বদিউল আলম মজুমদার
আল আমিন-আনাম : সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশ সত্যিই আজ বাজিকরদের হাতে। বাজিকর হলো-চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, খুনি, দালালরা। বাজিকরদের আধিপত্য যতদিন থাকবে রানাদের উত্থান ও দাপট ততদিন চলতে থাকবে। এসব বাজিকরদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নয়তো দেশ অসিত্মসত্ম হারাবে। রানাদের জন্ম হবেই।
আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘পোশাক শিল্পের সমস্যা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
একই অনুষ্টানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বাংলাদেশের প্রশাসনের টপ টু বটম কোথাও কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেছেন, সাভার ট্রাজেডিতে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সবার আগে স্থানীয় ইউএনওসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা দরকার ছিল কিন্তু তা হয়নি। আর এজন্যই আগামীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকতে হবে।
হাফিজউদ্দিন খান আরো বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার যদি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন তাহলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। সবাই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যারা সুশীল সমাজ সারাজীবন তারা গার্মেন্টস শিল্পকে এত সমস্যার মধ্যেও বাহবা দিয়ে এসেছি। আমাদেরও দোষ রয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রানার উত্থান এক দলের হাতে নয়। বিএনপিও তার উত্থানের সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের প্রতিটি রানার উত্থানের পেছনে প্রধান দুই দলের হাত থেকে। সংসদের বর্তমান এমপিদের মধ্যে ১২৫ জন রয়েছে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের দিয়ে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। এটা চলতে থাকলে রানার উত্থান হতেই থাকবে।
তিনি বলেন, জবাবদিহিতা নেই বলে ভেঙে পড়া ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল তাকে সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করা। কিন্তু হয়নি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলস্নাহ খান বলেন, রানা পস্নাজা ট্রাজেডির শত শত হতাহতের ঘটনার চেয়ে আমার বেশি খারাপ লেগেছে গার্মেন্টস মালিকদের স্পর্ধা দেখে। বাংলাদেশ কেন বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে রেশমা ও কায়কোবাদদের কারণে। শোষকের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই।
‘পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে’ উলেস্নখ করে তিনি বলেন, বিজিএমইএ বছরে মাত্র শ্রমিক প্রতি দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা খরচ করলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সারাজীবনের জন্য স্বাস্থ্য বীমা হয়ে যায়। এ পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশেও আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের সুমান বাড়বে। নয়তো এ শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কারণ এ শিল্পকে কেন্দ্র করে বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে।
গত ২৪ এপ্রিল সকালে যুবলীগ নেতা সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা পস্নাজা ধসে পড়ে। এ ঘটনাকে বিশ্বে পোশাক কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। বহু আগে ১৯১১ সালে নিউ ইয়র্কের ট্রায়াঙ্গাল শার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনাতে ১৪৬ কর্মী নিহত হয়েছিলেন। আর সাম্প্রতিক সময়ে পাকিসত্মানে একটি কারখানায় অগ্নিকান্ডে- ২৬০ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন এবং গত বছরই বাংলাদেশে তাজরীন ফ্যাশনস নামে আরেকটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকান্ডে- ১১২ জন নিহত হয়েছিলেন।
সূত্র: আমাদের সময়, ১৯ মে ২০১৩
দেশ সত্যিই বাজিকরদের হাতে
Categories: