সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন সুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

????????????????????????????????????

‘প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক নেতৃবৃন্দ। আজ ১৯ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১১.০০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এসব মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় কমিটির সদস্য জনাব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনও ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ধাপে নির্বাচনের দিন নিহত হয়েছে ৯ জন এবং আহত হয়েছে কয়েক শত মানুষ। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ঝরে গিয়েছে ৫৬ জনের প্রাণ এবং আহত হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার জন। দ্বিতীয় ধাপে মোট ৬৩৯টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৪৭টি জেলায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৩৯টি জেলাতেই সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এই নির্বাচনে ৩৭টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।’

গত ৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটে, ২০০৩ সালে ২৩ জনের এবং ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয়ে জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউপি নির্বাচনে ১০ জন নিহত হয় বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্টরা। অতীতের সব নির্বাচনের তুলনায় এবারের সহিংসতার মাত্রা অনেক বেশি। এবারের এখন পর্যন্ত (দুই ধাপে) নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪০ জন। সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১৩শ ইউপিতে ভোট হয়েছে, তাতেই এত প্রাণহানি। যেহারে সহিংসতা হচ্ছে তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে ১৯৮৮ সালে ১০০ জন, ১৯৯৭ সালে ৩৭ জন এবং ২০০৩ সালে ৩৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে কমিশনের কর্মকর্তাদের সূত্র ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ তে এমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল না। এবারের নির্বাচনে প্রথম তিন ধাপেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়াম্যানের সংখ্যা ১১৩ তে পৌঁছে গিয়েছে।’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে হলে এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট সকলকেই যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। এজন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যদি স্ব স্ব অবস্থানে থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, শুধুমাত্র তবেই পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলো ভালো হতে পারে, অন্যথায় নয়। নির্বাচন কমিশনকে সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তারাই। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই। তাই, সাহসিকতার সাথে তাদেরকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। নইলে, জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’

প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে একটি বিকৃত নির্বাচন বলে অভিহিত করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা প্রদানের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা কয়েকজন মিলে হাইকোর্টে এ বিষয়ে মামলা করেছিলাম। যেদিন এ মামলার রায় হওয়ার কথা সেদিন সিনিয়র জজকে আপিল বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়, যার ফলে রায় হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেও এ সংক্রান্ত শুনানি করাতে পারিনি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর আমরা এ বিষয়ে আবারো উদ্যোগ নিবো।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন একদিনের বিষয় নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আমরা মনে করি যে, নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের ধারণা স্পষ্ট নয়। তারা আমাদের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ কমিশনই সুষ্ঠুু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে বড় বাঁধা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে যে, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। কারণ সহিংসতার বহু চিত্র পত্র-প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, যা সুজন-এর মূল প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। এ রকম অনিয়ম যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে ২০১৯ সালে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে আমাদের উৎকণ্ঠিত না হবার কোনো কারণ নেই। এরকম চলতে থাকলে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ধ্বংস হতে বাধ্য, যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।’

মূল প্রবন্ধ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Related Post

“ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন“ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন

গত ০৭ ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ১১টায় সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি হল রুমে “ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা ও উত্তরণের পন্থা” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সুজনের সভাপতি

‘নবম সংসদে কারা নির্বাচিত হলেন?’শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন‘নবম সংসদে কারা নির্বাচিত হলেন?’শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশ কোটিপতি। অর্থাৎ তাঁদের নিজ ও নির্ভরশীলদের নামে এক কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে সম্পদের বর্ণনা দেয়া আছে কিন্তু মূল্য

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: দৃশ্যপট ও শিক্ষণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: দৃশ্যপট ও শিক্ষণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন-সুশাসনের