সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গোলটেবিল বৈঠক ‌‌নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানালেন’ – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

‌‌নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানালেন’ – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা


Picture_Roundtable

গত ২০ এপ্রিল ২০১৩, সকাল ১০ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজন-এর উদ্যোগে বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নাগরিক ভাবনা শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সহ-সভাপতি জনাব এস এম শাহজাহান। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক . বদিউল আলম মুজমদার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ব্যরিস্টার রফিকউলহক, ড. রওনক জাহান, জনাব আলী ইমাম মজুমদার, সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, রাজনীতিবিদ জনাব সরদার আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক আবু সায়ীদ, জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, লেঃ জেঃ (অবঃ) মাহবুবুর রহমান ও জনাব রুহিন হোসেন প্রিন্স, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক হামিদা বানু, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জনাব নুরুল কাদির, সুজন সম্পাদক . বদিউল আলম মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম মর্তোজা মুনির হায়দার, এডভোকেট আহসানুল করিম চৌধুরী বাবুল আবুল হাসনাত প্রমূখ।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক . বদিউল আলম মজুমদার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে মোটাদাগে, যুদ্বাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক তাণ্ডব, গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, হরতাল ও তার ক্ষয়ক্ষতি, বিরোধী দলের ওপর দমন পীড়ন, চলমান অপশাসন, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করেন। এ সকল বিরাজমান অবস্থা আমাদের জন্য এক অসহনীয় ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এবং জাতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আজ প্রয়োজন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে যেমন তিনজোটের রূপরেখা প্রণীত হয়েছিলো তেমন একটি রূপরেখা। এ রূপরেখার যৌথ রূপকার হতে পারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এবং ড. কামাল হোসেন-ড. বি চৌধুরী-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-এলডিপি, বাসদ, জাসদসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দলের সমন্বয়ে গঠিত অন্য আরেকটি জোট। এ উদ্যোগের সঙ্গে অবশ্য যুক্ত হতে পারেন নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আমাদের করণীয়গুলোকেও, তিনজোটের রূপরেখার অনুসরণে, তিন ভাগে ভাগ করা যায়: (১) নির্বাচন-পূর্ববর্তী করণীয়, (২) নির্বাচনকালীন সময়ে করণীয়, এবং (৩) নতুন সরকারের করণীয়। প্রথম দুটি হবে আশু করণীয় এবং শেষটি হবে দীর্ঘমেয়াদী করণীয়। নির্বাচন-পূর্ববর্তী করণীয়ের মধ্যে ক) নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, (খ) নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ (গ) নির্বাচনী আইনের সংস্কার ও এর যথার্থ প্রয়োগ (ঘ) হলফনামার মাধ্যমে তথ্য প্রদানে কড়াকড়ি। প্রবন্ধে আরো বলা হয়, আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার রাজনীতির কাছে পুরো জাতি আজ জিম্মি। তাই জাতির এ যুগসন্ধিক্ষণে নাগরিকদেরকেই এমন একটি রূপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রূপরেখাটি সমপর্কে জনমত তৈরি করে তা প্রয়োগে রাজনীতিবিদদের বাধ্য করতে হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে আমরা এক চরম সংকটের দিকে ধাবিত হতে পারি।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আমরা দেশে সুশাসন চাই, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতন্ত্র থাকতে হবে। আমাদের গণতন্ত্র আজ একদিনের গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিরাজমান সংকটের মূল কারণ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার চেষ্টা। তিনি এ সংকট থেকে পরিত্রাণের কোন ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এস এম শাহজাহান বলেন, আমরা সৎ, নির্ভীক ও যোগ্য লোকেরা সরকার পরিচালনা থেকে দূরে সরে রয়েছি। আমরা জানি যে, বর্তমান সংসদ আজ ব্যবসায়ীদের দখলে। আমাদের attitude, behavior and culture এ এই তিনটি জিনিষ বদলাতে হবে। করণীয়র চেয়ে বর্জনের তালিকা বড় করতে হবে, কেননা যেটি morally wrong তা politically right হতে পারে না। ব্যরিস্টার রফিকউলহক বলেন, বেশিরভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন নি, তত্ত্ববধায়ক সরকার কি রকম হবে আবার আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেন নি, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কিরকম হবে। তিনি দুই নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা দুজনে একত্রে বসে ঠিক করুন তত্ত্ববধায়ক সরকার বা অন্তবর্তীকালীন সরকার কিভাবে গঠন করা হবে। . রওনক জাহান বলেন, আমাদের নির্বাচনটা কিভাবে হবে? সবাই মনে করছে সমঝোতা করে নির্বাচন করলেই আমরা পার পেয়ে যাবো। এভাবে নির্বাচন করে সবাই যদি আগের মত স্বরূপে আর্বিভূত হয় তাহলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, একটি দেশ যখন চেতনাগতভাবে ভাগ হয়ে যায় তা অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। দেশে যখন দলীয় নেতা থাকে কিন্তু জাতীয় নেতা থাকে না তখন এভাবে দেশ চেতনাগতভাবে ভাগ হয়ে যায়। ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিরাজমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেন।

জনাব সরদার আমজাদ হোসেন গণতন্ত্র নিয়ে খেলা বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক সরকারের স্বপ্ন দেখছি যা বর্তমানে অনুপস্থিত। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, বর্তমান সরকার ভোট চুরি করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিতে চাচ্ছে না। কেননা প্রশাসনের সর্বস্তরে সকলেই দলীয় লোক। জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি উদ্বিগ্ন যে, সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে। এতে আমাদের দীর্ঘ দিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন কেন এরকম দুর্ঘটনা ঘটছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুর সমাধান হলেও জামায়াত ইস্যুর সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, আমাদের মূল বিষয় হলো, ক্ষমতায় আরোহন। আপনারা সবাই সংলাপের কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবতার সাথে সংলাপের কোন মিল নাই। অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা সবাই সংলাপের কথা বলছি, নানাভাবে বলছি। কিন্তু কি বিষয়ে সংলাপ হবে তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। লেঃ জেঃ (অবঃ) মাহবুবুর রহমান বলেন, উদ্ভট এক উটের পীঠে চলেছে স্বদেশ| দেশের বিরাজমান অবস্থার জন্য তিনি গণতন্ত্রের শূন্যতাকে দায়ী করেন। গণতন্ত্রের পূবশর্ত নির্বাচন। আর এ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। আমরা অন্ধকারের পথে হাঁটছি উল্লেখ করে জনাব রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ৭১’র মূল চেতনাকে কেউ যদি মুছে ফেলতে চায় তা আমরা মেনে নেবো না। ৭১’র পরাজিত শক্তি সরকার ও বিরোধী দলের আশ্রয়ে এমন শিকড় গড়ে তুলেছে যা জাতির জন্য ভয়াবহ।

অধ্যাপক হামিদা বানু বলেন, নাগরিক হিসেবে আমি উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি সারাদেশে জামায়াত-শিবির যে তান্ডব চালিয়েছে তা বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে। সকল দলের অংশগ্রহণে যদি নির্বাচন না হয় তা জাতির জন্য হুমকিস্বরুপ বলে তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যদি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে তাহলে বাংলাদেশের সকল অপশক্তিকে রোধ করা সম্ভব। গোলাম মর্তুজা বলেন, বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। এটি তাদের একটি এজেন্ডা। তাদের আরো অন্য অঙ্গীকার ছিলো। দুঃখের বিষয় তারা এগুলো ভুলে গেছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

 

Related Post

“সংস্কার প্রস্তাব : বর্তমান ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা“সংস্কার প্রস্তাব : বর্তমান ভাবনা” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা

গত ২২ এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১০ টায় ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব-এর ভিআইপি লাউঞ্জে একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। “সংস্কার প্রস্তাব : বর্তমান ভাবনা” শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় মূল

‘চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত‘চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

নির্বাচনই যথেষ্ট নয়, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার আহ্বান দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার ব্যবস’াকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা আমাদের সাংবিধানিক নির্দেশনা। অথচ স্বাধীনতার ৪৩

“সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত“সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, সকাল ১০.০০টায় ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর আয়োজনে জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়াম এ “সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়” শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সুজনের নির্বাহী সদস্য