সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গোলটেবিল বৈঠক '‌নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

'‌নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আবশ্যক। সংস্কারের একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে কমিশন এরই মধ্যে স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময়ও করেছে। কমিশনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে কিছু নতুন আইনের খসড়া। বর্তমান সরকারও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমনি প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের মতামত তুলে ধরার লক্ষ্যে সুজন ১১ আগস্ট ২০১১ প্রেস ক্লাবে ‘নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি’ত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব এ টি এম শামসুল হুদা। সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জনাব এম হাফিজ উদ্দিন খান। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের সাবেক সভাপতি জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রাজনীতিবিদ জনাব আ স ম আবদুর রব, জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডেমোক্রেসি ওয়াচ এর নির্বাহী পরিচালক জনাব তালেয়া রহমান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমূখ।
‌‌’নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রস-াব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি তার প্রবন্ধে কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব ও প্রস্তাব প্রসঙ্গে সুজনের মতামত তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি যাতে গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থীর নাম আহ্বান করে সে পরামর্শ দেন তিনি। জন তহবিল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের সময় অর্থ বরাদ্ধ দেয়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এতে নির্বাচনে টাকার খেলা আরো বেড়ে যাবে। নির্বাচনে অর্থের প্রভাব কমানোর জন্য নির্বাচনী ব্যয়সীমা উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনার কথা বলেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাধীনভাবে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হবে। তিনি জাতীয় নির্বাচনে ‘না ভোটের’ বিধান আরপিওতে সংযোজন করার প্রস-াব করেন। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। প্রস-াব করেন, প্রার্থীরা যাতে অন লাইনে তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দেন। যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর আবশ্যকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন শুধু নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করলেই হবে না। পাশাপাশি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থীদের সদাচরণ করতে হবে। ভোটারদের ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি নিরপেক্ষ নির্বাচনের বল এখন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে।
জনাব এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ২০১৪ সালে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। তবে নির্বাচন কিভাবে হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোকেই ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত সাড়ে চার বছরে নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন হচ্ছে যাতে প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন কার্যকর হওয়াটা রাজনৈতিক সিদ্ধানে-র ওপর বেশী নির্ভরশীল বলে অভিমত দেন তিনি। ‘জাতীয় পরিচয় যাচাইকরণ’ এর কাজ চলছে বলে তিনি সকলকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, মানুষের করের টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রদান করা উচিৎ হবে না। নির্বাচনী ব্যয়ে দলীয় প্রধানদের সফরবাবদ ব্যয় অন-র্ভূক্ত করা উচিৎ। ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হউক না কেন. সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার ওপর জোর দেন তিনি। তালেয়া রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার সময় এখনো আসেনি। বিচারপতি কাজী এবাদুল হক প্রস্তাব দেন, সার্চ কমিটি যেন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচিত করার জন্য প্যানেল না করে সুনির্দিষ্ট নাম প্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠান। সৈয়দ আবুল মকসুদ ছোট ছোট দলগুলোকে একত্রিত হয়ে, জোটবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনে নতুন পথ বের করার আহ্বান জানান। আ স ম আবদুর রব বলেন, দ্বি-দলীয় ধারা থেকে জাতির মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সত, যোগ্য প্রার্থী যাতে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে নির্বাচন কমিশনকে তার উপায় বের করার আহ্বান জানান। মাহমুদুর রহমান মান্না রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তৃণমূলের সাধারন মানুষের মতামতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্য করার পথ বের করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেন। রুহিন হোসেন প্রিন্স দুই দলের যাতাকল এবং মোহমুক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ছোট ছোট বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রচারের সমসুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।

Related Post

‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

‘গণতন্ত্র যখন কম থাকে আর কর্তৃত্ববাদী সরকার বেশি থাকে, তখন ন্যায়বিচার ও বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সবাই সচেষ্ট হতে থাকে। এই অবস্থায় বিচার বিভাগকে আরও স্বাধীন, আরও সুদৃঢ় ও আরও

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়

‘নির্বাচন প্রাক্কালে জাতির কাছে নির্বাচনী ইশ্তেহারের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার যে প্রতিশ্রুতি করেছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি’। গত ১১ জানুয়ারি ২০০৯, ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে জাতীয়

সুজন-এর উদ্যোগে ‘সংবিধান সংশোধন, বিচারপতিদের অভিশংসন ও এর তাৎপর্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনসুজন-এর উদ্যোগে ‘সংবিধান সংশোধন, বিচারপতিদের অভিশংসন ও এর তাৎপর্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের নিকট অর্পণ করা হলে বিচার বিভাগ সরকারের কাছে নতজানু হতে বাধ্য হবে এবং এর বিরূপ প্রভাব অন্যান্য সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানেও পড়বে।’