সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,সংবাদপত্রে সুজন বদিউল আলমের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা: স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে

বদিউল আলমের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা: স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক
উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যখন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তখন এ দেশের কেন্দ্রীয় সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। তারা স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীভূত করে ক্রমাগত এর ওপর চেপে বসছে। তা ছাড়া গণতন্ত্রের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মিশে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সুশাসন এবং স্থানীয় সরকার: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক দুটি বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
দৈনিক সংবাদপত্র ও জার্নালে প্রকাশিত কলাম নিয়ে বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে। গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সুশাসন শীর্ষক বইয়ের লেখাগুলোকে ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এই বইয়ে লেখক দেখিয়েছেন গণতন্ত্র একদিনে প্রতিষ্ঠা পায় না। ধাপে ধাপে এগোতে হয়। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে তা নয়। এর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে। বইটিতে লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ও নির্বাচনী ব্যয় কমানোর কথাও বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক বইয়ে স্থানীয় সরকার কমিশন রাখা ও এই ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাধা ও তা দূর করার উপায় সম্পর্কে লেখক মতামত দিয়েছেন।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ‘সমাজে যাঁরা এলিট তাঁদের অনেকেই বড় বড় কথা বলতে পারেন, কিনতু গভীরে যেতে পারেন না। এমনকি কথাগুলো লিখে পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেন না। ফলে এই জ্ঞান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখে না।’

সিইসি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অন্যতম উপাদান। নির্বাচন আরও অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কমিশন নিজস্ব জনবলকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচিত সরকারের সময় চাপের মধ্যে থাকেন। এ জন্য তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না। কেননা, সরকারের কথা না শুনলে তাঁদের ওএসডি করে রাখা হয়।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি খান সারোয়ার মুরশিদ বলেন, রাজনীতি থেকে আদর্শবাদ ও স্বার্থপরহীনতা বিদায় নিয়েছে। এগুলো ফিরিয়ে আনা দরকার। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কমিয়ে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।
সুজনের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সংসদের শিক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, স্কুল-কলেজে সাংসদদের হস্তক্ষেপ থাকলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তিনি বলেন, সরকার বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে আরও জোরেশোরে স্থানীয় সরকারের ওপর চেপে বসছে। তারা স্থানীয় সরকার বিষয়ে সংবিধানের ধারাগুলো মানছে না। তিনি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোর পক্ষে মত দেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঔপনিবেশিক শাসন আমলে স্থানীয় সরকার অনেক শক্তিশালী ছিল। কিনতু গণতান্ত্রিক সরকার স্থানীয় সরকারের কাজ কমিয়ে সাংসদদের কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সিতে পরিণত হয়েছে। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে দূরে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি। তাই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোথায় যাওয়া যায় না।’
আইনজীবী শাহ্দীন মালিক বলেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না হলে উন্নয়ন অসম্ভব। সংসদের উচিত হবে না স্থানীয় সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে গণতন্ত্রও সুসংহত হবে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদের যেমন ঐতিহ্য আছে, তেমনি একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে না পারার ব্যর্থতাও আছে। ব্যর্থতার সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, আমরা অনেক পেয়েছি। কিনতু সম্ভাবনার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, অর্জনের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি।’
মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন বলেন, ‘বই দুটিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা আসা উচিত ছিল। দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে। কিনতু ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার ব্যাপারে তারা উদাসীন।’
লেখক বদিউল আলম বলেন, ‘একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দুঃখ ও মনের ব্যথা প্রকাশ করতে এই কলামগুলো বিভিন্ন পত্রিকায় লিখেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতির সংস্কার ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।’

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ১৩ মার্চ ২০০৯

Related Post

সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে কারা জিতলেনসিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে কারা জিতলেন

বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচনে নয়জন মেয়র, সাধারণ আসনে ১৯৯ জন (সিটি করপোরেশনে ১১৮ জন, পৌরসভায় ৮১ জন) এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৬৬

কার সংলাপ, কী নিয়ে সংলাপ?কার সংলাপ, কী নিয়ে সংলাপ?

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২১-০৫-২০১৩ আমাদের নাগরিকদের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান রাজনৈতিক বিবাদ মেটানোর দাবি উচ্চারিত হয়ে আসছে। এ দাবির উদ্দেশ্য হলো সবার অংশগ্রহণে যথাসময়ে