সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক মূল প্রবন্ধ (Keynote papers),সংবাদ সম্মেলন,সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত


খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেবে, এগুলোর ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন- করবে; প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য এখন থেকেই পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নেতৃবৃন্দ। তারা আজ ২২ মে ২০১৮, সকাল ১১.০০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সুজন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের সাধারণ সমপাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ড. তোফায়েল আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘সুজন’-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী গত ১৫ মে ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল খুলনা সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৮৯ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৪৮ জন; অর্থাৎ ৩টি পদে সর্বমোট ২৪২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও চূড়ান- প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন অর্থাৎ ৩টি পদে সর্বমোট ১৯২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজন মেয়রসহ ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৮ জন সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর সর্বমোট ৩৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অনিয়মের অভিযোগে ৩১ নং সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৯ ও ১০ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৩টি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স’গিত হওয়ায় এই ওয়ার্ডসমূহের ফলাফল নির্ধারিত হয়নি। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে রোজিনা বেগম রাজিয়া নামের ১ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি।

তিনি বলেন, নির্বাচনী বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রার্থীগণ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে ৭ ধরনের তথ্য মনোনয়নপত্রের সাথে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করেছিলেন এবং আমরা ‘সুজন’-এর উদ্যোগে নির্বাচনের পূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীগণ প্রদত্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছিলাম। যাতে কী ধরনের প্রার্থীরা এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তা ভোটাররা জানতে পারেন এবং পাশাপাশি তাদের সমপর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পর আমরা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বিশ্লেষণকৃত তথ্য তুলে ধরছি। পাশাপাশি বিজয়ীদের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সাথে তথ্যের তুলনাও উপস’াপিত হলো। ৩টি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স’গিত হওয়ায় সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৩১টি পদের মধ্যে নির্বাচিত ৩০ জনের এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১০ পদের মধ্যে নির্বাচিত ৮ জনের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস’াপন করা হলো। উল্লেখ্য আমরা জানতে পেরেছি যে, ৩১ নং সাধারণ ওয়ার্ডে মোঃ আরিফ হোসেন এবং ৯ ও ১০ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে যথাক্রমে রুমা খাতুন ও লুৎফুন্নেসা এগিয়ে আছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সুজনের পক্ষ থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ীদের হলফনামা ও আয়কর বিবরণীতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমের সহায়তায় ভোটারদের সামনে উপস’াপন করে তাঁদের দেখাতে চাই যে, তাঁরা কী ধরনের প্রতিনিধি নির্বাচিত করলেন। নিশ্চয়ই তাঁরা এই বিশ্লেষণ থেকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনুষঙ্গসমূহ খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন; যা ভবিষ্যত সিদ্ধান- গ্রহণে তাঁদের জন্য সহায়ক হতে পারে।

শুধুমাত্র নির্বাচন পরবর্তীকালে বিজয়ীদের তথ্য উপস’াপনই নয়, নির্বাচনের পূর্বেও সুজন, পিস প্রেসার গ্রুপ ও পিস অ্যাম্বাসেডরদের সাথে যৌথ উদ্যোগে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শানি-পূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের সপক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলেন কর্মসূচিসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, এই নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেবে, এগুলোর ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন- করবে এবং প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান-মূলক শাসি-র ব্যবস’া করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য এখন থেকেই পূর্বপ্রস’তিমূলক ব্যবস’া গ্রহণ করবে। মনে রাখতে হবে, ২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। আগামী ২৬ মে ২০১৮, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। অক্টোবরের মধ্যেই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। স’গিতাদেশ প্রত্যাহার হলে যে কোনো সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৮টি করে মোট ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯-এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা রয়েছে যে, ২০১৮-এর ডিসেম্বরেই হতে পারে এই নির্বাচন। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জনমনে আস’া সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিগতভাবে আমরা নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে পারি; যা আমাদের একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করতে পারে। আশা করি নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই তাদের চিহ্নিত ত্রুটিসমূহ সংশোধন করবে এবং আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শানি-পূর্ণ তথা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী কর্তৃক হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন দিলীপ কুমার সরকার। নবনির্বাচিত প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১৮ জনেরই (৪৬.১৫%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তাঁর নীচে। পক্ষান-রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীর সংখ্যা ১৫ জন (৩৮.৪৬%)। ৩৯ জন নবনির্বাচিত জন প্রতিনিধির মধ্যে ৭ জন (১৭.৯৪%) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেননি। নির্বাচনে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী ২৪.৪৭% (১৯২ জনের মধ্যে ৪৭ জন) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৮.৪৬% (৩৯ জনের মধ্যে ১৫ জন)। অপরদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরুনো ৩৬.৪৫% (১৯২ জনের মধ্যে ৭০ জন) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ১৭.৯৪% (৩৯ জনের মধ্যে ৭ জন)। যে ২ জন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি, তাদেরসহ হিসাব করলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরুনো প্রার্থীর শতকরা হার দাঁড়ায় ৩৭.৫% (৭২ জন)। বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় উচ্চ শিক্ষিতদের নির্বাচিত হওয়ার হার যেমন বেশি, তেমনি স্বল্প শিক্ষিতদেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় নর্বাচিত হওয়ার হার কম। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

নবনির্বাচিত প্রার্থীদের পেশা সম্পর্কে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ২৭ জনই (৬৯.২৩%) ব্যবসায়ী। পেশার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি। কেননা, ৩টি পদে ৬৫.৬২% (১৯২ জনের মধ্যে ১২৬ জন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ৬৯.২৩% (৩৯ জনের মধ্যে ২৭ জন)। বিশ্লেষণে অন্যান্য নির্বাচনের মত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নবনির্বাচিত প্রার্থীদের মামলা সম্পর্কে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী সকল প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ১৬.৬৬% (১৯২ জনের মধ্যে ৩২ জন)-এর বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই হার ১০.২৫% (৩৯ জনের মধ্যে ৪ জন); প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে অতীতে ২১.৩৫% (১৯২ জনের মধ্যে ৪১ জন)-এর বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই হার ৩৩.৩৩% (৩৯ জনের মধ্যে ১৩ জন); উভয় সময়ে মামলার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৮.৩৩% (১৯২ জনের মধ্যে ১৬ জন)-এর বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই হার ৭.৬৯% (৩৯ জনের মধ্যে ৩ জন)। ৩০২ ধারায় মামলার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ২.৬০% (১৯২ জনের মধ্যে ৫ জন)-এর বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই হার ২.৫৬% (৩৯ জনের মধ্যে ১ জন) এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৪.৬৮% (১৯২ জনের মধ্যে ৯ জন)-এর বিরুদ্ধে অতীতে মামলা থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই হার ৭.৬৯% (৩৯ জনের মধ্যে ৩ জন)। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, ৩০২ ধারাসহ অতীত মামলার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি হলেও অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে তা কম।

নবনির্বাচিত প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় সংক্রান- তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১৭ জনের (৪৩.৫৮%) বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম। আয় উল্লেখ না করা ৫ জনসহ এই সংখ্যা দাড়ায় ২২ জনে (৫৬.৪১%)। নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কোটি টাকার অধিক আয়কারী রয়েছেন ১ জন (২.৫৬%)। বছরে ৫ লক্ষ টাকার কম আয়কারী ৬৫.১০% (১৯২ জনের মধ্যে ১২৫ জন) প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আয় উল্লেখ না করা ২৭ জনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে এই সংখ্যা ছিল ১৫২ জন (৭৯.১৬%)। একই পরিমান আয়কারী নির্বাচিত হয়েছেন ৪৩.৫৮% (১৭ জন)। আয় উল্লেখ না করা ৩ জনসহ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জন (৫৬.৪১%)। অপর দিকে ৫০ লক্ষ টাকার অধিক আয়কারী ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সকলেই (১০০%) নির্বাচিত হয়েছেন; সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মধ্যে এই হার দাড়ায় ৭.৬৯%। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, স্বল্প আয়কারী প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় কম (৭৯.১৬% এর স’লে ৫৬.৪১%) হলেও অপেক্ষাকৃত অধিক আয়কারী প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি (১.৫৬% এর স’লে ৭.৬৯%)।

নবনির্বাচিত প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১৫ জনের (৩৮.৪৬%) সমপদের পরিমান ৫ লক্ষ টাকার কম। সমপদের কথা উল্লেখ না করা ৭ জনসহ এই সংখ্যা দাড়ায় ২২ জন (৫৬.৪১%)। কোটিপতি রয়েছেন মাত্র ২ জন (৫.১২%)। তিনি বলেন, ১৯২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনই (৫৬.৭৭%) ছিলেন ৫ লক্ষ টাকার কম সমপদের মালিক। সমপদের কথা উল্লেখ না করা ৩৮ জনসহ এই সংখ্যা ছিল ১৪৭ জন (৭৬.৫৬%)। এদিকে নবনির্বাচিত ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে এই হার ৩৮.৪৬% (১৫ জন)। সমপদের কথা উল্লেখ না করা ৭ জনসহ এই সংখ্যা দাড়ায় ২২ জন (৫৬.৪১%)। অপর দিকে কোটি টাকার অধিক সমপদের মালিক ২ জন (১.০৪%) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ১ জন। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কম সমপদের মালিকদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় কম হলেও অধিক সমপদের মালিকদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি। প্রার্থীদের সমপদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই সমপদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিটি সমপদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স’াবর সমপদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। বিষয়টি সমপর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও আমরা হলফনামার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মূল্যমান উল্লেখ করা সমপদের হিসাব অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরলাম। অধিকাংশ প্রার্থীর সমপদের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে আরও বেশি।

নবনির্বাচিত প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান- তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কোনো ঋণ নেই। নবনির্বাচিত ৩০ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে ঋণ গ্রহীতা মাত্র ৬ জন (২০%)। ঋণ গ্রহীতা এই ৬ জনের মধ্যে কোটি টাকার অধিক ঋণ রয়েছে মাত্র ২ জনের (৩৩.৩৩%)। সর্বোচ্চ ৩০,৪৭,৪৪,৪১৫.০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন ২২ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর কাজী আবুল কালাম আজাদ বিকু। নবনির্বাচিত ৮ জন সংরক্ষিত (নারী) আসনের কাউন্সিলরের মধ্যে কোনো ঋণ গ্রহীতা নেই। নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ঋণ গ্রহীতা মাত্র ৬ জন (১৫.৩৪%)। নির্বাচনে মোট ১৯২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জন (৭.২৯%) ঋণ গ্রহীতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নবনির্বাচিত ৩৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৬ জন (১৫.৩৪%)। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে ঋণ গ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।

নবনির্বাচিত প্রার্থীদের আয়কর সংক্রান- তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৩২ জন (৮২.০৫%) করদাতা। এই ৩২ জনের মধ্যে ৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম কর প্রদান করেন ১২ জন (৩৭.৫%) এবং লক্ষাধিক টাকা কর প্রদান করেন ৮ জন (২৫%)। নির্বাচনে সর্বমোট ১৯২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১১ জন (৫৭.৮১%) ছিলেন কর প্রদানকারী। নবনির্বাচিত ৩৯ জনের মধ্যে কর প্রদানকারী ৩২ জন (৮২.০৫%)। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কর প্রদানকারীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি। একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, কোনো কোনো প্রার্থী শুধুমাত্র কর সনদপত্র জমা দিয়েছেন। কত টাকা কর প্রদান করেছেন এ ধরনের কোন তথ্য প্রদান করা হয়নি। ফলে বিশ্লেষণে উল্লেখিত কর প্রদানকারীর সংখ্যা, প্রকৃত কর প্রদানকারীর সংখ্যার চেয়ে কম বলে আমরা মনে করি।

সুজন-এর দৃষ্টিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান- তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল খুলনা সিটিতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শানি-পূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবো আমরা। এমনই একটি প্রত্যাশা থেকেই সারা দেশের সচেতন নাগরিকদের মত আমাদেরও দৃষ্টি ছিল খুলনার দিকে। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরই আমরা নজর রাখছিলাম। তবে আমাদের একটি সীমাবদ্ধতা এই যে, নির্বাচনের দিনে অন্যান্য পর্যবেক্ষক সংস’ার মত ভোটকেন্দ্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ আমরা করি না। তাই তথ্য প্রপ্তির ক্ষেত্রে নিজস্ব সূত্রের পাশাপাশি আমাদেরকে গণমাধ্যম ও অন্যান্য পর্যবেক্ষক সংস’ার ওপর নির্ভর করতে হয়।

একটি নির্বাচন কেমন হলো, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আন-র্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু মানদণ্ডের দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। মানদণ্ড গুলো হচ্ছে: (ক) ভোটার হওয়ার উপযুক্ত সকল ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন-র্ভুক্ত হতে পেরেছেন; (খ) যেসব ব্যক্তি প্রার্থী হতে আগ্রহী, তাঁরা প্রার্থী হতে পেরেছেন; (গ) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূূর্ণ নির্বাচনের ফলে ভোটারদের সামনে বিকল্প প্রার্থী ছিল; (ঘ) ভোট প্রদানে আগ্রহীরা নির্বিঘ্নে ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন; এবং (ঙ) ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম তিনটি মানদণ্ড অনুসরণ হলেও চতুর্থ ও পঞ্চম মানদণ্ড অনুসরণের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। পাশাপাশি পুরো ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা। গত ১৫ মে ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দৃশ্যত ব্যাপক এলাকা জুড়ে বড় কোনো ধরনের অঘটন ও সহিংসতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, অনেক ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট না থাকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, সিল-স্বাক্ষর বিহীন ব্যালটে প্রদত্ত ভোটকে বৈধ ভোট হিসেবে গণ্য করা, কেন্দ্রের সামনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মী কর্তৃক জটলা সৃষ্টি করে কোনো কোনো ভোটারের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, অনেক ভোটার কর্তৃক ভোট দিতে না পারা, নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধী দলের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রানী করা, রিটার্নিং অফিসারের ওপর যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে সহায়তাকারী হিসেবে নিয়োগ করা ইত্যাদি ঘটনাবলী এ নির্বাচনকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রে শিশু কর্তৃক ভোট প্রদানের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৩টি সিটি নির্বাচনের সাথে অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সাথে তুলনা করলেও বলা যায় যে, কয়েকটি ভালো নির্বাচনের পর একটি একটি অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান- স’াপিত হলো খুলনায়।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সমপর্কে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রস’তি ভালো থাকলেও এক পর্যায়ে এসে রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে রিটার্নিং অফিসারকে সহায়তার জন্য যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজনকে খুলনা পাঠানো হয়। বিষয়টি একদিকে যেমন নজিরবিহীন, পাশাপাশি তা কতটুকু যৌক্তিক ও আইন সম্মত তা নিয়ে বিস-র প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম দিক থেকেই এক ধরনের অভিযোগ ছিল যে, রির্টার্নিং অফিসার পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও এবং সুজন-এর পক্ষ থেকে হলফনামার সঠিকতা যাচাইয়ের আহ্বান জানানো হলেও, সে ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা দিয়েছিলেন কোনো কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হলে বা গোলযোগ সৃষ্টির কোনো চেষ্ট করা হলে ভোট গ্রহণ স’গিত করা হবে। বিশৃঙ্খলার কারণে ৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স’গিত করা হয়েছে। তবে আরও কিছু কেন্দ্র ছিল যেখানে স’গিত করার মত ঘটনা ঘটলেও ভোট গ্রহণ স’গিত করা হয়নি। অনেক ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ও বিধি-বিধান অনুসরণ করেছেন কি না তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে।

নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ’মিকা সমপর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় দশহাজার সদস্য কাজ করেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২ জন এবং প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েন ছিল। ৩০০ আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, ১৯ প্লাটুন বিজিবি, পুলিশের ৭০টি মোবাইল টিম, ৮টি মোটর সাইকেল টিম, ১১টি স্ট্য্রাইকিং টিম, গুরুত্বপূর্ণ স’ানসমূহে ১৫০০ পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ জন করে মোট ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট দায়িত্ব পালন করেছে। কিন’ ভোট গ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে এতো ব্যাপক প্রস’তি সত্ত্বেও অনেক কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। অনেক কেন্দ্রে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সামনেই জাল ভোট প্রদান, ব্যালট পেপারে সিল মারা ইত্যাদি ঘটনা ঘটলেও, তাদের বিরুদ্ধে নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

শুধু নির্বাচনের দিনই নয়, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাড়ি বাড়ি গিয়েও ব্যাপক তল্লাশীর অভিযোগও উঠেছে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিএনপির অভিযোগ ছিল গ্রেফতার ও হয়রানীসহ পুলিশী তৎপরতার কারণে ব্যাপকভাবে তাদের কর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়; ফলে দলটি সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পোরেছি। নির্বাচনের পূর্বে একটি সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সুজন-এর পক্ষ থেকে ‘সুষ্ঠু ও শানি-পূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার’ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন’ আমরা লক্ষ করেছি যে, শুধু একটি দলের কর্মীদেরই গ্রেফতার ও হয়রানী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, একসময় হাই কোর্ট থেকে খুলনায় গণগ্রেফতার না করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের পূর্বে প্রিসাইডিং অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদেরও অভিযোগ উঠেছে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা সমপর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনের বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাসহ নির্বাচন সংক্রান- যাবতীয় খবরাখবর আমরা গণমাধ্যম থেকেই পয়েছি। নির্বাচনের দিনে দুপুর পর্যন- বেশিভাগ গণমাধ্যমেই নির্বাচনী অনিয়মের খবর পরিবেশিত হচ্ছিল বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বা বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে। এক্ষেত্রে বিএনপি’র পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া বা পোলিং এজেন্ট না থাকার খবরটিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিল। দুপুরের পর থেকে কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, জাল ভোট প্রদান ইত্যাদি খবর পরিবেশিত হয়েছে। নির্বাচনের পরদিন বা তারও পরে অনিয়ম সংক্রান- খবরগুলো ফলাও করে প্রকাশিত হয়।

নির্বাচনের পরদিন অর্থাৎ গত ১৬ মে ২০১৮ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকার পত্রিকার শিরোনাম ছিল “খুলনা সিটি নির্বাচনে পরিবেশ দৃশ্যত শান-, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। এই প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়নি। বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শান-, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন কেন্দ্রে জোর করে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটেছে। কোথাও কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে দর্শকের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।” প্রতিবেদনে ৮০ কেন্দ্র পরিদর্শন করে ৬০ টিতে ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রের অনিয়মের কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবাদ সম্মেলনে ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপসি’ত ছিলেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের সাধারণ সমপাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ড. তোফায়েল আহমেদ।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মাধ্যমে ঘটবে গণতান্ত্রিক বিকাশ। কিন’ দিন দিন আমরা এই গণতান্ত্রিক বিকাশের চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সকল প্রার্থীরা হলফনামার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে; নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস’া নেওয়া। নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম হয়েছে তার জন্য কারও অভিযোগ দায়ের করার অপেক্ষা না করে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস’া নেওয়াটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন’ তা আমরা তাদেরকে করতে দেখিনি, যা সত্যিই হতাশাজনক।’

সুজনের সাধারণ সমপাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ না করলেও পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শানি-পূর্ণ, তথা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেনি এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরদ্ধে ব্যবস’া গ্রহণ করা উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।’

সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন,‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে আমরা নির্বাচন কমিশনকে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ করতে পারি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনটা ছিল তাদের জন্য একটা পরীক্ষা, যাতে তারা তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে তাদের যে সাহস দেখানো দরকার ছিল তা তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন,‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কে একটি নতুন মডেলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা যায়। নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা সহিংসতা হয়তো ততটা দেখা যায়নি কিন’ ভেতরে ভেতরে নানা ধরনের অনিয়ম ঠিকই হয়েছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় এবং ভোটারদের এক ধরণের ত্রাসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারাও তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেনি কারণ তাদের সরকারের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করে সংস’া চালাতে হয়। তবে মিডিয়া এক্ষেত্রে অগ্রণী ভ’মিকা রেখেছে। মিডিয়াগুলোকে অনেক বিশ্লেষনাত্বক প্রতিবেদন করতে দেখা গেছে, যা ইতিবাচক।’

মূল প্রবন্ধটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Related Post

প্রস্তাবিত ‘উপজেলা আইন’ বিষয়ে সুজনে’র সংবাদ সম্মেলনপ্রস্তাবিত ‘উপজেলা আইন’ বিষয়ে সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন

নবনির্বাচিত সরকার গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রণীত ‘স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮’ অনুমোদন না করে একটি নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার ১৯৯৮ সালের ‘উপজেলা পরিষদ

“স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে” ‘সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত“স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে” ‘সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগতমানে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৫ সালে একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। রায়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের শিক্ষা, সম্পদ, দায়-দেনার বিবরণ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড

‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

গত ৪ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ১০.৩০টায়, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৬: নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে