সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি সম্পদের হিসাব: মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

সম্পদের হিসাব: মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ


বদিউল আলম মজুমদার
সম্পদের হিসাব প্রদানের বাধ্যবাধকতাকে স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করাও জরুরি। আইনের মাধ্যমেই সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিকভাবে সম্পদের হিসাব প্রদান না করার জন্য শাস্তির বিধান আরোপ করা যেতে পারে।
গত ১৬ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী সব মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী এবং ছয় সিটি করপোরেশনের মেয়রদের এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পদের হিসাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই দিনে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে শোনা যায়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব সংসদ সদস্যেরও সম্পদের বিবরণী দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্পিকারের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন। বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব প্রদানের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতিকেও লিখিতভাবে অনুরোধ করা হবে। এ ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রকাশিত ‘দিনবদলের সনদ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দু’দু’বার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব বার্ষিকভাবে প্রকাশের অঙ্গীকার করেছে। সনদে অন্তর্ভুক্ত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’ শীর্ষক দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে।’ একই দলিলে অন্তর্ভুক্ত ‘সুশাসন’ শীর্ষক পঞ্চম অগ্রাধিকারে আরও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’ একইভাবে বিএনপি তার ‘দেশ বাঁচাও :মানুষ বাঁচাও’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে শর্তহীনভাবে অঙ্গীকার করে, ‘নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।’ অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগের সফলতার মাধ্যমে, নির্বাচনের দীর্ঘ দুই বছর পরে হলেও, সরকার এবং বিরোধী দলের প্রদত্ত অন্তত একটি অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হবে।
তবে অর্থমন্ত্রীর এ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ সম্পর্কে নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে : শুধু কি মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপিদের সম্পদের হিসাব প্রদান করা হবে, নাকি দিনবদলের সনদ অনুযায়ী তাদের পরিবারের সদস্যদের বিবরণীও এত অন্তর্ভুক্ত থাকবে? এসব বিবরণী কি প্রকাশ করা হবে, না মন্ত্রিপরিষদ, এনবিআরের ফাইলে এগুলো বদ্ধ থাকবে? হিসাব বিবরণী কি বার্ষিকভাবে প্রদান করা হবে? এগুলো কি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে? তথ্য গোপনকারী বা মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে কি আইনানুগ ব্যবস্থা প্রহণ করা হবে?
ক্ষমতাধর ব্যক্তিদেরই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের হিসাবের বিবরণী প্রদানও দিনবদলের সনদের অঙ্গীকারের অংশ। তাই পরিবারের সদস্যদের হিসাব প্রদান করা না হলে অঙ্গীকার বরখেলাপ করা হবে। বিবরণীগুলো প্রকাশ করা না হলেও অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হবে। বস্তুত প্রকাশ না করা হলে, সম্পদের হিসাব প্রদানই একটি অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে। আরও অর্থহীন হবে প্রদত্ত বিবরণীগুলো যদি নিরীক্ষা করে তথ্য গোপনকারী ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। কারণ সম্পদের হিসাব প্রদানের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। আর প্রদত্ত তথ্য প্রকাশ না করলে এবং এগুলোর সঠিকতা যাচাই না করলে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
তবে সম্পদের হিসাব প্রদানের অঙ্গীকার পালনের ক্ষেত্রে সরকারের অতীত ভূমিকা খুব একটা প্রশংসনীয় নয়। স্মরণ করা প্রয়োজন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই অর্থমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের হিসাব প্রদান এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশের ঘোষণা দেন, যা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ঢাকায় দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের (পিআরএসপি) মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেন, নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী বাজেট পেশের আগেই সংশ্লিষ্টদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এবারও অঙ্গীকার রক্ষা করা হয়নি, কারণ উচ্চপদস্থদের সম্পদের হিসাব প্রদানের বিরোধী শক্তি অত্যন্ত ক্ষমতাবান। এমনকি মন্ত্রিসভার ১৮ জুন ২০১০-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এর বিপক্ষেই অনেকে মতামত দেন। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী তার নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার খাতিরে নিজস্ব সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেন। এ জন্যও তাকে ধন্যবাদ!
সম্পদের হিসাব প্রদানসংক্রান্ত সরকারের আরও সাম্প্রতিক অবস্থান কোনোভাবেই আশার উদ্রেক করে না। উদাহরণস্বরূপ, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১-এ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সবাই আয়কর দেন। আয়কর দেওয়ার সময় সম্পদের হিসাব প্রদান করা হয়। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে তা দেখতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের হিসাব দিতে কোনো অসুবিধা নেই, সময় হলেই তা প্রকাশ করা হবে (প্রথম আলো, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। এ কথা সবারই জানা, এনবিআরে জমা দেওয়া আয়কর বিবরণীর অনুলিপি পাওয়ার অধিকার কারোরই নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অনেককেই হতাশ করেছে। সুতরাং অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ ঘোষণা সম্পর্কে নাগরিকদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হওয়াই স্বাভাবিক।
দুর্ভাগ্যবশত এ সন্দেহ আবারও দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্য থেকে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী বলেছেন_ সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে কিন্তু জনগণকে তা দেওয়া হবে না। হিসাব বিবরণীগুলো মন্ত্রিপরিষদে জমা থাকবে, কিন্তু এগুলো প্রকাশ করা হবে না। কারণ এগুলোতে অনেক গোপন তথ্য আছে যা সংশ্লিষ্টরা প্রকাশ করতে চান না। তবে যে কেউ চাইলে এগুলো দেখতে পারবেন (সমকাল, ১৮ মার্চ ২০১১)। আমাদের কাছে সরকারের এমন অবস্থান বোধগম্য নয়। কারণ তাহলে কি সম্পদের হিসাব বিবরণীগুলো দেখা যাবে, কিন্তু কপি করা যাবে না? গণমাধ্যম কিংবা ‘সুজনে’র মতো নাগরিক সংগঠন এগুলো প্রকাশ করতে পারবে না? এ ধরনের সিদ্ধান্ত কি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে?
মনে রাখা প্রয়োজন, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত অঙ্গীকার ছিল শর্তহীন। ইশতেহারের ভিত্তিতে ‘ভোটভিক্ষা’ করার আগে তা বলা হয়নি যে প্রার্থীরা ভোটের পর তাদের সম্পদের হিসাবসংক্রান্ত গোপন তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ। ফলে অঙ্গীকার অনুযায়ী বার্ষিকভাবে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা হবে না। উপরন্তু মনে করা প্রয়োজন, সব ক্ষমতার মালিক জনগণ (সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী) তাদের ক্ষমতার একটি সুনির্দিষ্ট অংশ (অনুচ্ছেদ ৬৫) ভোটের মাধ্যমে আমানত হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করে যাতে তারা নিজেদের পরিবর্তে গণমানুষের স্বার্থ ও কল্যাণে কাজ করে। তাই যেসব প্রতিনিধি রাষ্ট্রের মালিকদের কাছে তাদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রমাণ করতে অপারগ বা নারাজ যে তারা সত্যিকারার্থেই জনস্বার্থে কাজ করছেন, তাদের কি জনপ্রতিনিধি থাকার আর নৈতিক অধিকার থাকে?
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিরোধী মত ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ ছাড়া যেমন গণতন্ত্র হয় না, তেমনিভাবে ক্ষমতাধরদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা ছাড়াও গণতন্ত্র স্লোগান হিসেবেই থেকে যায়। এছাড়াও অনেক নাগরিকই রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন করতে পারে, তবে এক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ‘ক্ষমতা’ অতুলনীয়, কারণ তারা সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে অতি সহজেই অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারেন_ মিসর এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতাও ভালো নয়। তাই সব টালবাহানা সত্ত্বেও আমরা আশা করি, আমাদের নির্বাচিত সরকার এবার তাদের কথা রক্ষা করবে।
তবে ক্ষমতাধরদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য আরও প্রয়োজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন। আচরণবিধি প্রণয়নের বিষয়টিও দিনবদলের সনদে অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার হলো, ‘একটি সর্বসম্মত আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদ সদস্য আচরণ আইন, ২০১০ শিরোনামের একটি বিল ১৮ জানুয়ারি ২০১০ ‘বেসরকারি সদস্যদের বিল’ হিসেবে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন। ১৫ ধারাসংবলিত এ বিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে একটি হলো স্বার্থগত দ্বন্দ্ববিষয়ক। প্রস্তাবিত আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যগণ নিজের বা অন্যের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে অবৈধ ও অসৎ পথ অবলম্বন করবেন না। তারা নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব, আয় ও সম্পদের উৎসসংক্রান্ত তথ্য সংসদ কর্তৃক নির্ধারিত ছকে সংসদ শুরুর প্রথম অধিবেশনের মধ্যে প্রকাশ করবেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি সম্প্রতি আচরণবিধি সংক্রান্ত বিলটি আইনে পরিণত করার বিপক্ষে সুপারিশ করেছে। দুর্ভাগ্যবশত সরকার এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব।
কিন্তু ক্ষমতাধরদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণীত ও কার্যকর হলে জনগণ জানতে পারত আমাদের সংসদ সদস্যদের মধ্যে কারা কোন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। একই সঙ্গে নিয়মিতভাবে নিজেদের ও পরিবারের সম্পদের হিসাব প্রদান এবং এগুলো যাচাই-বাছাই করার বাধ্যবাধকতা থাকলে জনগণ আরও জানতে পারত ক্ষমতাধরদের কাদের সম্পদ কী হারে বাড়ছে। ফলে কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে জনগণ গুজবের পরিবর্তে তথ্যের ভিত্তিতে মতামত গঠন করতে পারত।
সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য আরও প্রয়োজন হবে ‘জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি’ মেনে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ থেকে নিজেদের দূরে রাখা। কার্যপ্রণালিবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, ‘(১) সংসদে গৃহীত প্রস্তাব মোতাবেক কমিটির সদস্যগণ নিযুক্ত হইবেন। (২) এমন কোন সদস্য কমিটিতে নিযুক্ত হইবেন না, যাহার ব্যক্তিগত, আর্থিক ও প্রত্যক্ষ স্বার্থ কমিটিতে বিবেচিত হইতে পারে এমন বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট আছে।’ কিন্তু গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় চার ডজন সংসদ সদস্য কার্যপ্রণালিবিধি উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাদের কেউ কেউ নিজ স্বার্থহানির কারণে এমনকি রাজউকের চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন বলে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংসদ সদস্যকে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর গত বছরে প্রদত্ত নির্দেশও এ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। কার্যপ্রণালি বিধিও সংসদে অনুমোদিত এবং আইনের সমতুল্য, তাই কার্যপ্রণালি বিধি উপেক্ষা করে আমাদের আইনপ্রণেতাদের অনেকেই আইনভঙ্গকারীতে পরিণত হয়েছেন।
আরেকভাবেও আমাদের আইন প্রণয়নকারীদের কেউ কেউ আইন ভঙ্গকারীতে পরিণত হয়েছেন। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮ জন সংসদ সদস্য মিথ্যা হলফনামা দিয়ে সরকারি প্লটের জন্য রাজউকে দরখাস্ত করেছেন। মিথ্যা বলা গর্হিত কাজ, মিথ্যা হলফনামায় স্বাক্ষর করাও অপরাধ। পবিত্র জাতীয় সংসদে এসব অপরাধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের স্থান হতে পারে না। তাই শুধু নিজেদের দায়বদ্ধতাই নয়, সংসদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্যও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আশা করি, সংসদের অভিভাবক হিসেবে স্পিকার এ ব্যাপারে তার দায়িত্ব পালন করবেন।
সম্পদের হিসাব প্রদানের বাধ্যবাধকতাকে স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করাও জরুরি। আইনের মাধ্যমেই সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বার্ষিকভাবে সম্পদের হিসাব প্রদান না করার জন্য শাস্তির বিধান আরোপ করা যেতে পারে। আচরণবিধি সংক্রান্ত আইনেও নিয়মিতভাবে ক্ষমতাধরদের সম্পদের হিসাব প্রদান ও প্রকাশের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পরিশেষে আমরা সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নির্বাচনী ইশতেহার রাজনৈতিক দলগুলো এবং ভোটারদের মধ্যে লিখিত, যদিও একটি অস্বাক্ষরিত চুক্তি, তাই এতে অন্তর্ভুক্ত অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করা দলগুলোর জন্য, অন্তত নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাধ্যতামূলক। আশা করি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতৃবৃন্দ বিষয়টি এভাবে দেখবেন এবং সব লুকোচুরির অবসান ঘটিয়ে দ্রুত তাদের করণীয় নির্ধারণ করবেন। বলাবাহুল্য, ক্ষমতাধরদের সম্পদের হিসাব প্রদান ও প্রকাশ এবং তাদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন ও কার্যকর করা হলে, সরকার এবং রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে জনগণের সমর্থনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
১৮ মার্চ ২০১১

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন_ সুশাসনের জন্য নাগরিক
সূত্র: সমকাল, মার্চ ১৯, ২০১১

Related Post

বিশেষ অধিকার ও গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতাবিশেষ অধিকার ও গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা

সংসদ বদিউল আলম মজুমদার কয়েক সপ্তাহ আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দু’জন বিচারকের বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ এবং পরে তা প্রত্যাহারের বিষয়ে তদন্ত করার লক্ষ্যে

শাসনতন্ত্র: সংবিধান সংশোধন নিয়ে সংশয়শাসনতন্ত্র: সংবিধান সংশোধন নিয়ে সংশয়

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২০-০৪-২০১১ সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে সরকার গত জুলাই মাসে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কমিটির ১২ জন সদস্যই সরকারদলীয়। অন্য সদস্যরাও মহাজোটের অংশীদার।

সুশাসন: গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও নাগরিক সমাজের ভূমিকাসুশাসন: গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা

বদিউল আলম মজুমদার প্রায় দুই বছর একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে থাকার পর ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের যাত্রাপথের সূচনা হয়েছে। গণতান্ত্রিক উত্তরণের