সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন’: সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ

‘নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন’: সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ


নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে এবং এসডিজি, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও দলের ভিশনকে বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর, পাঁচ বছর ও দীর্ঘমেয়াদে অর্জন করা যাবে এমন সংখ্যাগত ও গুণগত টার্গেট নির্ধারণ করে একটি কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য সম্ভাব্য নির্বাচিত দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নেতৃবৃন্দ। তাঁরা ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, বৃহ¯পতিবার; সকাল ১১:০০টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ‘সুজন’ সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে ভোট চায়। কিন্তু দেখা যায়, পরবর্তীতে দলগুলো ইশতেহারের কথা অনেকটাই ভুলে যায়। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন ইশতেহার অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি আইনানুযায়ী সৎ, যোগ্য ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়, তাহলে সেই কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে।’

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার হলো ভোটারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এক ধরনের অঙ্গীকার। তবে আমাদের আমাদের সংবিধানই হলো দলগুলোর মূল ইশতেহার। এর বাইরে ইশতেহারে কিছু থাকলে তা হবে দলীয় কর্মসূচি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো যে ইশহেতার পেশ করবে তা যেন নির্বাচনের পর হারিয়ে না যায় এবং দলগুলো যে ইশতেহারে করা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করে। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নৈতিক দায়িত্ব হলো দলগুলো যে ইশতেহার পেশ করে তা তারা বাস্তবায়ন করেছে তা পর্যালোচনা করা। ইশতেহার পেশ করার সময় রাজনৈতিক দলগুলো যেন আগের ইশতেহারের একটি কপি সংযুক্ত করে দেয়, যাতে দলগুলো অতীতে ইশতেহার অনুযায়ী কী কী অঙ্গীকার পালন করেছে তা বোঝা যায়।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে তা হলো নেতিবাচক রাজনীতি। বর্তমানে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং ‘কালচার অব ইমপিউনিটি’ বা অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আগে দুষ্টু লোকেরা পুলিশকে দেখলে ভয় পেত, এখন সাধারণ মানুষও পুলিশকে ভয় পায়। অর্থাৎ জনগণের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমি আশা করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে এবং ক্ষমতায় এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিগত বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচনী বিতর্কের সংস্কৃতি বাংলাদেশে অনেকটাই অনুপস্থিত। যদিও ১৯৯০ সালের পর প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিটি দলই জনগণের সামনে ইশতেহার ঘোষণা করে, যা বর্তমানে নির্বাচনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাধ্যমে দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে কী করবে তার একটি আভাস পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাগরিক সমাজের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার দেখতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে ড. বদিউল আলম মজুমদার যেসব নাগরিক প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেন তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:

১. গণতন্ত্র ও সুশাসন

১.১ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার প্রদান করা, যাতে সত্যিকার অর্থেই জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১.২ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সংস্কারের রূপরেখা প্রদান, যাতে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারে (মনোনয়ন প্রক্রিয়া, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা, হলফনামার সংস্কার, হলফনামা যাচাই-বাছাই, নির্বাচনী ব্যয়ে স্বচ্ছতা, ‘না-ভোটে’র বিধান ইত্যাদি)।

১.৩ রাজনৈতিক দলের সংস্কার (গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ দল, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিলুপ্তি করা ইত্যাদি)।

১.৪ নজরদারিত্বের কাঠামোকে Ñ আইনসভা, বিচারবিভাগ ও শাসনবিভাগের Ñ কার্যকর ও জোরদার করার অঙ্গীকার, যাতে এগুলো ‘কো-ইকুয়েল ব্রাঞ্চ’ হতে পারে এবং বর্তমান শাসনবিভাগের একচ্ছত্র প্রাধান্যের অবসানের ঘটে (ইম্পেরিয়াল প্রাইম মিনিস্টার ব্যবস্থার অবসান)।

১.৫ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংস্কার (নির্বাচনকালীন সরকার, ‘উইনার-টেক-অল’ ব্যবস্থার অবসান, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, মেয়াদের সীমা নির্ধারণ, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, গণভোট, রি-কল ব্যবস্থা, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি)।

১.৬ সংসদ সদস্যদের কার্য-পরিধি সীমিতকরণ ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।

১.৭ সুশাসন প্রতিষ্ঠা (আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংস্কার, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন রোধে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা কাঠামোকে জোরদার করা, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে জোরদার করা, উন্মুক্ত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রয়োগ, শাসন প্রক্রিয়ায় নাগরিকের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি)।

১.৮ রাজনৈতিক সমঝোতা ও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।

 

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার

১.৯ প্রশাসনিক ও আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে একটি বলিষ্ঠ কর্মসূচি প্রণয়ন এবং এ লক্ষ্যে অন্তত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ন্যূনতম ৫০ শতাংশ (?) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে ব্যয় করা।

১.১০ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত, সত্যিকারের স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অযাচিত হস্তক্ষেপ তথা এমপিতন্ত্র ও দলতন্ত্রের অবসান ঘটানো।

১.১১ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আইনি সংস্কার ও একটি সমন্বিত আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা ও যথাসময়ে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে নির্বাচন নিশ্চিত করা।

১.১২ স্থানীয় সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্বকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির প্রচলন এবং প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা।

 

২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন

২.১ আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন

  • ব্যাংকিং-সহ আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নজরদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা;
  • বিগত সময়ে আর্থিক খাতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ;
  • অর্থপাচার রোধ ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করা।

২.২ শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান (সানরাইজ ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা)।

২.৩ কর্মসংস্থান তৈরি ও বেকারত্ব দূরীকরণ (জব-লেস গ্রোথ আর নয়)।

২.৪ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা।

২.৫ টেকসই যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন।

২.৬ বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২.৭ তথ্য-প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা

 

৩. সামাজিক উন্নয়ন

৩.১ শিক্ষা (বিনিয়োগ বাড়ানো, একমুখী শিক্ষা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি)।

৩.২ স্বাস্থ্য (বিনিয়োগ বাড়ানো, সরকারি উদ্যোগে ন্যূনতম স্বাস্থসেবা প্রদান, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, গ্রামীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান/কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রদত্ত সেবার মানোন্নয়ন, স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যবীমা ইত্যাদি)।

৩.৩ বৈষম্য নিরসন (অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান, রাষ্ট্রীয় সম্পদে সমাজে পিছিয়ে পড়াদের জন্য ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নতুন ‘সামাজিক চুক্তি’ তৈরি করা)।

৩.৪ সামাজিক সম্প্রীতি (সহিংস উগ্রবাদ প্রতিহত করার লক্ষ্যে একটি সুচিন্তিত কৌশল প্রণয়ন, নাগরিকত্ববোধ ও বহুত্ববোধ ইত্যাদি সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা)।

৩.৫ জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩.৬ পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধ ও সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।

৪.৬ নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা

  • জাতীয় সংসদের ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত এবং এ সকল আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;
  • সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার অবসান এবং সমতা ও সম-সুযোগ সৃষ্টি করা।

৪.৭ তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি ও তাদের ক্ষমতায়ন

  • বাংলাদেশ বর্তমানে কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুবিধা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) ভোগ করছে। আমাদের নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত মাত্র সাত শতাংশ, যা জাপানসহ অনেক উন্নত দেশে ১৮-২০ শতাংশ। কিন্তু ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ২০৩৬ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জনসংখ্যাজনিত এ সুযোগ কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তরুণদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সুযোগ সৃষ্টি করা, সরকারি চাকুরিতে বয়সসীমা পুনর্মূল্যায়ন ও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার ইত্যাদি।

 

৫. পরিবেশের উন্নয়ন/টেকসই উন্নয়ন

৫.১ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা

৬. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা;

৭. জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে জাতিকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

প্রসঙ্গত, সুষম অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত হলে ও জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দূরীভূত করা গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে এবং কেউই আর পিছিয়ে পড়ে থাকবে না।

৫.২ পরিকল্পিত নগরায়ন।

৫.৩ পানিসম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণি, বন ও খনিজসম্পদ রক্ষা।

 

৬. প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ

৬.১ আইন বিভাগ

৮. জাতীয় সংসদকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে সংসদ যথাযথভাবে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে;

৯. সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা;

১০. সংসদ সদস্যদের সততা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন;

১১. সংবিধান নির্দেশিত সংসদ ও সংসদ সদস্যদের জন্য একটি বিশেষ অধিকার আইন বা প্রিভিলেইজ অ্যাক্ট প্রণয়ন করা।

 

৬.২ বিচার বিভাগ

  • বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা;
  • বিশেষজ্ঞ/বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারকদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা তদন্ত করে এসব ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
  • বিচার বিভাগের সত্যিকার পৃথকীকরণের মাধ্যমে নি¤œ আদালতের নিরপেক্ষতা, সততা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা;
  • রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের অপসংস্কৃতি বন্ধের অঙ্গীকার করা;
  • বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।

৬.৩ নির্বাহী বিভাগ

  • সরকারি কর্মকমিশনে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগে নিয়োগে স্বচ্ছতা সৃষ্টি এবং দুর্নীতির অবসান করা;
  • নির্বাহী বিভাগে পদোন্নতিতে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া;

প্রশাসনে দলীয়করণের অবসান করা;

  • ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণের অবসান এবং এতে দায়বদ্ধতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সত্যিকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

৬.৪ নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা

  • নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা, যাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা যায়।

৬.৫ বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সংস্কার

  • আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করা;
  • এসব সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদান ও দলীয়করণের অবসান;
  • সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।

 

৭. মৌলিক অধিকার/মানবাধিকার

৭.১ মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ

  • সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণ। যেমন, সভা সমাবেশ, বাক স্বাধীনতা ও সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকারে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ না করা।

৭.২ গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা

  • গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাÐ পুরোপুরি বন্ধ করা;
  • সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখা;
  • বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ এবং গুম পুরোপুরি বন্ধ করা।

৭.৩ গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা

  • সরকারি ও বেসরকারি সকল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা;
  • নাগরিক সমাজের কাজের পরিধি যাতে সঙ্কুচিত না হয় সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া;
  • ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইনের সংস্কার করা।

 

৮. বিশেষ অগ্রাধিকার

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা;
  • জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করে জঙ্গিবাদ দমন করা। এলক্ষ্যে কারা জঙ্গিবাদী সংগঠন ও জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তা চিহ্নিত করা এবং জঙ্গিবাদ থেকে তরুণদের মুক্ত রাখতে তাদের বিকশিত হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং বিকল্প প্রস্তাবনা ‘অল্টারনেটিভ ন্যারেটিভ’ উপস্থাপন করা;
  • আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা।

 

৯. ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা

৯.১ একশ দিনের কর্মসূচি

  • কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে প্রথম একশ দিনে কী কাজ করবে তার কর্ম-পরিকল্পনা পেশ করা।

১০.২ এক বছর মেয়াদি কর্মসূচি

  • কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে প্রথম বছরে কী কাজ করবে তার কর্ম-পরিকল্পনা পেশ করা।

১০.৩ দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য

  • নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে একটি বিশদ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। অর্থাৎ ইশতেহারের আলোকে এবং এসডিজি, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও দলের ভিশনকে বিবেচনায় নিয়ে তিন বছর, পাঁচ বছর ও দীর্ঘমেয়াদে অর্জন করা যাবে এমন সংখ্যাগত ও গুণগত টার্গেট নির্ধারণ করে একটি কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করা।

 

বিজিত দলের পরিকল্পনা

  • নির্বাচনে জয়লাভ না করলে পরবর্তী পাঁচ বছরে বিজিত দলের কর্ম-পরিকল্পনা কী হবে তা তুলে ধরা।

Related Post

‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্তক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্তক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘ব্যাপক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী অনিয়মের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবচেয়ে মন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর নেতৃবৃন্দ। আজ ২৬ মে ২০১৬ সকাল

“স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে” ‘সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত“স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে” ‘সুজনে’র সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুণগতমানে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৫ সালে একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। রায়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের শিক্ষা, সম্পদ, দায়-দেনার বিবরণ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড

সুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুজন-এর উদ্যোগে ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘প্রথম ধাপের মত দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি’ বলে