সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রম

গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রম

সুজন একটি নাগরিক সংগঠন। নাগরিক সোচ্চার ও সংগঠিত করে অ্যাডভোকেসি করাই এর মূল লক্ষ্য। সুজন প্রথাগত অর্থে গবেষণামূলক সংগঠন নয়। তবুও সময়ের প্রয়োজনে সুজন নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ইতিমধ্যে পরিচালিত কিছু গবেষণা কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরা হলো:

১. ভোটক্রয়-বিক্রয় প্রতিরোধে গবেষণা: পৃথিবীর যে সকল দেশে ভোট ক্রয়ের মত নেতিবাচক অনুষঙ্গটি বিদ্যমান বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ভোট ক্রয়ের এই প্রবণতাটি ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। বাংলাদেশে ভোট ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্মেন্টের পাবলিক পলিসির Professor Rohini Pande এবং উইলিয়ামস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের Professor Jessica Leight । অধ্যাপকদ্বয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS)-এর নেতৃত্বে গবেষণা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই উদ্যোগের সঙ্গে সহযোগী হিসাবে যুক্ত ছিল Innovations for Poverty Action (IPA) ও নাগরিক সংগঠন ‘সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক’।

এই কার্যক্রমের আওতায় ২০১৫ সালের প্রথমদিকে একটি জরিপ সম্পন্ন করেছিল আইপিএ। উক্ত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ নিয়ে একই বছরের জুন মাসে মাঠ পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভোটারদের সচেতন করার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সুজন। ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার পর আইপিএ আরেকটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। উক্ত জরিপে পরিলক্ষিত হয় যে, এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভোটারদের চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারা ভোট বিক্রি করতে চান না।

এই প্রকল্পের আওতাধীন মূল কার্যক্রমসমূহ ছিল মাদারীপুর জেলার ৪টি ইউনিয়নের (নিলখী, দত্তপাড়া, আমগ্রাম ও রাজৈর) ১৩টি গ্রামে ও টাঙ্গাইল জেলার ২টি ইউনিয়নের (নাগদা সিমলা ও উয়ার্সি) ৯টি গ্রামে উদ্বুদ্ধকরণ সমাবেশ এবং রাজৈর ব্যতীত অন্য পাঁচটি ইউনিয়ন সদরে নাগরিক সংলাপ। কার্যক্রমের সহায়ক উপকরণ হিসেবে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটি ফ্লায়ারও বিতরণ করা হয়।

২. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নে সহযোগিতা: সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম পূর্ব শর্ত হলো নির্ভুল ভোটার তালিকা। বিচারপতি এমএ আজিজ-এর নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তাতে এক কোটিরও অধিক ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত ছিলো বলে অভিযোগ ওঠে। সুজন ২০০০ সালে ভোটার তালিকার ডাটাবেজ সুজন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, যাতে ভোটারগণ সহজেই নতুন ভোটার তালিকার ভুল-ত্রুটি ও ভুয়া ভোটার সহজেই শনাক্ত করতে পারে। এছাড়াও ‘ব্রতী’ নামক একটি সামাজিক সংগঠনের সাথে যৌথভাবে দুটি উপজেলায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেসুজন। জরিপে প্রচুর ভুয়া ভোটারের চিত্র ওঠে আসে। পরবর্তীতে এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হলে সুজন-এর ভোটার ডাটাবেজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার একটি ড্যামি তৈরি করে দেখানো হয় যে, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা সহজেই প্রণয়ন করা সম্ভব। আমরা আনন্দিত যে, ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সফলভাবে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্রতী’র সঙ্গে জরিপ কার্যক্রমে সুজন ছাড়াও ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ ও ‘পিপিআরসি’ সম্পৃক্ত ছিল।

. একাদশ জাতীয় নির্বাচন মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞ মতামত জরিপ পরিচালনা: ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনটি একতরফা হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। উক্ত নির্বাচনের পর কিছু প্রশ্নের ভিত্তিতে প্রায় এক হাজার সচেতন নাগরিকের মধ্যে নির্বাচন মূল্যায়ন সংক্রান্ত একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।