সামন্তবাদী প্রথারই বিজয়


ড. ব দি উ ল আ ল ম ম জু ম দা র
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি সিটি কর্পোরেশন ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, এসব নির্বাচনে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অনেকে কারাগারে ছিলেন এবং অনেকের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে অনেক মামলা রয়েছে। যেমন, নয়জন নির্বাচিত সিটি ও পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন এবং তাদের কেউ কেউ আরও মামলা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের অনেকেই আয়কর পরিশোধ করেন না এবং আয়কর রিটার্নে প্রদত্ত তাদের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্য (যেমন- মাসিক বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিল, মাসিক পারিবারিক খরচ ইত্যাদি) অবিশ্বাস্য রকমের কম। এছাড়াও নির্বাচিতদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অল্প, যদিও অল্প প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা নিরক্ষরতা কোনভাবেই অযোগ্যতা নয়। উপরন্তু, নির্বাচিত মেয়র ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলরদের ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবসা তাদের পেশা বলে হলফনামায় দাবি করেছেন। ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে অবশ্য কোন দোষ নেই, তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন রাজনীতিই ব্যবসায়ে পরিণত হয়। তাই এ কথা বলা যায়, সিটি ও পৌর নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগত মানে তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। এর কারণ কী?

বিতর্কিত ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার পেছনে অনেক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। একটি কারণ হল, ১১ জানুয়ারি, ২০০৭-এর পর অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের এবং তাদের অনেককে কারাগারে অন্তরীণ করা হলেও, আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কোনরূপ গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। অনেকেই ১১ জানুয়ারির পূর্বাবস্থায়- অর্থাৎ রাজনৈতিক হানাহানিতে ফিরে না যাওয়ার কথা বললেও, হানাহানির মূল কারণ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে তারা তেমন সোচ্চার হননি। ফলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠেনি এবং অভিযুক্তরা সামাজিকভাবে ধিকৃতও হয়নি। যার কারণ অবশ্য দেশের জনমত সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গের অধিকাংশের দলীয় আনুগত্য এবং দলবাজির ঊধের্ব উঠতে না পারা। এদের অনেকে দলীয় পক্ষপাতিত্বই শুধু প্রদর্শন করেনি, তারা পরিবর্তনকামীদের রাজনীতিক দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টায়ও লিপ্ত হয়েছেন। এসব কারণেই দুর্বৃত্তদের মধ্যে কোন অনুশোচনা বা লজ্জাবোধ সৃষ্টি হয়নি, যা তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে পারত। অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এর ঘটনার পর বড় বড় কিছু নেতানেত্রীদের, যাদের কোনভাবে স্পর্শ করা যাবে না বলে অনেকের ধারণা ছিল, কারাগারে অন্তরীণ করার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও, জাতির মানসিকতায় তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে এখন অভিযুক্তদের অনেককে, এমনকি তাদের কিংপিনদের বা মূল হোতাদেরও মুক্তি দিতে হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে সরকারের অনৈতিক পদক্ষেপও, যা তাদের ক্রমাগতভাবে দুর্বল করেছে, বর্তমান অবস্থার জন্য বহুলাংশে দায়ী।
এছাড়া আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিও এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি, কোনরূপ গর্হিত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তরা স্বেচ্ছায় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন। আর বিতর্কিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ফলে অনেক সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা এগিয়ে আসেননি। অর্থাৎ সাম্প্রতিক নির্বাচনে ‘গ্রাসামস্‌ ল’ কাজ করেছে- ‘খারাপ’ প্রার্থীরা ‘ভালো’ প্রার্থীদের নির্বাচনী ময়দান থেকে বিতাড়িত করেছে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোও বিতর্কিত প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারেনি। যেমন, সরকার অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মামলা করেছে, কিন্তু এসব মামলাগুলো নিষপত্তি করতে পারেনি। অনেকের মতে, এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ভূমিকাও সহায়ক ছিল না। নির্বাচন কমিশনও মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারেনি এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য দেয়ার কিংবা তথ্য গোপন করার জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল করেনি। এছাড়াও কমিশন হলফনামা ও আয়কর রিটার্নের কপি প্রকাশের ব্যাপারে গাফিলতি করেছে। যেমন, আমরা ‘সুজনে’র পক্ষ থেকে বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর মাত্র নির্বাচনের আগের দিন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে প্রার্থীদের আয়কর রিটার্নের তথ্য পাই, তাও সে তথ্য ছিল আংশিক। ফলে তথ্যগুলো গণমাধ্যম ও ভোটারদের কাছে যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ‘সুজন’ ব্যতীত অন্য কোন সংগঠন প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে ধারাবাহিকভাবে এগুলো বিতরণের এবং এর মাধ্যমে ভোটার সচেতনতা সৃষ্টির কোনরূপ উদ্যোগ নেয়নি। গণমাধ্যমের জন্যও ছিল এটি প্রথম অভিজ্ঞতা, তাই তাদের পক্ষেও গভীর অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি করা অনেকক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তারা এখন পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তারা দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে কারারুদ্ধ ব্যক্তিদেরও মনোনয়ন ও সমর্থন প্রদান করেছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক দলের উদ্যোগী ভূমিকা ছাড়া রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা অসম্ভব।
বিতর্কিত ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার পেছনে সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের বিদ্যমান সামন্তবাদী প্রথা। আমাদের সমাজে একটি পেট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক বিরাজমান, যা রাজতন্ত্রের অধীনে রাজা-প্রজার সম্পর্কের সমতূল্য। এ প্রথায় সাধারণ জনগণের কোন ‘অধিকার’ থাকে না, যদিও আমাদের সংবিধানে নাগরিকদের জন্য অনেকগুলো মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। নাগরিকত্বের মূল কথা রাষ্ট্রের মালিকানা এবং সংবিধান অনুযায়ী তারা সব ক্ষমতার উৎস। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরও দেশের অধিকাংশ জনগণ, বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও রাষ্ট্রের ‘মালিকে’ পরিণত হতে পারেনি- তারা এখনও প্রভুতুল্য শাসকদের করুণার পাত্রই রয়ে গিয়েছে। ফলে যেসব নাগরিক অধিকার এবং জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রাপ্য, তা তারা পায় না। ন্যায্য অধিকারগুলো অর্জনের জন্য তাদের পেট্রনের আশ্রয় নিতে হয়। বস্তুত, পেট্রন বা পৃষ্ঠপোষকদের কৃপা বা অনুগ্রহের কারণেই ‘ফায়দা’ হিসেবে তারা বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাকে, ন্যায্য অধিকার হিসেবে নয়। শুধু তাই নয়, পেট্রনরা তাদের নিরাপত্তাও প্রদান করে থাকে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের হয়রানি থেকে রক্ষা করে। আর এভাবেই ফায়দাবাজি ও দলবাজি ভয়াবহভাবে বিস্তারলাভ করেছে আমাদের সমাজে এবং জাতি হিসেবে আমরা মূলত দুটি ওয়ারিং বা ‘যুদ্ধলিপ্ত’ ক্যাম্পে পরিণত হয়ে গিয়েছি।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে বিদেশী শাসকরা ছিলেন প্রভু আর নেটিভ বা স্বদেশীরা ছিলেন প্রজা। ‘সরকার বাহাদুর’ শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে অবকাঠামো সৃষ্টির পাশাপাশি প্রজাদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ও সেবার ব্যবস্থা করতেন। বিদেশী শাসকদের সহযোগী হিসেবে তাদের সৃষ্ট মধ্যস্বত্ত্বভোগী জমিদার ও ভূস্বামীরাও প্রজাদের প্রতি নানাভাবে দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন ও হাসপাতাল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করতেন এবং অনেকক্ষেত্রে প্রজাদের পেট্রন হিসেবে কাজ করতেন। আর জমিদার শ্রেণীর এসব পেট্রনদেরই ভিক্ষা-অনুদান ও নানা ধরনের কৃপাপ্রাপ্ত প্রজারা অনেক সময় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করত।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান রচিত এবং এতে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিধান রাখা হলেও, নাগরিকরা বহুলাংশে এখনও প্রজাই রয়ে গেছে। প্রাপ্য অধিকার দিয়ে তাদের নাগরিক হিসেবে ক্ষমতায়িত করা হয়নি, তাদের নিজেদের মধ্যেও মালিকানাবোধ সৃষ্টি হয়নি। আর মালিকানা প্রতিফলিত হয় অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে, যা দেশপ্রেমের মূল ভিত্তি। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের অধিকাংশ নাগরিক, বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও অধিকারহীন ‘ভেড়ার পাল’ হিসেবেই বিবেচিত। ফলে ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন, ওমা আমি নয়ন জলে ভাসিঃ’- জাতীয় সঙ্গীতের এ কথাগুলো তাদের অনেকের কাছে ফাঁকা বুলি বৈ কিছুই নয়। এমনি ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন ধরনের ফায়দা দেয়ার মাধ্যমে নব্য প্রভুতে পরিণত হয়েছেন। আর নির্বাচন তাদের জন্য হয়ে পড়েছে সভ্য সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে প্রভুত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতা মাত্র, কারণ নির্বাচন পরবর্তীকালে তারা যা-ইচ্ছা-তাই করে পার পেয়ে যেতে পারেন।
মূলত দলবাজি ও ফায়দাবাজির নগ্ন প্রদর্শনীর- দলীয় বিবেচনায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা বিতরণের কারণে গত দুই সরকারের, বিশেষত গত সরকারের আমলে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে পেট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক আরও দৃঢ়তর হয়েছে। দলীয় সাধারণ সম্পাদকদের ফায়দা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে এ সম্পর্ককে চলমান রাখা হয়। নানা ধরনের ফায়দা প্রদানের মাধ্যমে সাম্প্রতিককালে আমাদের সংসদ সদস্যরা, বিশেষত সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় এক ধরনের ‘জমিদারিত্ব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা তাদের সমর্থকদের বৈধ-অবৈধ সুযোগ-সুবিধাই প্রদান করেননি, তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছেন।
বলাবাহুল্য, এ ধরনের দলবাজি ও ফায়দাবাজির কারণে পুরো জাতি, যে জাতি ১৯৯০ সালেও ঐক্যবদ্ধ ছিল, বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। ক্রমান্বয়ে অনেকটা অন্ধ দলীয় আনুগত্য সৃষ্টি হয়েছে। এ আনুগত্যকে ধরে রাখার জন্য ফায়দা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সিম্বলিজম বা প্রতীক ব্যবহার এবং পরস্পরের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অনেকের প্রশ্ন, ভোটাররা তাদের আপনজনদের, যারা তাদের বিভিন্ন ফায়দা প্রদান করে, ভোট দিলে ক্ষতি কী? এতে গণতন্ত্রের সমস্যা কোথায়? এতে রাষ্ট্রেরইবা সমস্যা কোথায়?
আমরা মনে করি, ভোটাররা তাদের বিতর্কিত আপনজনদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার পরিণতি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়- নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মাত্র। দু’নির্বাচনের মাঝখানে কী ঘটে- নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সদাচরণ করেন কিনা, তার ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্র সত্যিকারার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা। যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতার অপব্যবহার না করেন; তারা সততা-স্বচ্ছতা-সমতা-ন্যায়পরায়নতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করেন; তারা জনমত, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং তারা ব্যক্তি বা কোটারি স্বার্থের পরিবর্তে সমষ্টির স্বার্থ সমুন্নত রাখেন, তাহলেই গণতন্ত্র ও সুশাসন কায়েম হয়। কিন্তু নির্বাচিত বিতর্কিত ব্যক্তিরা, যারা সব নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিজেদের আপনজনদের পেট্রনেজ বা ফায়দা দিতে অভ্যস্ত, তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক।
বিতর্কিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তারা যদি তাদের অতীতের সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মতো কর্মকাণ্ড থেকে ভবিষ্যতে নিজেদের বিরত রাখতে না পারেন, তাহলে আবারও ইজারাতন্ত্র- দুর্নীতি বা দুর্বৃত্তায়নের নিরংকুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই ইজারাকে নিরংকুশ করার এবং চলমান রাখার জন্য তারা অতীতের ন্যায় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ম্যানিপুলেট করতে পারেন এবং সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আবারও অকার্যকর করে তুলতে পারেন। এমনি পরিস্থিতিতেই উগ্রবাদের বিস্তার ঘটে এবং রাষ্ট্রের কার্যকারিতাই দুর্বল হতে থাকে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ সম্ভাবনা, যে ব্যাপারে সব সচেতন নাগরিকেরই সাবধান হওয়া আবশ্যক।
তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনে সৎ, যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক আওয়াজ ওঠা সত্ত্বেও, অধিক সংখ্যক বিতর্কিত ব্যক্তিদের নির্বাচিত হয়ে আসার ব্যাপারে হতাশ হওয়ার কোন অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি। এবারকার নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থীদের পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা ভোটারদের ‘পলিটিক্যাল এডুকেশন’ ও সচেতন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ‘সুজনে’র স্বেচ্ছাব্রতীদের উদ্যোগে এ কাজটি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়াও ‘সুজন’ ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গণমাধ্যমও অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে অধিকহারে আগ্রহ প্রদর্শন করছে। প্রার্থীরাও নির্বাচনের আগে বিরাজমান দুর্নীতি-দুর্বর্ৃত্তায়নের পন্থা পরিহারের মৌখিক ও লিখিত অঙ্গীকার করেছেন এবং নির্বাচন-পরবর্তীকালে বিজয়ীরা এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এসব ইতিবাচক বিষয় আমাদের দীর্ঘমেয়াদিভাবে আশান্বিত না করে পারে না।
তথ্য সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৮

Related Post

জাতীয় বাজেট ও তরুণদের ভাবনাজাতীয় বাজেট ও তরুণদের ভাবনা

সমাজ বদিউল আলম মজুমদার গত মে মাসে ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারের উদ্যোগে এবং জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল ‘জাতীয় বাজেট ও তরুণদের ভাবনা’। এতে সারাদেশ

সহজিয়া কড়চা: সংবিধান সংশোধন: বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়াসহজিয়া কড়চা: সংবিধান সংশোধন: বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া

সৈয়দ আবুল মকসুদ | তারিখ: ২৬-০৪-২০১১ আমাদের সামনে যখন যে বিষয়ই এসে উপস্থিত হোক না কেন, তা নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে কথা বলা আমাদের স্বভাব নয়। সঙ্গে সঙ্গে অযাচিতভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ

দুর্নীতি তদন্তে স্বচ্ছতা চাইদুর্নীতি তদন্তে স্বচ্ছতা চাই

বদিউল আলম মজুমদার দুর্নীতির অভিযোগে রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তদন্ত হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি এবং এসব তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ