাল তবিয়তেই আছেন। অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা দখলকারীরা সংবিধান পড়েও ক্ষমতা দখল করেন না। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশেও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল এরশাদ বর্তমানে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের সঙ্গেই আছেন।

সংবিধানে ৭ক অনুচ্ছেদ সংযোজন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে আমাদের ধারণা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে আমাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আবারও ভেঙে পড়তে পারে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ভবিষ্যতে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে, যা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করবে। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল হলে সংবিধান বাতিল বা স্থগিতের প্রশ্ন উঠবে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পরবর্তীকালে যে কোন প্রতিবাদী নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৭ক অনুচ্ছেদ অতি সহজেই ব্যবহার করা যাবে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেও এ অনুচ্ছেদ ব্যবহূত হতে পারে, যেমনিভাবে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই তাদের সময় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে বছরের পর বছর জেল খেটেছিলেন। অর্থাৎ ৭ক অনুচ্ছেদ নাগরিকের বাকস্বাধীনতার প্রতি চরম হুমকিস্বরূপ। এছাড়াও শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের সংবিধানে দণ্ডবিধির বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা হচ্ছে- কিন্তু সংবিধান দণ্ডবিধি নয়।
আর পাকিস্তানের পদাংকই যদি আমরা অনুসরণ করব, তাহলে সাম্প্র্রতিককালে সে দেশে যে কয়টি ভালো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো আমাদের রাজনীতিবিদরা বিবেচনায় নিচ্ছেন না কেন? পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা অতীতের সামরিক শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কতগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কয়েক বছর আগে নওয়াজ শরীফ ও প্রয়াত বেনজির ভুট্টো একটি ‘ডেমোক্রেসি চার্টার’ স্বাক্ষর করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সংবিধানের অষ্টাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে তারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য এনেছেন। আমাদের ‘ইম্পেরিয়াল’ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করার ব্যাপারে আমাদের কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সে ধরনের আগ্রহই নেই! একইভাবে গত জানুয়ারি মাসে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা (একজন মাত্র প্রতীকী অর্থে বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন) সংবিধানের ঊনবিংশ সংশোধনীর মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে বিচারপতি নিয়োগ প্রদানের বিধান পাকিস্তান জাতীয় সংসদ পাস করে। সর্বোপরি, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে তারা উঠতে পেরেছে এবং নির্বাচিত সরকারের টার্ম শেষের আগে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকছে। অর্থাৎ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা সমঝোতার রাজনীতির পথ ধরেছেন। আর ধর্মান্ধতার ভয়াবহতা সত্ত্বেও পাকিস্তানের রাজনীতিতে সাম্প্র্রতিককালে যে সুবাতাস বইছে তার পেছনে বড় অবদান রেখেছে সে দেশের সুপ্রিমকোর্ট এবং ঐক্যবদ্ধ আইনজীবী ও নাগরিক সমাজ। দলতন্ত্র আর ফায়দাতন্ত্রের লাগামহীন বিস্তারের ফলে এবং ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষুর কারণে বাংলাদেশে কি তা সম্ভব?
প্রসঙ্গত, আমাদের রাজনীতিবিদরা ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নিয়ে এক ধরনের শ্যাডো বক্সিং বা ছায়ার সঙ্গে মুষ্টিযুদ্ধে লিপ্ত। এ ব্যাপারে প্রত্যেক পক্ষ প্রতিপক্ষকে দায়ী করে। অবশ্য তাদের একটি ‘কনভেনিয়েন্ট স্কেপ গোট’ বা সহজ নন্দঘোষ হল পাতানো নির্বাচন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ। কিন্তু কোন গণতন্ত্রমনা নাগরিকই অবৈধ ক্ষমতা দখলের পক্ষ নিতে পারে না। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুঃখময় অভিজ্ঞতা এড়াতে হলে আমাদের ওয়ান-ইলেভেনের ভূত তাড়াতে হবে। তাই আমার প্রস্তাব হল, একটি নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে বিষয়টির তদন্ত করানো, যাতে নাগরিকরা জানতে পারে কাদের পাতানো নির্বাচনের অপচেষ্টার ফলে কাদের ষড়যন্ত্রের কারণে এবং কাদের আন্দোলনের কারণে সেদিন ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছিল! অতীতের দুঃখময় ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এবং আগামীতে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করতে হলে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য
সাধারণভাবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টির বেশি অনুচ্ছেদকে, যার মধ্যে জাতির পিতার ছবি টাঙানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত, সংশোধনের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এতগুলো অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না এবং নয়ও। একটি ইমারতের পিলারগুলো মৌলিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, কিন্তু দরজা-জানালা নয়। তাই সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে মৌলিক কাঠামো বলে ঘোষণা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। প্রসঙ্গত, এর ফলে সংবিধানের তৃতীয়ভাগে অন্তর্ভুক্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকারও আর সম্প্রচার (যেমন, শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা) করা যাবে না।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন : আওয়ামী লীগ তার ‘দিনবদলের সনদ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করেছে, ‘জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে।’ নির্বাচন-পরবর্তীকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন (প্রথম আলো, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। এছাড়াও এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী সমাজের ঐক্যবদ্ধ দাবি রয়েছে। এসব অঙ্গীকার ও দাবি উপেক্ষা করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বিরাজমান ৪৫ থেকে ৫০-এ উন্নীত করেছে এবং একই ধরনের পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি অব্যাহত রেখেছে।
বর্তমানে করণীয়
ভবিষ্যতের সংকট এড়াতে হলে আজ জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের একটি কার্যকর উদ্যোগ। এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য হতে হবে রাজনীতিকে সংসদকেন্দ্রিক এবং আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করা। একইসঙ্গে ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখা। এ লক্ষ্যে নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

দুই টার্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা। প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা। তিন জোটের রূপরেখার আদলে আগামী দুটি নির্বাচনের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করে তা কঠোরভাবে মেনে চলা। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারে। নির্বাচনে টাকার খেলা ও পেশিশক্তির প্রয়োগ নির্মূল করা এবং ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে রাজনীতিকে জনকল্যাণে নিবেদিত রাজনীতিবিদদের চারণভূমিতে পরিণত করা।
নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকারার্থেই স্বাধীন ও শক্তিশালী করা। কমিশনসহ সব সাংবিধানিক পদে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করা। জরুরি ভিত্তিতে দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্রের অবসান ঘটানো এবং প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। গভীর সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

সূত্র: যুগান্তর, ২১ জুলাই ২০১১

Related Post

জনপ্রতিনিধি: সংসদ কার্যকর হবে সাংসদদের কাজের মাধ্যমেজনপ্রতিনিধি: সংসদ কার্যকর হবে সাংসদদের কাজের মাধ্যমে

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ০৪-১২-২০০৯ সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র…।’ গণতন্ত্র মানে প্রশাসনের সকল স্তরে জনপ্রতিনিধিদের শাসন। অর্থাত্ সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মূলত নির্বাচিত

সরকারের জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনিসরকারের জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২২-০১-২০১১ সারা দেশে মোট ২৪২টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। যদিও অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে ছয়টিতে নির্বাচনী ফলাফল আংশিক বা পুরোপুরিভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যে

সুশাসন: সম্পদের হিসাব ও একটি সুপারিশসুশাসন: সম্পদের হিসাব ও একটি সুপারিশ

বদিউল আলম মজুমদার সম্পদের হিসাব প্রকাশ করলেই হবে না, সত্যিকারের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের জন্য যথাযথ আচরণবিধি প্রণয়ন এবং তা মানা বাধ্যতামূলক করতে