দারিদ্র্য ও বৈষম্য এবং জাতীয় বাজেট


ড. বদিউল আলম মজুমদার
(গতকালের পর)
লক্ষণীয় যে, এডিপি’র পরিমাণ কমানো এবং এডিপি বাস্তবায়নের হার হতাশাব্যঞ্জক হলেও, অনুন্নয়ন খাতে প্রস্তাবিত রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি বিদায়ী অর্থ বছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেটেও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে – বিদায়ী অর্থ বছরের অনুন্নয়ন খাতের প্রাক্কলিত রাজস্ব বাজেট ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৯,১৯২ কোটি থেকে ৬১,৭৮৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সরকার পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও এর কার্যকারিতা, বিশেষত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এর দক্ষতা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে বলে অনেকের আশংকা। তবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, বিদায়ী অর্থ বছরে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হলো জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্য ও কৃষি উপকরণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভর্তুকি প্রদান।
প্রস্তাবিত বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো যে, এতে কর্মসংস্থানের জন্য ২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘১০০ দিনের কর্মসৃজন’ শীর্ষক একটি কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০ লক্ষ দরিদ্র কর্মক্ষম বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে ভবিষ্যতে একটি গ্যারান্টি স্কীমের মতো করে গড়ে তোলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট কী দারিদ্র্য-বৈষম্য নিরসনে সহায়ক হবে?
প্রস্তাবিত বাজেট দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে সহায়ক হবে যদি এর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি- যাতে দরিদ্ররাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় – সহনীয় পর্যায়ে আসে, দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় এবং তারা সম্পদের ন্যায্য হিস্যা পায়। মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা এ সকল ক্ষেত্রে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার কিছু কিছু প্রশংসনীয়। তবে তাঁকে সাধুবাদ যে, তিনি তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ‘দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি’র কথা বলেন নি, কিংবা সামাজিক ‘অন্তর্ভুক্তিকরণে’র কথা একবারও উচ্চারণ করেন নি। অতীতে দরিদ্রবান্ধব শ্লোগান ব্যবহার করে আমরা দরিদ্রদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি এবং অন্তর্ভুক্তিকরণের বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে আমরা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতাই (উদাহরণ, স্থানীয় সরকারে নারী আসন) করেছি।
বর্তমান বছরের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির, বিশেষত, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য নিঃসন্দেহে সরকারের অদূরদর্শিতা দায়ী। সরকার আগে থেকে খাদ্যদ্রব্যাদি আমদানি করলে সঙ্কট কিছুটা লাঘব হতো। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানির দামে ব্যাপক উধর্বগতি আমাদের মুদ্রাস্ফীতির জন্য বহুলাংশে দায়ী। আন্তর্জাতিক বাজারে যে উত্তাপ বিরাজমান তা ভবিষ্যতে লাঘব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় না। তবে ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন এবং অধিক হারে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য, সার, জ্বালানি ইত্যাদির বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টার ফলে মুদ্রাস্ফীতির ওপর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদিভাবে উৎপাদন কিছুটা বাড়াতে হলে কৃষকদের জন্য সার, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের যোগান দেয়া জরুরি। সবকিছু বিবেচনা করে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে এনে দরিদ্রদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আগত অর্থ বছরে বেশি কিছু আশা করা দুরাশা হবে।
কর্মসংস্থানের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ‘১০০ দিনের কর্মসৃজন’ কর্মসূচি একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তবে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন করতে গেলে অন্যান্য প্রকল্পের ন্যায় সমস্যা দেখা দেবে বলেই অনেকের ধারণা। তাই প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে। এছাড়াও এটি হবে বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার আকাঙক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আশার কথা যে, মাননীয় উপদেষ্টা তাঁর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি প্রচেষ্টা প্রয়োজনীয় হলেও, কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হতে হবে বেসরকারি ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর এ জন্য আবশ্যক বিনিয়োগ। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে বিনিয়োগের হার দ্রতহারে বাড়ছে না। বস্তুত দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে আমাদের দেশে বিনিয়োগের হার গত কয়েক বছরে হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে এই হার ছিল ২৪.৭ শতাংশ, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৫ শতাংশে এবং বর্তমান বছরে তা ২৪.২ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান বছরে প্রবৃদ্ধির হারও কমে ৬.২ শতাংশে দাঁড়াবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। উপরন্তু বৈদেশিক বিনিয়োগের হালও বর্তমানে স্থবির।
তবে প্রস্তাবিত বাজেটকে অনেকেই ব্যবসাবান্ধব বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আশা করছেন যে, এর মাধ্যমে বিনিয়োগের হার বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাড়তি বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের আভ্যন্তরীণ বাজার থেকে অধিক পরিমাণে ঋণগ্রহণ বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের অত্যধিক ঋণ গ্রহণের ‘ক্রাউডিং আউট এফেক্ট’ হতে পারে। অর্থাৎ সরকারের ঋণ গ্রহণের ফলে বাজারে তারল্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে, ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এছাড়াও ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সুদের হারও বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক হতে বাধ্য। উপরন্তু ব্যাপক দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত বেসরকারি খাতে যদি শৃঙখলা ফিরে না আসে তাহলে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সমাজ থেকে বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় অবদান আশা করা যায় না।
গবেষকদের মতে, প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ যুবক ও যুব মহিলা কর্মসংস্থানের খোঁজে শ্রম বাজারে প্রবেশ করে। ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামী অর্থ বছরে অন্তত ১২ লাখ ব্যক্তি শ্রম বাজারে প্রবেশ করবে। এ বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের যোগান দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় এবং যথার্থও নয়। আমাদের বেসরকারি খাতেও দ্রুত হারে প্রসার লাভ করছে না। তাই আত্মকর্মসংস্থানই মূল ভরসা। দুর্ভাগ্যবশত এ লক্ষ্যে বাজেটে কোন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। শুধু বার্ড ফ্লু’র কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদেরকে ১৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আরো প্রয়োজন পুঁজির। একইসাথে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের। আত্মকর্মসংস্থানের দ্রুতহারে বৃদ্ধির জন্য সরকারের উদ্যোগে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ও পুঁজি যোগানের সাথে সাথে বেসরকারি উদ্যোগে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে প্রশিক্ষিত আত্মশক্তিতে বলিয়ান উজ্জীবকদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।
দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করতে হলে অবশ্যই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে অধিক হারে সম্পদ পৌঁছাতে হবে। তাদের ন্যায্য হিস্যা তাদেরকে দিতে হবে। একইসাথে ঐতিহাসিকভাবে তারা যে বঞ্চিত হয়েছে তা পূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
একটি অতি সহজ অংকের মাধ্যমে জাতীয় বাজেটে দরিদ্রদের ন্যায্য হিস্যা নিরূপণ করা যায়। আমাদের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের আকার ৯৯,৯৬২ কোটি টাকা এবং এডিপি ২৫,৬০০ কোটি টাকা। উভয় বাজেট ১৫ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন করলে মাথাপিছু পড়বে যথাক্রমে ৬,৬৬৪ টাকা ও ১৭০৭ টাকা। অর্থাৎ জাতীয় বাজেটে প্রত্যেক নাগরিকের হিস্যা ৬৬৬৪ টাকা এবং এডিপি’তে ১৭০৭ টাকা। এই হিসাব মতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জাতীয় বাজেট ও এডিপি’তে তাদের হিস্যা যথাক্রমে ৩৩,৩২০ টাকা ও ৮,৫৩৩ টাকা। স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, এ টাকা তাদের হিস্যা, প্রাপ্য নয়। এই টাকার একটি বিরাট অংশ কেন্দ্রিয় সরকার ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা, যা থেকে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি সেবা পাওয়ার কথা। আরেকটি অংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যয় হওয়ার কথা, যাতে তারা কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। এই বিশাল অংকের পরিমাণ সেবা কি জনগণ পায়? অনেকের ধারণা, এ বিশাল অংকের অর্থ দিয়ে যে শ্বেত হস্তি লালন করা হচ্ছে তা তাদের যতটুকু উপকার করে, তার চেয়ে বেশি অপকারই করে। অনেকের মতে, প্রিডেটরি বা লুন্ঠনকারী রাষ্ট্রীয় কাঠামো উপকারের পরিবর্তে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধনই করে।
শুধু বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেই নয়, প্রচলিত প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়ন কৌশলও দরিদ্রবিমুখ। এই কৌশলের মূল কথা হলো, বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। এটি পুরনো ট্রিকল ডাউন বা ‘চুইয়ে পড়া’ অর্থনীতির ধারণা। দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত এ ধারণা আমাদের দেশে এবং অনেক দেশেই কাজ করে নি। কারণ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির স্বাস্থ্য কিছুটা পরিমাপ করলেও তা অধিকাংশ জনগণের সত্যিকারের আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণে অপারগ। উপরন্তু প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৈষম্য সৃষ্টি হয়। অভিজ্ঞতা তাই বলে। এছাড়াও প্রবৃদ্ধি সাধারণত দরিদ্রবান্ধব হয় না। আমাদের দেশেও তা হয় নি।
এডিপি’র অপেক্ষাকৃত ছোট আকার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর তার সম্ভাব্য নেতিবাচক ফলাফলের ব্যাপারে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। একইসাথে প্রশ্ন তোলা দরকার এডিপি’তে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পের মান সম্পর্কে। সমাজে প্রতিপত্তিশালীদের প্রভাবে অনেক সময় এমন সব প্রকল্প এডিপি’তে অন্তর্ভুক্ত হয় যার কোন অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাই অনুপস্থিত। তাই এডিপি’র পুরো বরাদ্দকে উৎপাদনশীল বিনিয়োগ হিসেবে ধরে নেয়া যায় না এবং আকার বড় হলেই তা দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন আশা করা ঠিক নয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যায়, ধার করা অর্থ রাজস্ব খাতে ব্যয় করে – যেহেতু এডিপি’র আকার মোট ঘাটতি থেকেও বেশি- আমরা আমাদের সঙ্গতির বাইরে চলার চেষ্টা করছি কি না। এছাড়াও এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন হবে বিকেন্দ্রিকরণ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে সম্পদ হস্তান্তর। উপরন্তু, শিৰক ও ডাক্তারদের বেতন – যে শিক্ষক ও ডাক্তাররা মানসম্মত সেবা দেন না, অনেকক্ষেত্রে কোন সেবাই দেন না – উন্নয়ন ব্যয় হিসেবে গণ্য করা কতটুকু যৌক্তিক? প্রসঙ্গত, সর্বাধিক দারিদ্র্যপীড়িত বিভাগগুলোর জন্য মাথাপিছু এডিপি বরাদ্দ সর্বাধিক নয়।
প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় দাবি করেছেন যে, “দারিদ্র্য বিমোচন ব্যয়কে অধিকহারে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে মোট ব্যয় হবে বাজেটের প্রায় ৫৮.৩ শতাংশ (জিডিপি-র ৯.৫ শতাংশ)।” এ সকল ব্যয়ের একটি তালিকা পাওয়া গেলে তা মূল্যায়ন ও মনিটরিং করা সম্ভব হতো। আশা করি, সরকার ও আমাদের অর্থনীতিবিদরা এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও বরাদ্দ থাকলেও, এর ফলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন ফলাফল আশা করা যায় না। উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন হবে ছকবাঁধা পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়নের পরিবর্তে, এটিকে ঢেলে সাজানো, কারণ আমাদের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া এখন বস্তুত অটো-পাইলটে। তা না হলে যে লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে, ফলাফল তার উল্টো হতে পারে। যেমনি হয়েছে বর্তমান অর্থ বছরে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, বিদায়ী বাজেটের লক্ষ্য ছিল: সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, প্রবৃদ্ধির গতিধারা ত্বরান্বিত করা, মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, ব্যক্তিখাত চালিত প্রবৃদ্ধির বাধাগুলো দূর করা, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, অঞ্চল ও শ্রেণীভিত্তিক আয় সমতা তৈরি এবং খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা। (সমাপ্য)
[লেখক : গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ]
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ জুন ২০০৮

Related Post

সমকালীন প্রসঙ্গ:কেমন হওয়া উচিত আসন্ন বাজেটসমকালীন প্রসঙ্গ:কেমন হওয়া উচিত আসন্ন বাজেট

বদিউল আলম মজুমদার সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হয় না। যেমন ক্ষমতাধরদের সম্পদের হিসাব প্রদান ও প্রকাশ, তাদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন ইত্যাদি। এ জন্য প্রয়োজন হয়

স্থানীয় সরকার: আশা ও আশঙ্কার ইউপি নির্বাচনস্থানীয় সরকার: আশা ও আশঙ্কার ইউপি নির্বাচন

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২০-০৩-২০১১ প্রায় দীর্ঘ তিন বছর প্রতীক্ষার পর মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম দফায় ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় এলাকার ৫৯৬টি ইউনিয়ন