সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী (দ্বিতীয় পর্যায়) চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

press conference 25.02.24.bউপজেলা নির্বাচনে দলভিত্তিক প্রার্থী মনোনয়ন বা সমর্থন প্রদান, চাপ সৃষ্টি করে কোন প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নীরব। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক নেতৃবৃন্দ। আজ দুপুর (২৫ ফেব্র“য়ারি ২০১৪) ১২.০০টায় রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাশা প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সানজিদা হক বিপাশা বলেন, ‘আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা আগামী ২৭ ফেব্র“য়ারি ও ১ মার্চ ২০১৪ অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলভূক্ত ১১৭টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ করছি। গত ১২ ফেব্র“য়ারি ২০১৪ তারিখে ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সর্বমোট ১,৮৫২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৭৬৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৮২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৪ জন। একই প্রতিবেদনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ১১৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৪০ জন অর্থাৎ তিনটি পদে সর্বমোট ১ হাজার ৩৭৭ জনের কথা বলা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গতকাল (২৪ ফেব্র“য়ারি, ২০১৪) পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে আমরা পেয়েছি ৫২৭ জনের। এছাড়াও একজন প্রার্থীর হলফনামার জায়গায় অন্য প্রার্থীর হলফনামা থাকা, হলফনামা অস্পষ্ট থাকা ইত্যাদি কারণে ৯ জন প্রার্থীর তথ্যের বিশ্লেষণ আমাদের পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব হলো না। ফলে ৫২১ জন প্রার্থীর তথ্যের বিশ্লেষণ আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করছি।’
শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই (২৪৮ জন বা ৪৭.৬%) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। চূড়ান্ত প্রার্থীর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের পেশা (৫৫.৪৭% বা ২৮৯ জন) ব্যবসা। কৃষির সঙ্গে জড়িত ২০.৩৫% (১০৬ জন)। ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৪ জনের (২৩.৮০%) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ১৭৭ জনের (৩৩.৯৭%) বিরুদ্ধে, অতীত ও বর্তমানে উভয় সময়ে মামলা ছিল বা রয়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭ জন (১০.৯৪%)। ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে বাৎসরিক ২ লক্ষ টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করেন ১৫৫ জন (২৯.৭৫%) প্রার্থী। বাৎসরিক ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেন ৬ জন (১.১৫%) প্রার্থী। ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩.৬২% (৭১ জন) এর সম্পদ ৫ লক্ষ টাকার কম। ৫২১ জনের মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ৭৪ জন (১৪.১৯%)। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকার বেশি সম্পদের অধিকারী ১৪ জন (২.৬৮%) প্রার্থী। চূড়ান্ত প্রার্থীর মধ্যে ৭০ জন (১৩.৪৩%) ঋণ গ্রহীতা। ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে আয়কর প্রদানকারীর হার ৩৮.৯৬% (২০৩ জন)।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন-এর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে নাগরিকদের বাক্ স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকারের অংশ হিসেবেই প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বিষয়টি আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজেরাই যদি নির্বাচনী বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতো, তবে তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচনের শুরুতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা হওয়ার কথা ছিল না।’ তিনি এ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধির উল্লেখ করে  বলেন, ‘প্রার্থীদেরকে মনোনয়নপত্রের সাথে তিন কপি করে হলফনামা, নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী, আয়কর রিটার্ন এবং কর পরিশোধের প্রমাণপত্রের কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে। উক্ত তিন কপির মধ্যে এক কপি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে টাঙ্গিয়ে দেবেন এবং এক কপি সংরক্ষিত রাখতে হবে, যাতে এনজিও বা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে ফটোকপি করে নেয়ার জন্য তা প্রদান করা যায়। কিন্তু আমরা বিভিন্ন উপজেলাতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানারকম বাধার সম্মুখীন হয়েছি, যা কাম্য ছিলো না।’
সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘নির্বাচনী আইন-কানুন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার কথা। কিন্তু দু:খজনক হলো, একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য মনোনীত বা নির্ধারিত প্রার্থী ছাড়া অন্যান্যদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহরের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার শামিল, যা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। রাজনৈতিক দলসমূহের এই আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
জনাব দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘সুজন মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এতে করে সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং দলীয় মনোনয়ন না থাকায় প্রার্থী সংখ্যাও বেশি থাকে ফলে সাধারণ জনগণ যোগ্য প্রার্থী পছন্দের সুযোগ পায়।’

প্রতিবেদক: নেসার আমিন, সুজন সচিবালয়।

Related Post

‘নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামার বিধান বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামার বিধান বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে’ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক হলফনামার বিধান বাতিল চাওয়ার প্রস্তাব হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। কারণ এ দাবি ভোটারের বাক্ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অন্তরায় এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠার

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন রাজনৈতিক দলভিত্তিক হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিরাজমান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবকে গ্রামাঞ্চল তথা ঘরে ঘরে বিস্তৃত করবে’ _ এমনি বক্তব্য তুলে ধরা

উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশউপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীগণের তথ্য প্রকাশ

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গত ১৯ জানুয়ারি ২০১৪ প্রথম পর্যায়ে ১০২টি উপজেলার জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন-২০১৪ এর কার্যক্রম। এ পর্যন- চার দফায়