সরকারের বর্ষপূর্তি

samakal_logo
সুশাসন
বদিউল আলম মজুমদার
সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী ও তার সহকর্মীদের আন্তরিক অভিনন্দন। একইসঙ্গে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য রইল ভবিষ্যতের শুভ কামনা। বিগত বছরে যতটুকু সফলতা অর্জিত হয়েছে, জাতির স্বার্থে আশা করি আগামী বছর সরকার আরও বড় সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং সত্যিকারের দিনবদল ঘটাবে।
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সরকারের এক বছরের সফলতার লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। নিঃসন্দেহে সরকারের অনেকগুলো সফলতা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সফলতার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিক্ষা বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে ১৯ কোটি বই বিতরণ ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন অন্তর্ভুক্ত। আরেকটি বড় সফলতা হলো কৃষিতে, বিশেষত সারে ভর্তুকি ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণের ক্ষেত্রে। এজন্য শিক্ষা ও কৃষিমন্ত্রীকে অভিনন্দন। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সততা এবং আন্তরিকতার কারণে যে সফলতা অর্জন করা যায়, তা তারা আবারও প্রমাণ করলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচনী ওয়াদামতো দলীয়করণ এখনও বন্ধ হয়নি এবং শান্তি ফিরে আসেনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন_ যার মাধ্যমে জাতির জীবনে একটি গভীর ক্ষত দূরীভূত হলো। বিদ্যুৎ খাতে কিছু উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ৪৮টি সংসদীয় কমিটি ও স্থায়ী কমিটি গঠন এবং কমিটিগুলোর অনেক বেশি সক্রিয়তাও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে।
এছাড়াও সংসদীয় কমিটিগুলো দ্রুততার সঙ্গে গঠিত হলেও এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন_ সংসদীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি প্রতিহিংসাপরায়ণতা প্রদর্শন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যদের অযাচিতভাবে হেনস্তা করেছে। এটি ছিল সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম কমিটির এখতিয়ারবহির্ভূত, যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নামে ব্যবসা করে শুধু সেগুলোই কমিটির এখতিয়ারভুক্ত। এছাড়াও কমিটির সভাপতি দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে কমিশনারদের হয়রানির চেষ্টা ছিল ন্যায়নীতিবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আমরা মনে করি, সরকারের আরেকটি বড় সফলতা ছিল উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। তবে সাধারণ মানুষের বঞ্ছনা ও অপশাসনের অবসান না ঘটলে উগ্রবাদকে সত্যিকারার্থেই প্রতিরোধ করা যাবে কি-না সে ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান। এছাড়াও সরকারের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান ছিল প্রশংসনীয়। সরকার দিনবদলের সনদের আলোকে গত বছরের বাজেটও প্রণয়ন করেছে।
এসব সফলতা সত্ত্বেও অনেক নাগরিকের মনেই প্রশ্ন, এর মাধ্যমে কি দিনবদলের সূচনা হয়েছে? বর্তমান সরকার দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তাই ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মাথায় দিনবদলের সূচনা না হলে সরকারকে সফল বলা দুরূহ। দিনবদলের জন্য অনেকগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন অনেকগুলো ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার। সরকারের মেয়াদের প্রথমদিকে দুরূহ কাজগুলো সম্পন্ন করতে না পারলে পরে তা করা সহজ হবে না। যেমন, সরকারের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হলে প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি। এডিপি বাস্তবায়নকে দ্রুততা এবং পল্লী জীবনে গতিশীলতা আনতে হলে, যা দিনবদলের প্রতিশ্রুতির অংশ। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেও কার্যকর করতে হবে। দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। এজন্য আরও প্রয়োজন হবে সংসদকে কার্যকর ও দায়বদ্ধ এবং সংসদীয় কমিটিগুলোকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে আরও সক্রিয় করা।
এসব সংস্কার ও পরিবর্তন ভবিষ্যতে করা দুরূহ হবে। কারণ আগামী চার বছর সরকারকে অনেকগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। বিরোধী দলের অসহযোগিতা এবং ভবিষ্যতে রাজপথে আন্দোলন সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে। ফায়দাতন্ত্রের কল্যাণে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব, কিছু কিছু সংসদ সদস্যের বাড়াবাড়িও সরকারকে দিনবদলের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অকার্যকারিতা এবং বিশেষত দলীয়করণ ও তদবিরতন্ত্রের কারণে প্রশাসনে গতিহীনতাও সরকারের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও পরিস্থিতিকে জটিল করতে পারে। উপরন্তু শেষ দু’বছর নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই সরকারকে ব্যস্ত থাকতে হবে।
দিনবদলের সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের ভিত্তিতেই সরকার ক্ষমতায় গেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে মোটা দাগে ২৩টি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রথম ছয়টির পর্যালোচনা করা যাক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধে সরকার সফল হয়েছে বলা দুরূহ এবং তা আশাও করা যায় না। দ্রব্যমূল্য বহুলাংশে নির্ভর করে বিশ্ববাজার পরিস্থিতির ওপর, যার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও টিসিবির মাধ্যমে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের সফলতা নেই।
বিশ্বমন্দা মোকাবেলায় সরকার বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। পরে আরও এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা আমরা শুনেছি, যদিও আমরা নিশ্চিত নই কত টাকা আসলে বিতরণ করা হয়েছে। তবে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত শিথিল এবং আমাদের শিল্প ও বাণিজ্য খাতের ওপর এর বড় কোনো প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। যদিও বিদেশে কর্মরত কিছু শ্রমজীবীকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে; কিংবা সেখানে বেকার অবস্থায় তারা অবস্থান করছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে মালিকরাই যেখানে লাভ-লোকসানের মালিক, সেখানে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জরুরি সহায়তা প্রদানের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের ধারণা, এ ধরনের সহায়তা ছিল আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় আকারের ‘সেফটি নেট’। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের এবং বিদেশে চাকরি হারানো শ্রমিকদের জন্য কোনো ‘লবি’ বা তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই, তাই তারা এ ধরনের বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সরকারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার হলো : ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদের হিসাব বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দুর্ভাগ্যবশত দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পরিবর্তে এটিকে অকার্যকর করা হচ্ছে বলে খোদ কমিশনের পক্ষ থেকেই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কয়েক মাস আগে এ সরকারের আমলে পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘দুদক দন্তহীন বাঘ হলেও এর থাবা আছে। আমরা সেটি ব্যবহার করব। কিন্তু থাবার সেই নখও কেটে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।’
তৃতীয় অগ্রাধিকার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সফলতা নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর অধীনে কিছু দান-খয়রাত ও সহায়তা প্রদান ছাড়া দারিদ্র্য ঘুচাও ও বৈষম্য রোখার ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেছে বলে মনে হয় না। বস্তুত স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই একটি চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে।
পঞ্চম অগ্রাধিকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার ছিল : ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে…, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির চলমান সংস্কার অব্যাহত থাকবে, জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হবে।’
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল না; বরং সরকারের একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সীমিত ক্ষেত্রে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এছাড়াও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী ঘরানার ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিয়ে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সরকার অনেকটা উল্টো পথে হেঁটেছে। যেমন, নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে পাস করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের মাধ্যমে নিবন্ধনের শর্ত অমান্য করার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে ‘সাত তথ্য’ প্রকাশ অন্তত ইউনিয়ন পরিষদ আইন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটারদের বাকস্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের মতে, প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া ভোটারদের বাকস্বাধীনতার অংশ। কারণ ভোটাররা তাদের বাকস্বাধীনতা প্রয়োগ করে ভোটের মাধ্যমে।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দল সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবেই অনুপস্থিত। তবে বিরোধী দলকে শুধু সংখ্যা দিয়ে গণ্য করা হবে না, সরকার তার এ অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি। রক্ষা করতে পারেনি বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্রণোদিত ঘোষণা। সংসদে বিতর্কের মানেও কোনো উন্নতি আমাদের চোখে পড়েনি। সংসদীয় কমিটিগুলো দ্রুততার সঙ্গে গঠিত হলেও এবং অনেক বেশি সক্রিয়তা প্রদর্শন করলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে আইনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে পুরো সংসদই কোটারি স্বার্থে কাজ করেছে। সংসদ সদস্যদের কাউকেও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে আমরা দেখিনি। এছাড়াও অসদাচরণের দায়ে নিজ সহকর্মীদের (যেমন_ সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকারের) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সংসদ তার নিজ দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। তাই সংসদকে কোনোভাবেই কার্যকর বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সর্বস্তরে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার চর্চা। ক্রসফায়ার শুধু মানবাধিকারের জঘন্যতম লঙ্ঘনই নয়, এটি আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনেরও সমতুল্য। আওয়ামী লীগ জোট সরকার আমলের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করলেও বর্তমান সরকারের আমলে ক্রসফায়ার অব্যাহত রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সরকার যেন এ জঘন্য কাজটিকে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অন্যতম কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং একইসঙ্গে এ গর্হিত কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা অকপটে অস্বীকার করছে। এছাড়া বছর পার হলেও ক্ষমতাধরদের সম্পদের হিসাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা দিনবদলের সনদের ষষ্ঠতম অগ্রাধিকার। স্বশাসিত ও জনঅংশগ্রহণমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী তার লেখনীতেও বারবার ব্যক্ত করেছেন। তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার স্থানীয় সরকারের কফিনে একটি বড় পেরেক ঠুকে দিয়েছে। সংবিধানবহির্ভূতভাবে আইন করে উপজেলা পরিষদের ওপর সংসদ সদস্যদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে একটি ভয়াবহ দ্বন্দ্বাত্মক পরিস্থিতিরই শুধু সৃষ্টি হয়নি, এর ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতাও বিরাজ করছে। দুর্ভাগ্যবশত এ পরিস্থিতির জন্য নিজেদের দায়দায়িত্ব স্বীকার না করে, সরকার উদরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। এছাড়াও প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে ১৫ কোটি টাকা প্রদানের উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের নির্বাহী কার্যক্রমে জড়িত করে ফেলা হচ্ছে, যা সংসদকে অকার্যকর করে ফেলবে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে অনেক এলাকায়ই ইউনিয়ন পরিষদ সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্ট, গত এক বছরে বর্তমান সরকার অনেকগুলো সফলতা অর্জন করেছে। তবে এগুলো ছিল মূলত ধারাবাহিকতার সাফল্য। এগুলোর মাধ্যমে এখনও দিনবদলের সূচনা হয়নি। সংসদে ৯০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও তা করা সম্ভবপর হয়নি। কারণ দিনবদলের জন্য প্রয়োজন উল্লম্ফন বা অভূতপূর্ব পরিবর্তন, বিশেষত মানসিকতার পরিবর্তন। অনেকগুলো ক্ষেত্রে ব্যাপক ও গভীর সংস্কার। নিজ দল ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল বদল, যা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর চাবি দিয়ে যেমন একবিংশ শতাব্দীর তালা খোলা যায় না, তেমনিভাবে পুরনো আওয়ামী লীগ ও তার সনাতন কার্যক্রম দিয়েও দিনবদল সম্ভব নয়। এছাড়া বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনী দিয়েও যুদ্ধে জেতা তথা বড় কাজ করা যায় না।
– ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
সূত্র: সমকাল, ১৭ জানুয়ারি ২০১০

Related Post

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: এরপর কী?ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: এরপর কী?

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২৮-০৬-২০১১ গত এপ্রিল মাসে প্রথম পর্বের প্রায় ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচন এখন চলছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোট চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়নের

সংলাপ ও সম্ভাব্য সমাধানসংলাপ ও সম্ভাব্য সমাধান

  বদিউল আলম মজুমদার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রীর মধ্যকার বহু প্রতীক্ষিত ফোনালাপের পর সংলাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুই নেত্রীই এখনো সংলাপ ও সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার-সম্পর্কিত

দুর্নীতি দমন: কার স্বার্থে দুদককে অকার্যকর করা হচ্ছেদুর্নীতি দমন: কার স্বার্থে দুদককে অকার্যকর করা হচ্ছে

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ০৩-০৫-২০১০ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্ত্রিসভা সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত খসড়াটি মূলত মন্ত্রিপরিষদের অধীনে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত